Thursday, April 11, 2019


বধ'মানঃলোক বিশ্বাস,লোক দেবতা ও লোকসংস্কৃতি
     
                                    ফিরোজ আলী কাঞ্চন
                        লোক স ংস্কৃতির নানা রুপ,নানা আজ্ঞিক।রাঢ় বজ্ঞের তথা দক্ষিণ বজ্ঞের লোকস ংস্কৃতির প্রধান ও অপ্রধান প্রায় সমস্ত অজ্ঞ _উপাজ্ঞগুলিই বধ'মান অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে বিদ্যমান।তাই স্বাভাবিক ভাবেই শিব,ধম'ঠাকুর,মনসা শীতলা,চণ্ডী,ভাদু,তুসু,লেটো,পঞ্চরস,কবি গান,সত্যপীরের গান ইত্যাদি বহুবিধ লোক ঐতিহ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।সমগ্র বাংলার প্রাচীনতম তাম্রপট্ট লিপিটি পাওয়া গেছে১৯৩৯সালে বধ'মানের গলসীর মল্লসারুল গ্রামের এক পুকুর থেকে।বিজয় সেনের(৫০৭_৫৪৩খ্রীষ্টাব্দ) ঐ ভূমিদানের বিষয় সংক্রান্ত তাম্রপট্ট লিপিটি যখন উদ্ধার হয়  তখন প্রথম কয়েকটি অক্ষর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল_
                "...নাথঃ যঃ পুংসাং সুকৃতকম'ফলহেতুঃ
সত্যতপোময় মূতি'ল্লোকদ্বয় সাধনো ধম'ঃ...."
      গবেষক  ননীগোপাল মজুমদার এই লুপ্ত অংসের পাঠোদ্ধার করে বলেছেন  'জয়তিশ্রী লোকনাথঃ'।এই লিপি থেকে প্রমানিত হয় লোক বিশ্বাস  তথা লোকধম' সেই প্রাচীন কাল থেকেই ব ধ'মানে কত গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
                 সমগ্র রাঢ় অঞ্চলের মতো বধ'মানেও ধম'ঠাকুরের প্রভাব সবথেকে অধিক।এই ধম'ঠাকুরের স্বরুপ নিয়ে গবেষক দের মধ্যে অবস্য বিতক' আছে,ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন ধম'ঠাকুর এবং যমরাজ অভিন্ন,আবার ডঃ আশুতোষ ভট্টাচায' মনে করেন ধম'পূজা সূয' ব্যতীত অন্য কিছু না;বিতক' থাকলেও আমরা ধম' ঠাকুরের সজ্ঞে নানা বিষয়ে গভীর একাত্মতা দেখতে পাই শিব ঠাকুরের সজ্ঞে,তাইতো আমাদের বধ'মানের বিভিন্ন স্থানে শিব ঠাকুর ও ধম'ঠাকুর এক সজ্ঞেই পুজা পান,আর এদের দুজনেরই পুজাতে গাজন,ঝাপান,গায়ে বান ফোড়া,দণ্ডীখাটা, চরক প্রভৃতি রীতির প্রচলন দেখা যায়।গলসীর গগে'শ্বর,খেতুড়ার ক্ষেত্রপাল, আদড়াহাটির আদরেশ্বর,আম রাগরের দুধেশের,চাকতেতুলের রামেশের,জামুরিয়ার চিচুরাতে কালারায়,রায়নার তিয়াণ্ডুলে মেঘরায়,আউসগ্রামের বেলুটিতে বন রায়,ভাতারের রামচন্দ্রপুরে ময়না রায় প্রভৃতি বধ'মান জেলার উল্লেখযোগ্য ধম'ঠাকুর,উল্লেখ্য এই ধম'ঠাকুরের আন্তিক নাম কোথায় 'রায়',কোথাও 'পাল' কোথাও 'ঈশ্বর'।ধম'ঠাকুরের আদি উপাস ক ডোম,বাউরি,বাগদি,জেলে,মেটে,হাড়ি প্রভৃতি সম্প্রদায়।রাড় গবেষক  ডঃ মিহির চৌধুরী কামিল্যা মনে করেন 'ডোম' শব্দটির মূলে রয়েছে 'ধম' শব্দটি_ধম'>ধম্ম>ডম্ম>ডোম্ম>ডোম।ধম' ঠাকুরের মূতি' বলে তেমন বিশেষ  কিছু নেই,যেমন গলসীর খেতুড়া গ্রামে ক্ষেত্রপালের থানে রয়েছে একটি গোলাকার শিলাখণ্ড,কিছু মাটির ঘোড়া ও হাতি;এই ক্ষেত্রপালের নাম থেকেই গ্রামের নাম হয়েছে 'খেতুড়া'।গাজনে সব চেয়ে বেশি ধূম হয় বেলান,মল্ল সারুল,কৈতাড়া,জামালপুর,ঝাপানডাজ্ঞা,কসবা,বড়শুল,দাদপুর প্রভৃতি স্থানে।
             বিষহরি মনসার প্রভাবও বধ'মান জেলায় কম নেই,কোথাও সম্ভবত প্রাচীন স্থায়ী পাথরের মূতি' নেই,তবে গলসীর কুরকুবা গ্রামে এক মন্দিরে পাষান মূতি' প্রতিষ্ঠিত,শ্রাবন সংক্রান্তির সময় এই দেবীর চার পাঁচদিন  ধরে মেলা বসে।এছাড়াও জয়কৃষ্ণ পুর,খানা,গরম্বা,উড়ো,সাঁ কো,পারাজ,কালনার মাতিলপাড়া,জৌগ্রাম_ঝাপানডাজ্ঞা,মেমারীর ছোটখণ্ড,সাতগেছ,কেতুগ্রামের কল্যানপুর,হাটগোবিন্দপুর,গলসীর সায়েরেপাড়,কসবা,কালনার নারেজ্ঞা প্রভৃতি স্থানে মনসা পূজিত হন,কোথাও  দশহরায় বা শ্রাবন সংক্রান্তিতে প্রসিদ্ধ বাষি'কী বা ঝাঁপান বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
           বধ'মান জেলার জনপ্রিয় লোকিক দেবী চণ্ডী,এই জেলার ই দামিন্যা গ্রামের ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দ চক্রবতী' লিখেছেলেন 'অম্বিকা মজ্ঞল' বা 'চণ্ডীমজ্ঞল' বা 'অভয়া মজ্ঞল',যা বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্থান পেয়ে আছে।এই দামিন্যা গ্রামে আছে দেবী চণ্ডীর একটি চতুভু'জা ধাতু মূতি',প্রচলিত এ মূতি'টি মুকুন্দরাম পুজো করতেন।এছাড়াও মূল বধ'মানে ওলাই চণ্ডী,খানো তা ঈশান চণ্ডী,রায়নার আলমপুরে আহার চ ণ্ডী,দাঁই হাটের একাই চ ণ্ডী,কাটোয়ার গৌরচণ্ডী,মন্তেশ্বরের বিক্রম চণ্ডী সহ প্রভৃতি স্থান উল্লেখ যোগ্য।
        বধ'মান জেলার লোক বিশ্বাসে ধম'ঠাকুর, ম ন সা, চণ্ডীর ম তো শীতলা দেবীর প্রভাব ও বিস্তর।ইনি মড়ক মহামারী,বসন্তের দেবী।পুজোর সময় বলি দেওয়া হয়,হোম হয়।  অনেক স্থানে দেবীকে ঘি মাখিয়ে স্নান ক রানো হ য়,পুজোর স ম য় দেওয়া হ য় সেদ্ধ চাল,আলো চাল মিষ্টি আলু প্রভৃতি।গ রম্বা,খানো,অম রপুর , ডালিম গ রিয়া,গ লিগ্রাম,প্রভৃতি গ্রামে শীতলা দেবির পুজো প্রচলিত আছে।
                আবার বিশালাক্ষী দেবীর মন্দির আছে   গলসীর চান্না গ্রামে, এই দেবীর অনুষ্ঠান হয় প্রতি বছর আষাঢ়  মাসে শুক্লা নবমী তিথিতে,উল্লেখ্য চান্নার এই বিশালাক্ষী মন্দীরে শাক্ত পদাবলীর বিখ্যাত সাধক কবি ক মলাকান্ত সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।এছাও কুরকুবা,সারুল,দাসপুর,জামালপুরের পাচরা প্রভৃতি স্থানে বিশালাক্ষীর অবস্থান উল্লেখ্যোগ্য।
        লোকবিশ্বাস এই গ্রাম্যদেব দেবীরাই গ্রামের অধীশ্বর,গ্রামের শান্তি,বিপদ আপদ এই দেবতার সন্তুষ্টির উপর নিভ'রকরে,তাই এই গ্রাম্য দেবতাদের পুজোই গ্রামের প্রধান অনুষ্ঠান।সং ক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যেই আমরা বুঝতে পারি লোক বিশ্বাস তথা লোক ধম' কতো গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে বধ'মান জেলার গ্রামে গ্রামে।


     
      আমার বধ'মানবঃলোক দেবতা,লোক বিশ্বাস ও লোক স ংস্কৃতি  লেখায় মল্ল সারুল তাম্রপট্ট লিপি র উল্লেখিত বিজয় সেনের সাল ৫০৭_৫৪৩খ্রীঃ)প্রসজ্ঞে আমি যে তথ্য পেলাম তা জানালাম_
ডঃসুকুমার সেন,'বাজ্ঞালা সাহিত্যের ইতিহাস' গ্রন্থে  পপ্রথম খন্ডে ১২ পৃষ্ঠায়পেলাম_
     "বধ'মান জেলার গলসী থানার অন্তগ'ত মল্লসারুল গ্রামে প্রাপ্ত,মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্রের উপরিক(?)মহারাজ বিজয় সেন প্রদত্ত......"
বধ'মান ইতিহাস সন্ধান ও বধ'মান জেলা পরিষদ যৌথ উদ্যোগে দেজ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত "বধ'মান ভ্রমন একটি ক্ষেত্র সমীক্ষা গ্রন্থে পেলাম_
            "তাম্রশাসন খানি প্রধানত ষষ্ঠ শতকে মহারাজাধিরাজ গোপচন্দ্রের ৩৩ তম রাজ্যাংকে সম্পাদিত।মহারাজ বিজ য় সেনের রাজত্ব কাল ৫০৭-৫৪৩ খ্রিষ্টাব্দ অব ধি"
ডঃ সব'জিত যশ "বধ'মানঃঅতীত থেকে বত'মান' প্রবন্ধে(বধ'মান স হায়িকা) এ প্রসজ্ঞে লিখেছেন_
               "খ্রিস্টিয় পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগ পয'ন্ত গুপ্ত্রাজাদের আমলে অখণ্ড বজ্ঞভূমিতে যে চৌদ্দটি তাম্রলিপি পাওয়া গেছে তার মধ্যে এক টি ব ধ'মান জেলায়"
    'গলসী কথা'  বইতে পেলাম_
                    "এখানে উল্লেখিত মহারাজ বিজয় সেনের রাজত্বকাল ছিল ৫০৭-৫৪৩ খ্রীষ্টাব্দ পয'ন্ত।গুপ্ত শাসনের শেষ পবে' বৈন্যগুপ্তের পরে(৫০৭খ্রী)গোপচন্দ্র বাংলা দেশে স্বাধীন হন।এই সময় উল্লেখ্যোগ্য তিন রাজা গোপচন্দ্র,ধমা'দিত্য এবং নরেন্দ্রাদিত্য।"
           
                ।।।।।। ফিরোজ আলী 


No comments:

Post a Comment