Friday, September 24, 2021

মানকরের ঐতিহ্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'স্পর্শমণি ' কবিতায় লিখেছেন-- জীবন আমার নাম মানকরে মোর ধাম জিলা বর্ধমান। রাঢ়বঙ্গের মধ্যমণি বর্ধমান জেলার এক প্রাচীন জনপদ মানকর। গবেষকদের মত অনুযায়ী বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচন্দ্র দীক্ষাগুরু ভক্তলাল গোস্বামীকে যে' মান ' অর্থাৎ সম্মান দিয়েছিলেন তা থেকেই মানকর নাম হয়েছে-- মান যার রাজকর সেই গ্রাম মানকর অনেকে বলেন গ্রাম্যদেবতা মানিকেশ্বর শিবের নামথেকে মানকর নাম হয়েছে। প্রাচীন এই জনপদে পাণ্ডবরা অজ্ঞতাবাসকালে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি।এখানের পাণ্ডব ক্ষেত্রতলা নামে স্থানে রয়েছে প্রাচীন এক বটশাখাবেষ্টিত ভগ্ন মন্দির কবিরাজ বাড়ির বিশাল অট্টালিলা মানকরের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলির মধ্যে অন্যতম। মৃণালসেন তাঁর বাইশে শ্রাবণ ছবির সুটিং এখানে করেছিলেন। এই কবিরাজবাড়ির রামানন্দ গুপ্ত,ভোলানাথ গুপ্ত প্রমুখরা ছিলেন দেশের বিখ্যাত সব কবরাজ। বিদ্যাসাগর মহাশয় স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য এই কবিরাজ বাড়িতে কিছুদিন কাটিয়ে ছিলেন। মানকরে রয়েছে প্রচুর প্রাচীন শিবমন্দির।শিবের পূজারী বর্গীনেতা ভাষ্কর পণ্ডিত এখানের বাড়িতে শিবমন্দির দেখলে নাকি সেই বাড়িতে হামলা চালাতো না। মানকরের বিশ্বাসবাড়ি মন্দির দালান সাড়ে চারশো বছরেরো অধিক প্রাচীন।দীগনগর থেকে নীলমাধব বিশ্বাস এসে পুত্র কামনায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রংমহল প্রায় তিনশত বছরের প্রাচীন,সুন্দর এই স্থাপত্যটিও আজ কালের নিয়মে ধ্বংসের মুখে। আর মানকরের কদমা তো বিখ্যাত,সারা বাংলায় তার সুনাম। মানকর তার অতীত ইতিহাস ও লোকায়ত ঐতিহ্যের ধারায় জেলার ইতিহাসকে করে তুলেছে সমৃদ্ধ।

Thursday, September 23, 2021

পারাজ গ্রামের নাম কিভাবে হলো?

পারাজ গ্রামের নাম কিভাবে হলো? গ্রামটি আগে ছিল পারুইদের গ্রাম, পারুই দের ছিল পানের বোরজ।পারুই আর বোরজ মিশ্রনে হয়েছে ' পারাজ ' ( তথ্যসূত্র ঃ ফিরোজ আলি কাঞ্চন)

Wednesday, September 22, 2021

কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের জন্মস্থান অবশ্যই গলসির কৈতাড়া গ্রাম

মধ্যযুগের মনসামঙ্গল কাব্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দর (সপ্তম শতক) জন্মস্থান কোথায় তা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন গবেষণা হয়নি।কবির কাব্যের আত্মপরিচয় অংশে পাওয়া যায়-- ” সোমনগর হইল কাঁথড়া।" কিন্তু এই ' কাঁথড়া ' কোথায়? এ প্রসঙ্গে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহবসত নিজস্ব উদ্যোগে আমাদের রাঢ়ঞ্চলে বেশ কয়েকবছর ধরে এক ক্ষেত্র সমীক্ষা চালাচ্ছি,তাতে বেশ কিছু তথ্য আমাকে আকৃষ্ট করে এবং তা বাংলার বৃহৎ পাঠক ও গবেষক মহলকে জানানো আমার কর্তব্য বলে উপলব্ধি করলাম। প্রথমত মনসামঙ্গের মুখ্যচরিত্র চাঁদ সওদাগরের বাসস্থান প্রাচীন বাণিজ্যনগরী চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ,মিয়েনমার,ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন প্রদেশ যে দাবীগুলি জানয়ে আসছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি অঞ্চলের কসবাতে।গাঙুর নদী এই অঞ্চলের মধ্যদিয়েই প্রবাহিত,অন্য কোথাও তা নেই,তবে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যদিয়ে যে বেহুলা নদীর গতিপথ দেখে সেইসবঅঞ্চল তাদের অঞ্চলে কসবার অবস্থান বলে যে দাবি জানায় সেগুলি ঠিক নয়,কেননা বেহুলার মন্দাস বা ভেলা যে পথ দিয়ে ভেসেসেগেছে সেই নদী অনেক স্থানেই বেহুলানদী নামে পরিচিত হয়েছে।দ্বিতিয়ত,কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ যে ' কাঁথড়া' র কথা বলেছন তা বর্তমানে বর্ধমান গলসির ' কৈতাড়া ' গ্রাম বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি ।কসবায় চাঁদ সওদাগরেরপূজিত বলে প্রচলিত যে রামেশ্বর শিব মন্দির এবং বেহুলার লোহার বাসরঘর বলে চিহ্নিত যে ' সাতালি পর্বত ' আছে সেই স্থান পরিদর্শনে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ একাধিক বার এসেছিলেন বলে এখানের প্রাচীনেরা শুনে এসেছেন বলে জানালেন।এই কসবা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে কৈতাড়া গ্রামের অবস্থান( জে এল নং ৭৪)। গ্রামটি খুবই প্রাচীন,বঙ্গদেশের প্রাচীনতম তাম্রপট্ট লিপি মল্লসারুল লিপিতে গ্রামটির নাম রয়েছে ' কবিন্থবাটক '।এই গ্রামটি কাঁসা পিতল কেন্দিক ব্যবসার জন্য বহুকাল ধরে বিখ্যাত।অনুমান করতেপারি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন;এর প্রশ্নাতীত প্রমাণ হল,আজও কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের কাব্যের ভাষার সাথে কৈতাড়া গ্রাম ও সংলগ্ন গলসি অঞ্চলের উপভাষা ও নিভাষার মিল পাওয়া যায়।ভাষাতাত্ত্বিক এই বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কেতকাদাসের কাব্যে গোহগ্রাম ঘাট,শিল্লা ঘাট,জুজুটি ঘাট প্রভৃতি যে স্থান নামগুলি পাওয়া যায় সেগুলি সব কৈতাড়া সংলগ্ন মৃতপ্রায় গাঙুর নদী ও দামোদর নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম।কাঁথড়া > কেতেড়া > কৈতাড়া - এই ভাবেই নামটি পরি বর্তিত হয়েছে। ফিরোজ আলি কাঞ্চন গলসি,বর্ধমান বিঃদ্রঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের জন্মস্থান সম্পর্কে কৈতাড়া গ্রামের দাবি আমি এই প্রথম তুললাম।এর পূর্বে কোন গবেষক কৈতাড়া গ্রামের কথা বলেননি।আমার এই মতামত আমি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও প্রকাশ করেছি।অন্য কোন গবেষক আমার এই দাবি খণ্ডন করতে পারেন কিন্তু দয়া করে অন্যকোথায় তথ্যসূত্র উল্লেখ ছড়া প্রকাশ করবেন না,বা লেখাটি কপি করে নিজের নামে প্রকাশ করবেন না🙏।কপিরাইট প্রযোজ্য।।