শের শাহের দান করা জমিতে কোলসড়ার ঘোষাল পরিবারের সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির
ফিরোজ আলী কাঞ্চন
জামালপুরের কোলসড়া গ্রামের ঘোষাল পরিবারের একাদশতম পূর্বপুরুষ দিগম্বর ঘোষাল আদিতে ছিলেন জম্মু কাশ্মীরের বাসীন্দা ও সম্রাট শের শাহের একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী।শের শাহ তখন জি টি রোড নির্মানের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে মগ্ন,আর তাঁর এই পরিকল্পনার তদারকির দায়ীত্বে আছেন দিগম্বর বিশ্বাস।জি টি রোডের কাজ কর্ম দেখাশুনার জন্য দিগম্বর ঘোষাল একদিন কংসা নদীর তীরে রাত্রি বাসের সময় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেলেন।ধর্মভীরু দিগম্বর ঘোষাল তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা সম্রাট কে জানালে শের শাহ দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা ও ব্যায় ভার পরিচালনার জন্য পাঁচ শত বিঘা জমি দান করেন,এই ভাবে ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে শের শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় দিগম্বর ঘোষাল কোলসড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির।
সেই থেকে আজও কোলসড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী কালী পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হয়ে আসছেন,বিশেষত্ব হলো এ ছাড়া অন্য কোন দ্বিতীয় কালী পূজো গ্রামে হয় না এমন কি কালী সেজে কোন বহুরুপীকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না,শুধু তাই নয় গ্রামের কোন বাড়িতে কালী ঠাকুরের কোন ক্যালেণ্ডাও রাখা হয় না।প্রতি বছর কার্তিক মাসে কালী পুজোর সময় ও চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে মহা ধূমধাম সহকারে গ্রাম বাসীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজার আয়োজন করে থাকেন,১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দিরের পূজায় ঘোষাল পরিবারের সঙ্গে সমগ্র গ্রামবাসীর অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতায় সার্বজনীন পূজায় পরিণত হয়।
পঞ্চমুণ্ডীর আসনে অধিষ্ঠত দেবীর মূর্তি তৈরী হয় সম্পূর্ণ গঙ্গার মাটির দ্বারা,প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য এই ঘোষাল পরিবারের ঈশ্বর চন্দ্র ঘোষাল প্রতিষ্ঠিত দূর্গাপীজাতেও ভোগ রান্না হয় সম্পূর্ণ গঙ্গা জলে।সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজায় বলি প্রথা প্রচলিত,এখানের পূজার আরো একটি ব্যতিক্রমী রীতি বিসর্জনের দিন পাঁচজন পুরোহিত দেবী মূর্তিকে খণ্ড খণ্ড করে ঝুড়িতে ভরে নিরঞ্জন করেন।এই ভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট ও ঐতিহাসিকতায় ঘোষাল পরিবারের সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির কোলসড়া গ্রামের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে,বাৎসরীক পূজার আনন্দে মেতে উঠে সারা গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ জন।
মোঃ9153735310