খুল্লনার মজ্ঞল চণ্ডী
মঙ্গলকোটের নতুন হাটের নিকট কোগ্রামে উজানী,মহাতীর্থ একান্ন পীঠের অন্যতম এক পীঠ।পুরাণ অনুযায়ী শ্রী বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীদেবীর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়েছিল,এর মধ্যে দেবীর ডান কব্জি পড়েছিল এই উজান নগরে।এখানের মন্দিরে রয়েছে দেবী মজ্ঞল চণ্ডী এবং ভৈরব কপিলেশ্বরের প্রস্তর মূর্তি।কালিকা পুরাণ অনুযায়ী দেবী চণ্ডী এই পবিত্র সতী পীঠস্থানে কালীরুপে ভক্তকে আশীর্বাদ দেন,মনষ্কামনা পূরণ করেন।এখানের কালী পূজার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো,পূজার সময় দেবীর কোন মূর্তি থাকে না,ঘটের মাধ্যমেই দেবী পূজিত হন,ভোগে দেওয়া হয় মাছ।
মঙ্গল কাব্যের ধারার চণ্ডী মঙ্গল কাব্যের কাহিনীসূত্র অনুযায়ী স্বর্গের অপ্সরা রত্নমালা অভিশাপে স্বর্গাভ্রষ্টা হয়ে মানবী খুল্লনা নাম ধারন করে পতিত হয়েছিল এই উজানী স্থানে,প্রাচীন অজয় নদের তীরে সাগরের উজানে এ স্থান,তাই উজান নগর।কবিকঙ্কনের চণ্ডী মজ্ঞল কাব্যে উজানী নগরের প্রসঙ্গে আছে-
"উজানী নগর অতি মনোহর
বিক্রম কেশরী রাজা।
করে শিব পূজা উজানীর রাজা
কৃপাময়ী দশভূজা।।"
রাজা বিক্রম কেশরীর উজানী রাজ্যের ধনবান বণিক ধনপতি সদাগর।স্ত্রী লহনা থাকতেও তিনি দ্বিতীয় বিবাহ করেন সুন্দরী খুল্লনা কে,দুই সতীনের কলহ ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার।একবার ধনপতির বাণিজ্য যাত্রার প্রারম্ভে স্ত্রী খুল্লনা স্বামীর মজ্ঞল কামনায় দেবী চণ্ডীর পূজার আয়োজন করেন,কিন্তু পরম শিব ভক্ত ধনপতি লাথি মেরে পূজার ঘট উল্টিয়ে ফেলে বাণিজ্যে বেড়িয়ে যায়, সে যাত্রায় বেড়িয়ে তিনি চরম বিপদে পড়েন,আর ফিরে আসা হয় না।ঘটনা ক্রমে ধনপতি সিংহল রাজার কারাগারে বন্দী হয়ে থাকে।স্বামীর বিরহে চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে খুল্লনা মজ্ঞল চণ্ডীর পূজা করে যেতে থাকেন।বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়,খুল্লনার পুত্র শ্রীমন্ত বড়ো হয়ে সিংহল থেকে পিতাকে মুক্ত করে আনেন।
শ্রীমন্ত যে স্থানে সিংহল যাত্রার আগে মাতা খুল্লনার আশীর্বাদ গ্রহন করে ছিলেন সে স্থানকে বলা হয় 'শ্রীমন্তের ডাঙা ',এ ছাড়াও আরো আনেক জায়গার নাম এখানে আজো সেই প্রাচীন ঐতিহ্য গাঁথাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেমন-' বিক্রমাদিত্যের ডাঙা ',খুল্লনার ' ছাগল চড়ানোমাঠ ',খুল্লনার রান্না ভাতের হাড়ি থেকে 'মার গড়া মাঠ ',মজ্ঞল কাব্যে উল্লেখিত ' ভ্রমরার দহ ' যেখানে ধনপতির বাণিজ্যতরী ভাসানো থাকতো ইত্যাদি।এইভাবে প্রাচীন অনুসঙ্গ,পোরাণিক মাহাত্মের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যে উজানীর মজ্ঞল চণ্ডীর পূজা বর্ধমান ও পার্শ্ববর্তী বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ভক্তদের কাছে খুবই শ্রদ্ধার ও জনপ্রিয়।
No comments:
Post a Comment