Friday, May 22, 2020




পাণ্ডুরাজার ঢিবি
               ফিরোজ আলী কাঞ্চন



আউসগ্রাম থানার ভেদিয়ার নিকট এক প্রাচীন জনপদ পাণ্ডুক গ্রাম,এখানের রাজপোতা ডাঙায় কোন এক কালে ছিল কোন এক পাণ্ডু রাজার রাজবাড়ি, কিন্তু কে এই পাণ্ডুরাজা সে বিষয়ে কোন নিদৃষ্ট ধারনা পাওয়া যায় না।তবে জনশ্রুতি আছে শাক্য বংশীয় রাজা পাণ্ডু সাংসারিক কলহে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কপিলাবস্তু ত্যাগ করে রাঢ় অঞ্চলে এসেছিল রাজধানী স্থাপন করেন,বর্তমান ঢিপি সেই রাজবাড়ির ধ্বংসস্তুপ।
           স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে পাণ্ডু রাজার ঢিবি সম্পর্কে ছিল কৌতুহল ও আগ্রহ।রাখালেরা গরুর পাল নিয়ে চড়াতে এসে মাঝে মধ্যে সন্ধান পেতো কিছু ভাঙা প্রাচীন মাটির পাত্রের। তবে একবার বন্যায় ঐ ঢিবিতে মাটি ধুয়ে উকি দিতে থাকে কয়েকটি স্বর্ণমূদ্রা,হৈ চৈ পড়ে যায় এলাকায়।খবর পেয়ে বি বি লাল মহাশয়ের নেতৃত্বে প্রথম খনন কার্য চালানো হয় ১৯৫৪-৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাপ্ত নিদর্শনের রেডিও কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এখানের সভ্যতা প্রায় চার হাজার বছর পূর্বের,যা সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক।বি বি লাল মহাশয়ের পর পশ্চিমবজ্ঞ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের ডাইরেক্টর শ্রী পরেশচন্দ্র দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানটিতে ১৯৬২-১৯৬৫খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চারবার চারটি পর্যায়ে খনন কার্য চালানো হয় এবং ১৯৮৫তে আরো একবার খনন চালিয়ে এখানে ছয়টি স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়,যার মধ্যে নীচের দুটি স্তর তাম্র প্রস্তর যুগীয়।
         পাণ্ডুরাজার ঢিবি থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছের প্রকৃতি আঁকা স্বর্ণ মূদ্রা,মাতৃদেবীর প্রতিকৃতি, মাটির পিণ্ডে রেশমি বস্ত্রের ছাপ,তামার অলংকার,মৃৎ পাত্র,সিমুল তুলোর বস্ত্রখণ্ড, হাড়ের হাতিয়ার,দুটি বিষ্ণু মূর্তি প্রভৃতি।এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলি থেকে সে সময় কার জনজীবন,জীবীকা,ব্যবসা,খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম ভাবনা সব দিকের একটা সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যায়।
                 ফলে পাণ্ডুরাজার ঢিবি আমাদের সভ্যতার এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিকময় স্থান।কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোন উল্লেখ আমাদের ইতিহাসের পাঠ্যগ্রন্থে পাওয়া যায়না।ঠিক মতো প্রচার পেলে এ স্থান পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদা লাভ করবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------


No comments:

Post a Comment