Friday, May 22, 2020


                     সাত দেউলিয়া আঝাপুর


           ফিরোজ আলী কাঞ্চন




বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য শিখর বা দেউল,যেগুলির নিজস্ব বৈচিত্র বিশেষত্বের দাবি রাখে।যেমন গৌরাঙ্গপুরের ইছাই ঘোষের দেউল,দেবিপুরের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির,জৌগ্রামের জলেশ্বর মন্দির,দুর্গাপুরের রাঢ়শ্বর শিব মন্দির,মাইথনের ক ল্যাণেশ্বরী মনন্দির,বরাকরে দামোদর নদের তীরে পাঁচটি দেউল মন্দির ছিল,বর্তমানে চারটি অবশিষ্ট আছে এগুলি একত্রে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নামে অভিহিত,প্রভৃতি।এই শিখর বা দেউল রীতির মন্দির গুলিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়--রেখা দেউল,পিড়া দেউল,এবং বেগুনিয়া।আবার দেউল মন্দিরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত,যথা--প্রথমত ' পিষ্ট ' বা তলপত্তন,এটি মন্দিরের মাটির নীচের ভীত অংশ।দ্বিতীয়ত,  ' বাড় ' এটি পিষ্ট ' র পর থেকে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের উপরের অংশ পর্যন্ত।তৃতীয়ত  ' গঞ্জী ', এই অংশভাগ সবথেকে দৃষ্টিনন্দন ; দেউলের যা কিছু সৌন্দর্য  ও বৈশিষ্ট্যাবলী তা এ অংশেই প্রকাশিত।আর সবের উপরের অংশকে বলা হয়, ' মস্তক '।
            জামালপুর থানার আঝাপুর মৌজার দেউল গ্রাম।নিহার রঞ্জন রায় তাঁর  ' বাজ্ঞালীর ইতিহাস ' গ্রন্থে এ গ্রামকে বলেছেন, ' সাত দেউলিয়া আঝাপুর '। শোনা যায় আগে নাকি এই গ্রামে সাতটি দেউল মন্দির ছিল,আর 'রাজারপুর ' থেকে নাম হয়েছে আঝাপুর।কিন্তু কোন রাজা সে সম্বন্ধে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে অবশিষ্ট একটি মাত্র মন্দির। উড়িশ্যার রেখ দেউল রীতির, পঞ্চ রথাকৃতি পঞ্চ দ্বারের,কৌনিক খিলানের, প্রায় ৯ফুট প্রস্তে ও ৮০ ফুট উচ্চতার এই অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শনটি খ্রিষ্টিয় নবম-  দশম শতকে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়।
           পোড়া ইটের তৈরি  এই দেউল মন্দিরটি সামান্য হেলানো,এ প্রসজ্ঞে জৌগ্রামের কল্যাণ দাস মহাশয় শুনালেন এক সুন্দর কাহিনী, " আমাদের এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে যে, কোন এক মাতৃইভক্ত রাজা মাতৃ ঋণ শোধ করতে চেয়ে সাতটা মন্দির তৈরী করে দিয়ে মাতাকে বলেন, ' মা, এ মন্দির গুলি তোমাকে দিয়ে আমার মাতৃ ঋণ পরিশোধ করলাম '।পুত্রের এ হেন আচরণে মা অসন্তুষ্ট হলেন, মৃদু হেসে বললেন, ' মাতৃ ঋণ শোধ করা পুত্রের সাধ্যাতীত '।রাজা দেখলেন তার চোখের সামনে একের পর মন্দির ধসে পড়ে যেতে লাগল। তখন তিনি ভুল বুঝতে তেরে মায়ের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন,এবং শেষ মন্দিরটি যেটি ধসে পড়তে যাচ্ছিল সেটি উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গিতে নিজের কণিষ্ঠ অজ্ঞুলি দিয়ে ঠেলে আটকালেন,মন্দির হেলে পড়তে পড়তে আর পড়ল না,সেই থেকে এই দেউল মন্দিরটি এমন ধারা হেলেই আছে। "

                   ঐতিহাসিকেরা মনে করেন পূর্বে এ স্থানটি ছিল জৈন তীর্থ ক্ষেত্র।পাল যুগের আগে বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,বর্ধমান অঞ্চলে জৈন ধর্ম ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।এই দেউল মন্দিরের মধ্যে দেখা যায় অষ্টম জিন চন্দ্রপ্রভের শিলামূর্তি ও এক গাছের নীচে দ্বাবিংশ জিন নেমিনাথের পাষাণ বিগ্রহ।দেউলের কাছেই আছে অগর দিঘী নামে এক বিরাট জলাশয়। অনুমান করা হয়ে থাকে হরণ্য দেশ বর্তমানের হরিয়ানার অগ্রোত নামক এক গ্রামের বণিকরা ব্যবসা সূত্রে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল, এদের বলা হতো ' অগর বালা ',এই ব ংশের ই কোন ব্যক্তি এই দিঘী এবং দেউল মন্দিরটি নির্মান করে দিয়েছিলেন।
             ------------++--------+
মোঃ 9153735310

                 

No comments:

Post a Comment