কৈতাড়া গ্রামের ২০০বছরের প্রাচীন পিতলের সামগ্রী তৈরীর শিল্প ধ্বংসের পথে
ফিরোজ আলি কাঞ্চন
বর্ধমান থেকে হাইওয়ে ধরে গলসি চৌমাথার দক্ষিণে খেতুড়ার উপর দিয়ে আদড়াহাটি রোড ধরে প্রায় আট নয় কিলোমটার দূরে প্রাচীন গ্রাম কৈতাড়া।বঙ্গের প্রাচীনতম পাম্রপট্ট লিপি ' মল্লসারুল লিপি ' তে এই গ্রামের নাম রয়েছে ' কবিন্থবাটক '।
গ্রামটি আগে বিখ্যাত ছিল পিতলের দ্রব্যসামগ্রী তৈরী করার জন্য,গ্রামের মাহাত পদবীর কর্মকারেরা জাত পেশার বদল ঘটিয়ে এসব সামগ্রী তৈরী করতেন এবং সারা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তা রপ্তানী হতো।কৈতাড়া গ্রামের এই পেশার প্রচলন প্রায় ২০০বছরের প্রাচীন।আজো গ্রামের সুশান্ত দাস,প্রশান্ত দাস,প্রফুল্ল দাস,মধুসূদন দাস,কেষ্ট দাস প্রমুখরা তাদের জাতপেশাকে টিকিয়ে রেখেছে।তৈরী হচ্ছে বড়ো হাঁড়ি,ঘটি,গ্লাস,পুজোর ঘট ইত্যাদি,তবে কৈরাড়া গ্রামের তৈরী তৈলভাণ্ড বা তেলের ভাঁড় আজো বিখ্যাত,এগুলি এতোই চকচকে যে পালিশের প্রয়োজন হয় না।এই গ্রামের তৈরী পিতলের সামগ্রী এখনো বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,বোলপুর,এলেমবাজার,দুবরাজপুর প্রভৃতি অঞ্চলের রপ্তানি হয়ে থাকে।
পিতলকেন্দ্রীক পেশার সঙ্গে যুক্ত গ্রামবাসী সুশান্ত ঘোষ জানালেন, ' আগে আমাদের গ্রামে প্রায় ১৬০ঘর এসব পিতলের জিনিশ তৈরী করতো,এখন আমরা মাত্র চারঘর কোন রকমে টিকে আছি।' আলোচনায় জানাগেল মহাজন দের কাছে ২০কেজি নতুন সামগ্রী দিয়ে এলে ২২কেজি পুরানো ভাঙা পিতলের দ্রব্য দেয়,আর তৈরী খরচ দেয় কেজি প্রতি ১৩০ টাকা।সেই ভাঙা সামগ্রীকে গলিয়ে ছাচে ঢেলে সময়,শ্রম ব্যায় করে জ্বালানি প্রভৃতি খরচা বাদ দিয়ে লাভ থাকছে কেজি প্রতি ৪০-৫০টাকা,ফলে নতুন প্রজম্ম।আর এ পেশায় আসতে চাচ্ছে না,সরকারী অনুদান থেকেও এঁরা বঞ্চিত; এ ভাবে ক্রমে হাড়িয়ে যেতে বসেছে কৈতাড়া গ্রামের এই প্রাচীন কুটিরশিল্পের ধারাটি।
No comments:
Post a Comment