রাঢ় বঙ্গের মধ্যমণি বর্ধমান জেলার গলসি অঞ্চলের এক প্রাচীন গ্রাম খেতুড়া।গ্রামটিতে রাঢ় অঞ্চলের সব বৈশিষ্ট্য গুলিই তীব্র ভাবে বিদ্যমান।লৌকিক লোকদেবতা ক্ষেত্রপালের নাম থেকে গ্রামের নাম ক্ষেত্রপুর>খেতুড়। গ্রামেহিন্দু ব্রাম্ভন,মুসলিম,মেটে,বাউড়ি,মুচি,বাউল প্রভৃতি জাত ধর্মের এক মিলিত সহাবস্থান।ব্রাম্ভন পাড়ায় আগে হত বাসন্তি পূজা,চৈত্র মাসে শারদীয়া দুর্গাপূজার মত চারদিন ধরে মহিষাসুর মর্দিনী সিংহ বাহিনী দেবী দূর্গা সপ্তমী তিথতে পূজত হতেন।চান্না গ্রামে থাকাকালীন সাধক কবি কমলাকান্ত এই পূজা দর্শনে এসেছিলেন বলে প্রচলিত।
গ্রামে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সেখ,খাঁ, মল্লিক,মিদ্দা,মণ্ডল,আনসারী প্রভৃতি উপাধি দেখাযায়।ফকির পাড়ায় সাহ সম্প্রদায়ের বাস,এখানে বুড়ো পীরের উরস খুব ধুম ধাম করে হয়,এই পাড়ার অনেকে একতারা,দোতারা প্রভৃতি লোকবাদ্য বাজাতে পারদর্শী,অনেকে ফকরি গান গায়,এই গানে সুফি ভাবাদর্শ লক্ষ্যণীয়।গ্রামের অন্য পীরের মাজার গুলি হল ঘোড়া শহীদ,ফকির সাহেব বা বাবা ফেরণ শাহ প্রমুখ গণ।মহরমে শোক পালন হয়ে থাকে,এক সময় মহরমে চন্দন নগরের আলোক সজ্জা ছিল আকর্শনীয়।
গ্রামে আছে প্রাচীন সিং রাজাদের আমলের পুকুর সিংসায়ের।অন্য পুকুর গুলি হল মাঝিপাড়ার প্রাইমারী স্কুলের কাছে বামুন পুকুর ও সামনে বড় পুকুর,বামুন পাড়ায় গাঁ গড়ে,দাস পাড়াতে শুড়ি পুকুর,দক্ষিণ পাড়াতে নতুন পুকুর,ফকির পাড়াতে গাবা পুকুর ও মল্লিক পুকুর।খাঁ পাড়ায় বাগান গড়ে,ফকির সাহেবের আস্তানার কাছে খোড়া পুকুর,পাংশ পুকুর,আল কোড়া পুকুর,মেজেরি পুকুর,প্রামের প্রবেশ মুখে গলসির তখনকার জমিদার গাঙ্গুলীরা গ্রামের বিবিদের (মহিলাদের)সরবরাহ করার জন্য তৈরী করে দিয়েছিলেন বিবি সায়ের,মোড়ল পাড়ায় নাগর দুনা পুকুর প্রসজ্ঞে মোড়ল পাড়ার নয়ন চাঁদ মণ্ডল জানালো ওর দাদোর বাবার প্রচুর গরু মোষ ছিল।সে সময় ইংরেজরা গ্রামে ক্যাম্প বসিয়ে ছিল,এবং সেখানে দুধের যোগান দিত।চলে যাবার সময় ইংরেজরা পুরস্কৃত করতে চায়লে তিনি গরু মোষের পানীয় জলের জন্য এক পুকুর খনন করে দেবার আবদার জানান,ইংরেজরা পুকুর কেটে দিয়েছিল ও চারিদিকে গরুর খাবার দুনা বসিয়ে দিয়েছিল,তাই পুকুর টির নাম নাগরদুনা।
গ্রামে লোক ঐতিহ্য সত্যপীরের গানের আসর যেমন মুসলিম পাড়ায় বসে তেমনি বাউড়ি,মেটে পাড়ায় হয় টুসু গানঃ ' টুসু আমার ভাত খাবে লো আলুপোস্ত তরকারী '।এছাড়া কাজী সাহেব,আলকোরার ক্ষীর ইত্যাদি গ্রাম্য কিছু রেওয়াজ দেখা যায়।
গ্রামের বেশির ভাগ পরিবার কাছের দূরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে উঠে এসে এ গ্রামে বসত গড়েছেন।যেমন এ লেখকেরা ছিল আদিতে আতুসি গ্রামের, আতুসি গ্রামের নিকটে দামোদর নদ,কালক্রমে দামোদর নদের জলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা পরিবর্তনকরে মানুষ গলসির উপরদিয়ে জি টি রোডের উপর নির্ভর হয়ে উঠে,তখন খেতুড়া গ্রামে এসে বাস করতে থাকে সুবিধার জন্য।
এক কথায় খেতুড়া রাঢ় বঙ্গের অনান্য গ্রামগুলির মতোই নানা লোক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধময়।
----------------------------------------------------
সংযোগ
বিমান সেন মহাশয় লিখে পাঠিয়েছেন--
অপূর্ব,,,,চোখে জল এসে গেল। কারন,, শিশুকাল থেকে বাবলার ছেলে হিসাবে,, বুইঞ্চি, খেতুরা কে পড়শী গ্রাম হিসাবে,,গলসী চৌমাথা কেন্দ্রিক মেলামেশা,, প্রায় সবাই সবাইকে চিনতো।
কত স্মৃতি,,,
সুন্দর উপস্থাপনা,,, এই প্রজন্ম জানে না,,,, খেতুরার ডি, ভি, সি, তে আগে লঞ্চ আসতো। ক্যাপ্টেন আমাদের লজেন্স দিতেন।
হাট তলায় কাবাডি র ম্যাচ হতো।
কাবাডি র একমাত্র অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত ভোলানাথ গুঁই ও তাঁর শিষ্য দল ইনসান আলী,আনজার আলী প্রমুখেরা মাঠ মাতিয়ে দিয়ে গেছেন।
ভু-দান আন্দোলনের নেতা "বিনোবা ভাবে" এই গ্রামে এসেছিলেন। খেতুরা গ্রাম টিই তাঁকে দান করা হয়। পরে তিনি আবার সব সত্ত্ব ফিরিয়ে দেন।
এই গ্রামেই আত্মগোপন করেছিলেন রাজনৈতিক কারণে সিনেমা জগতের এক নামজাদা টেকনেশীয়ন ( নাম টা ভুলে গেছি)। তিনি বহু জায়গায় খেতুরার স্মৃতি বলে গেছেন।
বাবলা-খেতুরা ছিল যমজ ভাইয়ের মতো গ্রাম।
খেতুরার বহু বিখ্যাত মানুষ জন ছিলেন। সবাই আজ পরলোকে।
খেতুরা কে খুব ভালো বাসী।
No comments:
Post a Comment