Thursday, February 20, 2020


দেখে নিন বিশ্বে কোন ভাষায় কত সংখ্যক মানুষ কথা বলে

বিশ্বে মোট ভাষার সংখ্যা ৭হাজার ১১১টি
ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী কোন ভাষায় কতো সংখ্যক মানুষ কথা বলে তা তুলে ধরা হলো---
১। ইংরাজী- ১১৩ কোটি ২৩ লক্ষ৷ ৬৬হাজার ৬৮০ জন।

২। মান্দারিন চাইনিজ -১১১কোটি৬৫লক্ষ ৯৬হাজার জন

৩।হিন্দি-৬১কোটি ৫৪লক্ষ৭৫হাজার ৫৪০জন।

৪।স্প্যানিশ - ৫৩ কোটি ৪৩লক্ষ ৩৫হাজার৭৩০জন

৫।ফ্রেঞ্চ- ২৭কোটি ৯৮ লক্ষ ২১ হাজার ৯৩০ জন

৬।আরবি- ২৭ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ৭০০ জন।

৭।বাংলা-২৬কোটি ৫০ লক্ষ ৪২ হাজার৪৮০ জন

৮।তেলেগু- ৯কোটি ৩৯ লক্ষ ৪০ হাজার ৩৪০ জন

৯।তামিল৮ কোটি ৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৩০ জন

১০।মালায়ম ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৭০ জন

Wednesday, February 19, 2020

ঐতিহ্যময় মৌখিরা।
          # ফিরোজ আলি কাঞ্চন#
পূর্ব বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম অঞ্চলের এই গ্রামে আছে বেশ কিছু প্রাচীন মন্দির।মানকর স্টেশন থেকে গেড়াই বিষ্টুপুর যাবার পথ ধরে প্রায় ২৫কিমি দূরত্বে এই গ্রাম,আবার এলেমবাজারের ১১মাইল থেকেও যাওয়া যায়।প্রথমেই চোখে পরবে সারিবদ্ধ ভাবে মুখোমুখি বেশ কিছু শিব  মন্দির।পশ্চিম মুখি তিনটি ডান দিকে ও পূব মুখি দুটি মন্দির বাম দিকে দেউল রীতিতে নির্মিত। বামদিকেই আর একটি উত্তর মুখি আটচালা রীতিতে নির্মিত মন্দির।একেবারে সামনে সোজাসুজি আর একটি আটচালা রীতিতে নির্মিত দক্ষিন মুখি মন্দির।এই মন্দির টি থেকে কিছু দূরে ডানদিকে উত্তর মুখি একটি বড়ো পঞ্চচূড়া লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির।প্রত্যেকটি মন্দিরের খিলানে টেরাকোটা কাজের নান্দনিক সৌন্দর্য খুবই আকর্ষনীয়।এই মন্দিরগুলি রায় পরিবার নির্মিত। মন্দির গুলির প্রতিষ্ঠা সাল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় না।দক্ষিণ মুখি আটচালা মন্দিরের ফলকে ১৭১৫ শকাব্দ,সন ১২০০ দেখা যায়।তবে এখানের সব মন্দিরগুলি যে একই সময়ে একই সঙ্গে নির্মিত হয়েছিল তা বলা যায় না।ঠিক মতো প্রচার পেলে এ গ্রাম ছোট খাটো পর্যটন কেন্দ্র রূপে গড়ে উঠতে পারে।
#ফিরোজ আলি কাঞ্চন#








Thursday, February 6, 2020


জি.আই.স্বীকৃত বর্দ্ধমানের সীতাভোগ  আর মিহিদানার
             
                                                   
রসোগোল্লা নিয়ে বাংলা আর ওড়িশার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও সীতাভোগ আর মিহিদানা যে বধ'মানের তা এতোদিনে নিশ্চিত হওয়া গেলো ২০১৭ সালে।দাজি'লিংয়ের চা,নবদ্বীপের দই,জয় নগরের মোয়া,ধনেখালির শাড়ি ইত্যাদির মতো বধ'মানের সীতাভোগ ও মিহিদানা
           বধ'মানে সীতাভোগ ও মিহিদানার জন্ম কাহিনী নিয়ে দুটি মত প্রচলিত।প্রথমত,১৯০৪সালের ৯আগষ্ট তখনকার ভাইসরয় লড' কাজ'ন এবং লেডি কাজ'ন বধ'মানে এসেছিলেন,ইনাদের আপ্যায়নের জন্য বধ'মানের মহারাজ বিজয় ছাঁদ মহাতাব নগরের নামকরা মিষ্টান্ন  প্রস্তুতকারী ভৈরবচন্দ্র নাগকে কোন নতুন ধরনের সুস্বাদু  মিষ্টি  তৈরীর প্রস্তাব দেন।ভৈরব চন্দ্র নাগ মহারাজের অনুরোধে প্রস্তুত করলেন দুটি অসাধারন মিষ্টান্ন, মূল উপকরণে সবেদা বা গোবিন্দভোগ চালের গুড়ি দিয়ে সীতাভোগ  আর বেসন দিয়ে মিহিদানা।আবার অন্যমতে ১৯০৬সালে বধ'মানে হওয়া নিখিল বজ্ঞ সাহিত্যসম্মেলনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সম্মানীয় বিজ্ঞজন দের জন্যই নাকি প্রথম তৈরী করা হয়েছিল সীতাভোগ  ও মিহিদানার।জন্ম নিয়ে বিতক' যাই থাকনা কেনো,বধ'মানের এই সীতাভোগ  মিহিদানা  খেয়ে  মুগ্ধ হয়ে সুনাম করতে বাধ্য হয়েছিলেন লড' কাজ'ন থেকে ১৯৬৫সালে দুগা'পুরে কংগ্রেসের এক সম্মেলেনে এসে তখনকার  প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও জহরলাল নেহেরু পয'ন্ত।
               এতোদিন পয'ন্ত এই বিখ্যত মিষ্টান্ন দুটির প্রতি বধ'মানের কোন ভৌগলীক স্বীকৃতি ছিল না,কিন্তু ২০১৭ সালে১লা এপ্রিল জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশনের নিজশ্ব ওয়েবসাইটে সেই বহু প্রতিক্ষার স্বীকৃতির কথা জানানো হলো।জি.আই. সীতাভোগ কে সারা ভারতের মধ্যে ৫২৫ তম স্থানে,রাজ্যের মধ্যে ১২ তম স্থানে ও মিহিদানাকে দেশের মধ্যে ৫২৬ তম স্থানে,রাজ্যের মধ্যে ১৩ তম স্থানে ভৌগলিক স্বীকৃতি দিল।আর এই স্বীকৃতির মূলে রয়েছে শহরের তেতাল্লিশ জন মিষ্টি ব্যবসায়ীর এক সম্মিলিত প্রচেষ্টা।'ট্রেডাস' ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ' প্রথমে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে সীতাভোগ  ও মিহিদানার জি.আই.স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানায়,এই আবেদনের সজ্ঞে যোগকরে দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ১৫ই নভেম্বর  রেডিও আকাশবাণী তে প্রচারিত বধ'মানের বিশিষ্ট মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী নগেন্দ্র নাথের একটি সীতাভোগ ও মিহিদানাকে নিয়ে প্রতিবেদন।অবশেষে সেই প্রচেষ্টা স ফল হলো।
                         ২০১৭ তে  জি.আই.স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে সীতাভোগ মিহিদানা বধ'মানের ভোগলিক পরিচয়ে স ররকারী পরিচিতি লাভ করলো,এই ' জি আই লোগো' থাকার কারনে অনান্য জেলায় বা রাজ্যে এই মিষ্টান্ন দুটির বধ'মানের নাম ব্যবহার করতে হলে তা আইন মেনে ক রতে হবে,এতে সব'ত্র সীতাভোগ  ও মিহিদানার গুনগত মান বজায়থাকবে।
সে বছর ভারত সরকারের জি. আই. বা জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকশনের স্বীকৃতি আদায় করে ছাড়ল।


জানেন কি বাংলার কোন স্কুল রবিবারও খোলা থাকে?

স্বদেশ প্রেম আর ব্রিটিশ বিরোধীতার আদর্শ অনুসরন করে আজো রবিবার ক্লাসচালু থাকে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে।

                                                           

বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের উপর জৌগ্রাম স্টেশন থেকে উত্তরে আমড়া মোড়,নূড়ির মোড় ধরে দুই থেকে তিন কিলোমিটার গেলেই মেমারী রোড়ের ধারে অবস্থিত এলাকার সুপ্রাচীন এক শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান_ গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।বিদ্যালয়টির গঠন-পঠন-পাঠন সব দিক থেকে অনান্য বিদ্যালয় গুলির মতোই স্বাভাবিক,কিন্তু নিজস্ব বিশেষ এক বৈশিষ্ট্যে এই বিদ্যালয় যেন সারা দেশে এক ব্যতিক্রমী  নজিড় সৃষ্টি করেছে।ব্রিটিশ সরকার এখন আর এ দেশে না থাকলেও তাদের চালু করা প্রথা অনুসরন করে আজো আমাদের দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রবিবার বন্ধ রাখা হয়,কিন্তু গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে আজো রবিবার ক্লাস চালু থাকে,যা এই প্রথাগত ধারনার বাইরে থেকে এই বিদ্যালয় কে একটা আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।অবশ্য এর প্রেক্ষাপটে রয়েছে স্বদেশ প্রেম আর তীব্র ব্রিটিশ বিরোধীতের ঐতিহ্যের ধারা।
          ভারতবর্ষ  তখন পরাধীন।১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে জাতীয় ক ংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী  অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পেশ করেন।এই অসহযোগ আন্দোলনের ইতিবাচক বা গঠনমূলক কর্মসূচিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন। দেশ বন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ঘোষণা  করলেন,"শিক্ষা অপেক্ষা করতে পারে কিন্তু স্বরাজের আর অপেক্ষার সময় নেই।"দলে দলে শিক্ষকেরা পদত্যাগ করতে লাগলেন,সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি থেকে দিনের দিন ছাত্রের সংখ্যা কমে যেতে লাগলো।
অসহযোগ আন্দোলনের জোয়ার তখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলায়।আর এই আন্দোলন কে সফল করে তুলতে নিজের নিজের সাধ্যমত আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আপামর বাঙালি। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বধ'মান জৌগ্রামের নিকট প্রতিষ্ঠিত হয় গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রধান উদ্যোগী ছিলেন অবিনাশচন্দ্র হালদার মহাশয়,তিনি নিজের দান করা জমিতে প্রথমে যখন বিদ্যাল য় প্রতিষ্ঠা ক রেন তখন  ছিল খড়ের এক টি আটচালা।গোপালপুর গ্রাম বাসীর আরাধ্যদেবতা মা মুক্তকেশীর নাম অনুসারে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় 'গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় '। অবিনাশচন্দ্র হালদারের সজ্ঞে সহযোগীতায় ছিলেন বিজয় কৃষ্ণকুমার,রাজবল্লভ কুমার,ভূষণ চন্দ্র হালদার প্রমুখগণ।
                 বিদ্যালয়ের সহঃ শিক্ষক নাজিবর রহমান জানালেন,  "বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম রেজোলিউশনে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ব্রিটিশ বিরোধীতার তীব্র প্রমান রুপে রবিবার বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন চালু থাকবে সেই ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে আজো আমাদের বিদ্যালয় রবিবার খোলাথাকে,এবং রবিবারের পরিবতে' সোমবার ছুটি থাকে।"
               বিদ্যালয়ের আরো কিছু সহঃ শিক্ষক পূণ'চন্দ্র মাজি,রাজীব রাহা,দেবব্রত রায়,লাল্টু কোলে,সৌরভ সরকার,ও সহঃ শিক্ষিকা তাঞ্জিলা খাতুনেরা জানালেন, "তখন বাংলার সমস্ত স্কুলকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিনিতে হতো,কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ছিল ইংরাজী ভাষা ও ব্রিটিশ বিরোধীতাকরে প্রতিষ্ঠিত সম্পূণ' বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয়।কিন্তু এটা ব্রিটিশ  সরকার মেনে নিতে পারলোনা,ফলে আমাদের বিদ্যালয়কে স্বীকৃতি দিল না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।এমন এক ঐতিহ্যময়  বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা  করে আমরা সত্যি গবি'ত।
             গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় শুধু তার ঐতিহ্যকে টিকিয়েই রাখেনি,চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে চাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সামাজিক জ্ঞান ও দায়ীত্ববোধের সঞ্চার ঘটিয়ে এবং প্রথাগত শিক্ষযগত যোগ্যতার উচ্চসীমায় পৌছে দেওয়ার মহান ব্রত আজো সে দায়ীত্ব সহ কারে পালন করে যাচ্ছে।বর্তমানে এখানে কারগরি শিক্ষারও ব্যবস্থা চালু হয়েছে।এই বিদ্যালয়ের অসংখ্য প্রাত্তন ছাত্র ছাত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত,সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই বিদ্যালয়েরই প্রাত্তন ছাত্র ছিলেন।

               শত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে এই বিদ্যালয় আজো তার ধারাকে অব্যাহত রাখতে পেরেছে।১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরাজী পড়াবার অনুম তি পায়,এবং ১৯৬৪খ্রিষ্টাব্দেউচ্চ মাধ্যমিক স্তরেউন্নিত এই বিদ্যালয়ের চাত্র ছাত্রীর স ংখ্যা বত'মানে প্রায় তেরোশো।এক কথায় নিজস্ব ঐতিহ্যের ধারাকে আজো বজায়রেখে গোপাল পুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় শুধু বাংলায় নয় ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে একটা নিজস্ব পরিচিতি লাভ করেছে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়।

লেখা ও ছবি ঃফিরোজ আলি কাঞ্চন

বিঃদ্রঃ লেখাটি এই সময় পত্রিকার বর্ধমান সমাচার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত,এখানে কিছুটা পরিবর্তিত।এই লেখা ও ছবি কপি করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেয়ার করতে পারেন।

                     সাত দেউলিয়া আঝাপুর


           ফিরোজ আলী কাঞ্চন




বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য শিখর বা দেউল,যেগুলির নিজস্ব বৈচিত্র বিশেষত্বের দাবি রাখে।যেমন গৌরাঙ্গপুরের ইছাই ঘোষের দেউল,দেবিপুরের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির,জৌগ্রামের জলেশ্বর মন্দির,দুর্গাপুরের রাঢ়শ্বর শিব মন্দির,মাইথনের ক ল্যাণেশ্বরী মনন্দির,বরাকরে দামোদর নদের তীরে পাঁচটি দেউল মন্দির ছিল,বর্তমানে চারটি অবশিষ্ট আছে এগুলি একত্রে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নামে অভিহিত,প্রভৃতি।এই শিখর বা দেউল রীতির মন্দির গুলিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়--রেখা দেউল,পিড়া দেউল,এবং বেগুনিয়া।আবার দেউল মন্দিরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত,যথা--প্রথমত ' পিষ্ট ' বা তলপত্তন,এটি মন্দিরের মাটির নীচের ভীত অংশ।দ্বিতীয়ত,  ' বাড় ' এটি পিষ্ট ' র পর থেকে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের উপরের অংশ পর্যন্ত।তৃতীয়ত  ' গঞ্জী ', এই অংশভাগ সবথেকে দৃষ্টিনন্দন ; দেউলের যা কিছু সৌন্দর্য  ও বৈশিষ্ট্যাবলী তা এ অংশেই প্রকাশিত।আর সবের উপরের অংশকে বলা হয়, ' মস্তক '।
            জামালপুর থানার আঝাপুর মৌজার দেউল গ্রাম।নিহার রঞ্জন রায় তাঁর  ' বাজ্ঞালীর ইতিহাস ' গ্রন্থে এ গ্রামকে বলেছেন, ' সাত দেউলিয়া আঝাপুর '। শোনা যায় আগে নাকি এই গ্রামে সাতটি দেউল মন্দির ছিল,আর 'রাজারপুর ' থেকে নাম হয়েছে আঝাপুর।কিন্তু কোন রাজা সে সম্বন্ধে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে অবশিষ্ট একটি মাত্র মন্দির। উড়িশ্যার রেখ দেউল রীতির, পঞ্চ রথাকৃতি পঞ্চ দ্বারের,কৌনিক খিলানের, প্রায় ৯ফুট প্রস্তে ও ৮০ ফুট উচ্চতার এই অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শনটি খ্রিষ্টিয় নবম-  দশম শতকে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়।
           পোড়া ইটের তৈরি  এই দেউল মন্দিরটি সামান্য হেলানো,এ প্রসজ্ঞে জৌগ্রামের কল্যাণ দাস মহাশয় শুনালেন এক সুন্দর কাহিনী, " আমাদের এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে যে, কোন এক মাতৃইভক্ত রাজা মাতৃ ঋণ শোধ করতে চেয়ে সাতটা মন্দির তৈরী করে দিয়ে মাতাকে বলেন, ' মা, এ মন্দির গুলি তোমাকে দিয়ে আমার মাতৃ ঋণ পরিশোধ করলাম '।পুত্রের এ হেন আচরণে মা অসন্তুষ্ট হলেন, মৃদু হেসে বললেন, ' মাতৃ ঋণ শোধ করা পুত্রের সাধ্যাতীত '।রাজা দেখলেন তার চোখের সামনে একের পর মন্দির ধসে পড়ে যেতে লাগল। তখন তিনি ভুল বুঝতে তেরে মায়ের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন,এবং শেষ মন্দিরটি যেটি ধসে পড়তে যাচ্ছিল সেটি উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গিতে নিজের কণিষ্ঠ অজ্ঞুলি দিয়ে ঠেলে আটকালেন,মন্দির হেলে পড়তে পড়তে আর পড়ল না,সেই থেকে এই দেউল মন্দিরটি এমন ধারা হেলেই আছে। "

                   ঐতিহাসিকেরা মনে করেন পূর্বে এ স্থানটি ছিল জৈন তীর্থ ক্ষেত্র।পাল যুগের আগে বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,বর্ধমান অঞ্চলে জৈন ধর্ম ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।এই দেউল মন্দিরের মধ্যে দেখা যায় অষ্টম জিন চন্দ্রপ্রভের শিলামূর্তি ও এক গাছের নীচে দ্বাবিংশ জিন নেমিনাথের পাষাণ বিগ্রহ।দেউলের কাছেই আছে অগর দিঘী নামে এক বিরাট জলাশয়। অনুমান করা হয়ে থাকে হরণ্য দেশ বর্তমানের হরিয়ানার অগ্রোত নামক এক গ্রামের বণিকরা ব্যবসা সূত্রে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল, এদের বলা হতো ' অগর বালা ',এই ব ংশের ই কোন ব্যক্তি এই দিঘী এবং দেউল মন্দিরটি নির্মান করে দিয়েছিলেন।
             ------------++--------+