সাময়িক পত্রের ইতিহাসে সজনীকান্ত দাস ও উপেক্ষিত বেতালবন
ফিরোজ আলী কাঞ্চন
বর্ধমান থেকে গলসীর উপর দিয়ে হায়ওয়ে ধরে পারাজ হয়ে শিল্লা রোডে লোয়াপুরের পাশের গ্রাম বেতালবন।এই গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব সজনীকান্ত দাস।কবি,সমালোচক,সাময়িক পত্রের সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের জন্ম সাল ২৫আগষ্ট,১৯০০খ্রিষ্টাব্দ। পিতা হরেন্দ্র লাল যদিও ছিলেন বীরভূমের বাসীন্দা,কিন্তু কর্মসূত্রে পাবনা,দিনাজপুর,বাঁকুড়া,
মালদা বিভিন্ন স্থানে বারবার বাসা বদল করতে হয়েছিল তাঁদের।১৯১৮তে দিনাজপুর স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ান মিশনারি কলেজ থেকে আইএসসি,কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএসসি করে এমএসসি পড়ার সময় 'ভাবকুমার' ছদ্মনামে ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।বাংলা সাহিত্যে ' শনিবারের চিঠি ' ও সজনীকান্ত দাস(১৯২৮-৩২,১৯৩৬-৬২)যেন এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো।
আধুনিক অনেক নাম করা কবি সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত 'শনিবারের চিঠি 'র ব্যজ্ঞবাণের শিকার হলেন।খ্যাতির শীর্ষে থাকা রবীন্দ্রনাথ থেকে জনপ্রিয় কবি নজরুল কেউই সজনীকান্তের কটাক্ষ্য থেকে রেহাই পেলেন না।রবীন্দ্রনাথের গান,কবিতা,ছবি এমনকি আচরনকেও তীব্র ব্যজ্ঞরসে আক্রমণ হানলেন সজনীকান্ত--প্রকাশ করলেন ' শ্রী চরণেষু ', ' হেঁয়ালী ',' ভ্রান্তি ' র মতো কবিতা।রবীন্দ্রনাথ এতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন,কিন্তু মনে প্রাণে সজনীকান্ত দাস ছিলেন একান্ত রবীন্দ্র ভক্ত।তাইতো রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বকবির প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলেন
' মর্ত হইতে বিদায় ',কবিতাটি ১৯৪১ এর বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের শোকসভায় পাঠ করা হয়।
তবে নজরুলের উপর সজনীকান্ত দাসের আক্রমন ছিল আরো রূঢ়, ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় কাজীনজরুল ইসলামের নাম বিকৃত করে রাখলেন ' গাজী আব্বাস বিটকেল '।নজরুলের বিখ্যাত ' বিদ্রোহী ' কবিতের প্যারেডি করে লিখলেন ' ব্যাঙ ' নামে কবিতা--' আমি ব্যাঙ /লম্বা আমার ঠ্যাং...'ইত্যাদি। ' শনিবারের চিঠি ' ছাড়াও সজনীকান্ত দাস ' প্রবাসী ', ' মডার্ন রিভিউ ', ' দৈনিক বসুমতী 'প্রভৃতি পত্রিকার সজ্ঞে যুক্ত ছিলেন।শনিরঞ্জন প্রেস ও রঞ্জন পাবলিসিং হাউস প্রতিষ্ঠা করেন।এছাড়াও ইনি হয়েছিলেন বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি,পশ্চিমবজ্ঞ সরকারের পরিভাষা সংসদের সদস্য।
উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করে সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন ' বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ '(১৯৪৬),লিখেছেন ' রবীন্দ্রনাথঃজীবন ও সাহিত্য'।' পথ চলতে ঘাসের ফুল' (১৯২৯),' বজ্ঞ রণভূমে '(১৯৩১), ' রাজ হংস '(১৯৩৫), ' আলো আধাঁরী '(১৯৩৬) ' পঁচিশে বৈশাখ ', ' ভাব ও ছন্দ ',' পান্থ পাদপ ' প্রভৃতি কাব্যের তিনি রচয়িতা;' অজয় ' নামে একটি উপন্যাসও তিনি লিখেছিলেন।এছাড়াও সজনীকান্ত দাস একজন প্রতিষ্ঠিত গীতিকারও ছিলেন,কানন দেবী ও প্রমথেশ বড়ুয়া অভিনীত, নিউ থিয়েটারস প্রযোজিত 'মুক্তি ' সহ তখনকার একাধিক জনপ্রিয় ছবির গীতিকার ছিলেন তিনি;শুধু তাই নয় সজনীকান্ত ফ্লিম সেন্সার বোর্ডের সজ্ঞেও যুক্ত ছিলেন।
প্রতিভা আর নিজস্বতায় সজনীকান্ত দাস বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী ধারা জন্ম দিয়েছিলেন,কিন্তু দুঃখের বিষয় এ হেন বিখ্যত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান বেতালবন আজ প্রচারের অন্তরালে,জন্ম ভিটে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ধ্বংসের মুখে,নেই কোন সরকারী উদ্যোগ, এমনকি কোন স্মৃতি স্তম্ভও চোখে পড়ল না।জন্ম ভিটের উপর ভগ্নপ্রায় দালান বাড়িটির যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাতে ঘুটে গোবরের আস্তারনের অন্তরালে হতাসার গভীর অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে শেষ স্মৃতি চিহ্ন টুকু নিয়ে।স্থানীয় গ্রামবাসী ওমকার দত্ত,বাবুলাল মীর্জারা জানালেন,'আমাদের গ্রামে সজনীকান্ত দাস জন্মেছিলেন এটা আমাদের গর্ব,সরকারের কাছে অনুরোধ এ স্থানটি অধিগ্রহন করে রক্ষনাবেক্ষন করুক।' উদাসীনতা আর অবহেলায় বেতালবনে সজনীকান্ত দাসের জন্মভিটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সজনীকান্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন চিরটা কাল।
বর্ধমান থেকে গলসীর উপর দিয়ে হায়ওয়ে ধরে পারাজ হয়ে শিল্লা রোডে লোয়াপুরের পাশের গ্রাম বেতালবন।এই গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব সজনীকান্ত দাস।কবি,সমালোচক,সাময়িক পত্রের সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের জন্ম সাল ২৫আগষ্ট,১৯০০খ্রিষ্টাব্দ। পিতা হরেন্দ্র লাল যদিও ছিলেন বীরভূমের বাসীন্দা,কিন্তু কর্মসূত্রে পাবনা,দিনাজপুর,বাঁকুড়া,
মালদা বিভিন্ন স্থানে বারবার বাসা বদল করতে হয়েছিল তাঁদের।১৯১৮তে দিনাজপুর স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ান মিশনারি কলেজ থেকে আইএসসি,কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএসসি করে এমএসসি পড়ার সময় 'ভাবকুমার' ছদ্মনামে ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।বাংলা সাহিত্যে ' শনিবারের চিঠি ' ও সজনীকান্ত দাস(১৯২৮-৩২,১৯৩৬-৬২)যেন এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো।
আধুনিক অনেক নাম করা কবি সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত 'শনিবারের চিঠি 'র ব্যজ্ঞবাণের শিকার হলেন।খ্যাতির শীর্ষে থাকা রবীন্দ্রনাথ থেকে জনপ্রিয় কবি নজরুল কেউই সজনীকান্তের কটাক্ষ্য থেকে রেহাই পেলেন না।রবীন্দ্রনাথের গান,কবিতা,ছবি এমনকি আচরনকেও তীব্র ব্যজ্ঞরসে আক্রমণ হানলেন সজনীকান্ত--প্রকাশ করলেন ' শ্রী চরণেষু ', ' হেঁয়ালী ',' ভ্রান্তি ' র মতো কবিতা।রবীন্দ্রনাথ এতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন,কিন্তু মনে প্রাণে সজনীকান্ত দাস ছিলেন একান্ত রবীন্দ্র ভক্ত।তাইতো রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বকবির প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলেন
' মর্ত হইতে বিদায় ',কবিতাটি ১৯৪১ এর বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের শোকসভায় পাঠ করা হয়।
তবে নজরুলের উপর সজনীকান্ত দাসের আক্রমন ছিল আরো রূঢ়, ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় কাজীনজরুল ইসলামের নাম বিকৃত করে রাখলেন ' গাজী আব্বাস বিটকেল '।নজরুলের বিখ্যাত ' বিদ্রোহী ' কবিতের প্যারেডি করে লিখলেন ' ব্যাঙ ' নামে কবিতা--' আমি ব্যাঙ /লম্বা আমার ঠ্যাং...'ইত্যাদি। ' শনিবারের চিঠি ' ছাড়াও সজনীকান্ত দাস ' প্রবাসী ', ' মডার্ন রিভিউ ', ' দৈনিক বসুমতী 'প্রভৃতি পত্রিকার সজ্ঞে যুক্ত ছিলেন।শনিরঞ্জন প্রেস ও রঞ্জন পাবলিসিং হাউস প্রতিষ্ঠা করেন।এছাড়াও ইনি হয়েছিলেন বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি,পশ্চিমবজ্ঞ সরকারের পরিভাষা সংসদের সদস্য।
উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করে সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন ' বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ '(১৯৪৬),লিখেছেন ' রবীন্দ্রনাথঃজীবন ও সাহিত্য'।' পথ চলতে ঘাসের ফুল' (১৯২৯),' বজ্ঞ রণভূমে '(১৯৩১), ' রাজ হংস '(১৯৩৫), ' আলো আধাঁরী '(১৯৩৬) ' পঁচিশে বৈশাখ ', ' ভাব ও ছন্দ ',' পান্থ পাদপ ' প্রভৃতি কাব্যের তিনি রচয়িতা;' অজয় ' নামে একটি উপন্যাসও তিনি লিখেছিলেন।এছাড়াও সজনীকান্ত দাস একজন প্রতিষ্ঠিত গীতিকারও ছিলেন,কানন দেবী ও প্রমথেশ বড়ুয়া অভিনীত, নিউ থিয়েটারস প্রযোজিত 'মুক্তি ' সহ তখনকার একাধিক জনপ্রিয় ছবির গীতিকার ছিলেন তিনি;শুধু তাই নয় সজনীকান্ত ফ্লিম সেন্সার বোর্ডের সজ্ঞেও যুক্ত ছিলেন।
প্রতিভা আর নিজস্বতায় সজনীকান্ত দাস বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী ধারা জন্ম দিয়েছিলেন,কিন্তু দুঃখের বিষয় এ হেন বিখ্যত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান বেতালবন আজ প্রচারের অন্তরালে,জন্ম ভিটে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ধ্বংসের মুখে,নেই কোন সরকারী উদ্যোগ, এমনকি কোন স্মৃতি স্তম্ভও চোখে পড়ল না।জন্ম ভিটের উপর ভগ্নপ্রায় দালান বাড়িটির যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাতে ঘুটে গোবরের আস্তারনের অন্তরালে হতাসার গভীর অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে শেষ স্মৃতি চিহ্ন টুকু নিয়ে।স্থানীয় গ্রামবাসী ওমকার দত্ত,বাবুলাল মীর্জারা জানালেন,'আমাদের গ্রামে সজনীকান্ত দাস জন্মেছিলেন এটা আমাদের গর্ব,সরকারের কাছে অনুরোধ এ স্থানটি অধিগ্রহন করে রক্ষনাবেক্ষন করুক।' উদাসীনতা আর অবহেলায় বেতালবনে সজনীকান্ত দাসের জন্মভিটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সজনীকান্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন চিরটা কাল।
-------------+++-------------- ------------------------------ ------------+++---+--------
No comments:
Post a Comment