Saturday, April 20, 2019



        বৈষ্ণব তীথ' কুলীনগ্রাম

                                         ফিরোজ আলী কাঞ্চন

'কুলীনগ্রামীর কথা কহনে না যায়
শূকর চরায় ডোম সেহ কৃষ্ণ গায়'

    কুলীনগ্রামের মাহাত্ম প্রসজ্ঞে কৃষ্ণদাস কবিরাজ তার ' চৈতন্যচরিতামৃতে' গ্রন্থে এই কথা গুলিই লিখে গেছেন।নবদ্বীপে শ্রী চৈতন্য দেবের জন্মের অনেক আগে থেকেই এই গ্রামে আছড়ে পড়েছিল কৃষ্ণ কথার জোয়ার।বধ'মান হাওড়া কড' লাইনে জৌগ্রাম ষ্টেশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটের উত্তরে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে পরম তীথ'স্থান রুপে পরিগনিত এই কুলীন গ্রামের অবস্থান।
               চৈতন্যদেবের আবি'ভাবের পূবে' পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই কুলীনগ্রামে মালাধর বসু রচনা করেন ' শ্রী কৃষ্ণ বিজয়' কাব্য।মালাধর বসুর পিতার নাম ছিল ভগীরথ বসু এবং মাতা ইন্দুমতী দেবী।মালাধর বসুর ' শ্রী কৃষ্ণ বিজয় ' কাব্য যেমন বৈষ্ণব সম্রদারের কাছে খুবই জ নপ্রিয় হয়ে উঠল তেমনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেও এই কাব্যটি এক আলাদা ব্যতিক্রমী স্থান অধীকার করে নিল।' শ্রী কৃষ্ণ বিজয় ' স ংস্কৃত ভাষায় রচিত ভাগবত পুরাণের দশম ও একাদশ স্কন্দের ভাবানুবাদ,এর আগে কোন আঞ্চলিক ভাষায় ভাগবতের অনুবাদ হয়নি;এ দিক থেকে মালাধর বসুই হলেন ভাগবতের অনুবাদ ধারার প্রবত'ক।এই গ্রন্থ রচনা করতে মালাধর বসুর সাত বছর সময় লেগেছিল,রচনা কাল প্রসজ্ঞে তিনি লিখেছেন_" তেরশ পচানই শকে গ্রন্থ আরম্ভন/চতুদ'শ দুই শকে গ্রন্থ সমাপন।" অথা'ট ১৪৭৩খ্রীষ্টাব্দে(১৩৯৫ শকাব্দে) গ্রন্থ রচনা শুরু হয় এবং ১৪৮০ খ্রীষ্টাব্দে(১৪০২ শকাব্দে) তা সমাপ্ত হয়।এ দিক থেকেও মালাধ র বসুর ' শ্রীকৃষ্ণ বিজয়' হলো বাংলা সাহিত্যে প্রথম গ্রন্থ যেখানে রচনা কাল সম্পকে' স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়।
                    নিজের আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে মালাধর বসু লিখেছেন_" গৌড়েশ্বর দিলা নাম গুনরাজ খান "তখনকার সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমী মুসলিম সুলতান গন বাঙালী  পণ্ডিত দের ব্রাম্ভন হলে 'মিশ্র' এবং অব্রাম্ভন হ লে 'খান' উপাধিতে ভূষিত করতেন।গৌরের সুলতান রুক উদ্দিন বরবক শাহ(১৪৫৯-৭৪) অন্যমতে শামসুদ্দিন শাহ(১৪৭৪-৮০) মালাধর বসুর কাব্যপ্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে কবিকে ' গুনরাজ খান' উপাধি প্রদান ক রেন।'শ্রী কৃষ্ণ বিজয়' কাব্যের _" এক ভাবে বন্দ হরি যোড় করি করি হাত/নন্দের নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণ নাথ" পদটি শ্রী চৈতন্য দেবের খুবই প্রিয় ছিল।মালাধর বংশ ধর দের তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন,শ্রদ্ধা করতেন।বসু পরিবারের অনুরোধে তিনি একবার কুলীনগ্রামে  এসেছিলেন।শুধু মালাধর বসু বা শ্রী চৈতন্য দেব নয়,কুলীন গ্রাম যবন হরি দাসের সিদ্ধি স্থান রুপেও বিখ্যাত,এই গ্রামে হরিদাসের আখড়া আজও বিদ্যমান।
                   কুলীন গ্রামের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা প্রাচীন মন্দির,বিগ্রহ।গোপীনাথ মন্দিরে কালো প্রস্তর মূতি'তে কৃষ্ণ ও গোপীনাথ এবং ধাতু নিম'ত মূতি'তে রাধিকা নিত্য পূজা পান।গ্রামের ভট্টাচায্য' পাড়ায় দালান মন্দিরে আছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারুবিগ্রহ।পাল বংশীয় তান্রিক রাজাদের সময় কাল থেকে গ্রামের হাটতলায় শিবানী মন্দিরে পাষাণময়ী শিবানী এবং প্রস্তর নিমি'ত শিব ও শিবা(শৃগাল) মূতি' বিদ্যমান।প্রায় পাচশো বছর ধরে মিত্র বংশের কূলদেবতা 'কেষ্ট রায়' পূজা পেয়ে আসছেন।রথযাত্রার পরের দিন থেকে উল্টোরথের সময় পয'ন্ত জগ্ননাথ দেবের মাসীর বাড়িতে অধিষ্ঠান উপলক্ষে কুলীন গ্রামে যে বিশেষ পূজার আয়োজন করা হ য় তাতে অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে। পূবে' শ্রী চৈতন্য দেবের ইচ্ছায় পুরীতে রথ যাত্রার আগে পট্টডোরি পাঠানো হতো এই কুলীন গ্রাম তগেকেই।গোপাল মন্দিরের পূব'দিকে রয়েছে এক বৃহৎ  জলাশয়, গোপাল দিঘী, এই দিঘী তে হয় কালীয় দমন অনুষ্ঠান।গ্রামে কুলীন দেব দেবী ছাড়াও ধম'রাজ,মনসা,শীতলা প্রভৃতি রাঢ় বজ্ঞের লৌকিক দেব দেবীরাও পূজিত হ ন।
               এই ভাবে ইতিহাস, ধম' আর লোকবিশ্বাসের এক অপূব' মেলবন্ধনে কুলীন গ্রাম নিজস্ব ঐতিহ্যে মাথা উঁচু করে আজো বধ'মান।জেলার গৌরব বৃদ্ধি করে আছে।
----------------------------------------------------------------------------------------------




No comments:

Post a Comment