Friday, May 22, 2020





বহুরপীঃনতুন প্রজন্ম আর এ পেশায় আসতে চায় না।

                                        ফিরোজ আলী কাঞ্চন

দারিদ্র্য যেন নিত্য সজ্ঞী,বছর বারো ছৌদ্দর ছেলেটি ছেলেবেলার স্বাভাবিক প্রবনতাকে হতাশার ঘরে শেকল তুলে রেখে এসে ছিন্ন পোষাকে বহুরুপী সেজে পথে নেমেছে ভিক্ষায়।কৌতুহলী হয়ে ভালোবেসে কাছে ডাকলাম,শুধালাম ওর বহুরুপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রকৃত জীবনের রুপের কথা।
             বাড়ি বীরভূমে,পরিবারের সকলের সাথে এসেছে বধ'মানে।দূগা'পুর,আসানসোল থেকে গলসী হয়ে মূল বধ'মান শহরে ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।পরিবার বলতে মা,বাবা আর দুই ভাই।আজকে বাবা আর ভাই সেজেছে হুনুমান,মা সেজেছে সুপ'নখা,আর ও সেজেছে মহাদেব।সবাই এক এক দিকে ঘুরছে।আর ওদের দেশের গ্রামের সবাই বহুরুপী সাজে,ওরা পশ্চিম বজ্ঞের বিভিন্ন জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।অনেক কাল থেকে ওরা এ পেশায় যুক্ত।
           কিন্তু বড়ো হয়ে আর ও এ পেশায় থাকতে চায় না,কেন না এ পেশায় আজ কাল আর তেমন পয়সা হয় না বলে ওর বাবা ওকে বলেছে মোটর সাইকেল গ্যারেজে কাজে লাগিয়ে দিবে।জিনিসের দাম বাড়ছে,নতুন পোশাক কেনার মতোও রোজগার হয় না,ফলে একই পোশাকে একই সাজ সেজে দিনের পর দিন কাটাতে হচ্ছে,সারা দিন ঘুরে ঘুরে জন প্রতি আয় ৭০_৮০টাকা।
             ছেলেটির ছিন্ন সাজই ওর বক্তব্যের স্বপক্ষেপ্রমান দিল,মনে হলো কৈলাস থেকে স্বয় ং মহাদেব যেন নেমে এসেছেন এই বালক ব হুরুপীর রুপের অন্তরালে, কেননা দারিদ্রতা যে ম হাদেবেরও নিত্য সজ্ঞী।
          আধুনিকতার সব'নাসা শ্রোতে আমরা হারিয়ে যেতে বসেছি আমাদের লোক ঐতিহ্য গুলিকে,এগুলির প্রতি আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।

           তকীপুরের বড় কালী
     
                                                  ফিরোজ আলী কাঞ্চন

' ঠাকুর আর পুকুর/এই নিয়ে তকীপুর। ' জেলার শক্তিসাধনায় আউসগ্রাম থানা অঞ্চলের এই প্রাচীন জনপদ তকীপুর গ্রাম এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।বহু পূর্বে এই স্থান ছিল ঘন বেত বনের গভীর জজ্ঞল,আর সে জজ্ঞল ছিল ঠ্যাঙারে ডাকাতদের অবাধ বিচরন ক্ষেত্র।গ্রামের উত্তর প্রান্তে যে মহাশ্মশান ছিল,সেখানে ডাকাতের দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে গভীর রাতে মশাল জ্বালিয়ে এসে কালীর সাধনা করে তবে ডাকাতি করতে যেত।সে প্রায় ৬০০ বছর আগের কথা।পরে বর্ধমান মহারাজের উদ্যোগে নির্মিতি হয় বর্তমান মন্দিরটি।
         মন্দিরে নিত্য পূজা দেওয়া হয়,তবে প্রতি সপ্তাহে শনি ও মজ্ঞলবার দেবীর বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।কালীপূজার সময় দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরী করা প্রায় ১৫-২০ফুট উচ্চতার।এই সময় দেবীর পূজার কিছু ব্যতিক্রমী রীতি চোখে পড়ে,মাঝ রাত্রিতে পুরোহিত দেবীর চক্ষুদান করে থাকেন,চক্ষুদান করার পরেই তিনি সোজা বাড়ি ফিরে যান,তখন মশাল জ্বালিয়ে পুরোহিত মশায়কে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসা হয়।আমাবস্যার ভোর বেলায় দেবীর ঘট আনা হয়,তার পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।বলিদান দেওয়া হয় সকালে,হোম হয়,প্রতিদিন নিয়ম মেনে ঘট আনা হয়,আবার পুজোর পর সে ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। এই ভাবে  পঞ্চমী পর্যন্ত পূজা চলে।এ প্রসজ্ঞে উল্লেখ্য দেবীর নিজস্ব কম-বেশী  প্রায় ২৭-২৮ ভরি রুপো এবং ৭-৮ভরি সোনার গহনা আছে।এই গহনা পূজা কমিটির মধ্যস্থতায় সারা বছর ব্যাংকের লকারে গচ্ছিত থাকে,পূজার সময় লকার থেকে বেড়করে এনে স্যাকারার কাছে নিয়ে গিয়ে পালিশ করে এনে দেবীকে পরানো হয়ে থাকে,পূজার পর আবার তা নিরাপদে ব্যাংকের লকারে রেখে আসা হয়।
          মন্দিরে বলিদানের প্রথা খুব প্রাচীন।।শোনাযায় সেই ডাকারদের আমলে নাকি এই দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হতো।পরে শুকরও বলি দেওয়ার চল ছিল,তবে তা এখন হয় না।বর্তমানে মোষ,পাঠা,ভেড়া বলি দেওয়া হয়ে থাকে।এই বলির সময় হাজার হাজার ভক্তের সমাগমে মন্দির প্রাজ্ঞন মুখরিত হয়ে থাকে।
              এই দেবী বড়ো জাগ্রত।দেবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে তকীপুর গ্রামবাসীর মধ্যে কিছু প্রথার প্রচলন আছে,যেমন ' নুন পালা 'প্রথা;এই প্রথার নিয়ম অনুযায়ী কোন এক বিশেষ দিনে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে সেদিন নুন ছাড়া রান্না করা হয়ে থাকে।
             এই বড় কালীর পূজা উপলক্ষে এক বিরাট মেলা বসে।তকিপুর সংলগ্নভোতা,বিল্বগ্রাম,সর,দিগনগর,বাহিরঘন্না,আসকরন,কুরকুবা,গলসী,খেতুড়া,বাবলা,বৈচি প্রভৃতি গ্রাম থেকে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ জমায়েত হন। বাড়িতে বাড়িতে কুটুম আসে।তকীপুর  গ্রামের বহু পরিবার কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন,এই পূজার কটাদিন দেবীর টানে সেই পরিবার গুলোও যেন গ্রামের মাটিতে ফিরে আসেন।







বর্ধমানের ভূমিপুত্র :হাসির রাজা নবদ্বীপ হালদার

                                   ফিরোজ আলী কাঞ্চন


          বাংলা সিনেমার স্বর্নযুগে বেশ কিছু কমেডিয়ান নিজস্ব যোগ্যতা ও প্রতিভায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, যাঁদের অসাধারণ শারীরিক বা বাচিক হাস্যরসাভিনয় বাংলা সিনেমায় যেন এক স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি করেছিল ; আর এই প্রথমদিকের বাংলা চলচিত্রের শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান রুপে যাঁর নাম সর্বাগ্রে এসেযায় তিনি নবদ্বীপ হালদার।
       
                   ১৯১১ সালে বর্ধমানের সোনাপলাসি গ্রামে নবদ্বীপ হালদারের জন্ম।গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পাঠ শেষ করে তিনি বর্ধমান মিউনিসপাল বয়েজ স্কুলে ভর্তি হন,এই সময় থাকতেন রাধানগরের ঢল দিঘী পাড়ায়।প্রথাগত পাঠ সমাপ্ত করে কলকাতায় পাড়ি দেন।ব্যক্তি জীবনে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেদিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে।চন্দন নগরে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।কলকাতায় নানা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে কাজ করেগেছেন। কিন্তু গ্রামের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড়ো হয়েউঠা নবদ্বীপ হালদারের মনের গভীরে সর্বদা যেন উকিদিত নিজের অভিনয়ের স্বপ্ন।গ্রামের যাত্রা নাটকে প্রথমে অভিনয়,ইচ্ছে করেই মুখস্তকরা সংলাপ ভুলে যেতেন, আর তাঁর সেই ভুলে যাওয়া দেখে গ্রামের লোকেরা যেন হেসে কুটোকুটি হতো।নবদ্বীপ হালদার কলকাতাতেও সফল হলেন,আপামর বাঙালী যেন তাঁর হাস্যরসের ধারায় মেতে উঠল।
                   একের পর এক চলচিত্রে নবদ্বীপ হালদার চুটিয়ে অভিনয় করলেন।দুই বেচারা,মানিকজোড়, সন্ধ্যাবেলার রুপকথা,সাড়েচুয়াত্তুর, হানাবাড়ি প্রভৃতি সিনেমা গুলিতে নবদ্বীপ হালদার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেন।এছাড়াও রেডিও এবং গ্রামোফোনে রেকোর্ডিং যুগে নবদ্বীপ হালদারের হাস্যরসাত্মক শ্রুতিনাটক পাঠ ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।নবদ্বীপ হালদারের বিখ্যাত শ্রুতিনাটক গুলি হলো -যুদ্ধ বিভ্রাট, রসোগল্লায় ইঁদূর,ইনজেকশান বিভ্রাট, হুলো বেড়াল,আদালতে গড়্গড়ি,যাত্রা বিভ্রাট,মামা ভাগ্নে,লুচি বিভ্রাট, পণ্ডিত মশাই।
              হাস্যরসের অভিনয়ে নবদ্বীপ হালদারের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো এক অদ্ভুত ব্যতিক্রমী ভাঙা কণ্ঠ স্বরে কথা বলা,অনেকে মজা করে বলতেন,নবদ্বীপ হালদারের গলার স্বর যেন হুকো টানার ঘর ঘর শব্দের মতো,তাইতো পরবর্তীকালে অনেকে নবদ্বীপ হালদারের কমেডি।স্টাইলকে নকল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।এহেন প্রতিভাধর অভিনেতার জন্মস্থান আজ চরম ভাবে উপেক্ষিত।সোনাপলাসি গ্রামের মাঝের পাড়ায় নবদ্বীপ হালদারের ভগ্নপ্রায় বসত বাড়ি যেন শেষ চিহ্নটুকু নিয়ে নিশ্চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

-------------------           --------               ------------                        --------------



খাজা আনোয়ার বেড়ের অস্তিত্ব আজ বিপ্নন

                                    ফিরোজ আলী কাঞ্চন

বর্ধমান শহরে মুসলিম ঐতিহাসিক ঐতিহ্যময় স্থান গুলির মধ্যে খাজা আনোয়ার বেড় সমাধি সৌধ ক্ষেত্রটি অন্যতম। একদিন বিশেষ এক কাজে বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ে গিয়ে হাতে সময় আছে দেখে কৌতুহলী হয়ে চলে গেলাম খাজা আনোয়ার বেড়ের সমাধী দর্শনে।বইয়ে তো অনেক পড়েছি,একবার নিজের চোখেই দেখে আসি।কিন্তু একি দেখলাম! টোটো চালক দশ টাকা নিয়ে কলেজ মোড় থেকে দেড় কিলোলিটারের মতো পথ পেড়িয়ে যেখানে নামালেন এটাই সেই বর্ধমানের বিখ্যাত খাজা আনোয়ার বেড়?কিন্তু প্রবেশ মুখে একি ব্যানার ঝুলছে!' ব্যক্তিগত সম্পত্তি ', ' ছবি তোলা নিষেধ ',ব্যক্তি গত সম্পত্তি যখন তখন প্রবেশ করতেও ভয় হলো।তবে বাইরে থেকেই প্রথমে দুচোখ ভরে দেখে নিলাম বিশাল প্রবেশ পথে সদর দরজা,আর তার সোজা দূরে খাজা আনোয়ারের সমাধী মাজারের অপরুপ স্থাপাত্য সৌন্দর্য। প্রবেশ মুখে সদর দরজার ডান পাশে দেখলাম ছোট ছোট কুটরী গুলিতে কিছু পরিবার বাস করছে,ওঁদের একজন কে জিজ্ঞেস করলাম ' এখানে প্রবেশ করতে হলে কোথায় অনুমতি নিতে হবে?'তিনি আমাকে অপেক্ষায় রেখে একজনকে ডেকে আনলেন,আমারি বয়সের কাছাকাছি এক যুবক,আমি অনুরোধ জানালে তিনি প্রবেশ করার অনুমতি দিলেন,কিন্তু সাবধান করে দিয়ে জালালেন, ' ছবি তুলে পেপারে দিলে কেস খেয়ে যাবেন কিন্তু ',আমি অভয় দিয়ে বললাম," না,না,তা হবে না।"
           ওহ!হৃদয় যেন জুড়িয়ে গেল,কি অপরুপ বিন্যাস,কি আপরুপ তার সৌন্দর্য। মকরেবায় আছে তিন গম্বুজ ওয়ালা প্রাচীন মসজিদ,মাঝে বাঁধানো পুষ্করিণী, তার মাঝে হাওয়া মহল।মোগল বংশের আজিম- উস - শানের পুত্র   সম্রাট ফারুক শিয়র  তখনকার দিনে দুই লক্ষ্য মুদ্রা ব্যয়ে শহীদ খাজা আনোয়ার ও তাঁর চারজন অনুচরের সমাধি ক্ষেত্র,নবাববাড়িটি নির্মান করে দয়েছিলেন।
        ১৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি  মহারাজ কৃষ্ণরাম রায়ের সময় বর্ধমান চাকলার বেশ কিছু অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা দেখা যায়,যেমন চেতুয়া ও বরদার জমিদার শোভা সিংহ,বিষ্ণুপুরের রাজা গোপাল সিংহ,চন্দ্রকোনার তালুকদার রঘুনাথ সিংহ,উড়িষ্যার পাঠান রহিম খাঁ রা একত্রে বর্ধমানের মহারাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করেন।১৬৯৬ তে চন্দ্রোকোণার যুদ্ধে কৃষ্ণরাম রায়ের মৃত্যু হলে শোভা সিংহের নেতৃত্বে বিদ্রোহী দল হুগলী,মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্থানে লুণ্ঠন চালিয়ে বর্ধমানে রাজ মহলে হামলা চালায়।কোষাগার লুঠ করে কৃষ্ণরাম রায়ের পরিবাররে পঁচিশ জনকে হত্যা করা হয়।মদ্যপান করে মাতাল হয়ে শোভা সিংহ কৃষ্ণরাম রায়ের কন্যা সত্যবতীর কক্ষে প্রবেশ করে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে সত্যবীর চুলের খোপায় লুকিয়ে রাখা ছোট্ট ছুরির আঘাতে পাপী শোভা সিংহের মৃত্যু হয়।এর পর বিদ্রোহী দলের নেতৃত্বের লাগাম চলেযায় রহিম খাঁ র হাতে।রহিম খাঁ র অত্যাচার অবচারের সংবাদে দিল্লোর সম্রাট ঔরজ্ঞজেব বিচলিত হয়ে পড়েন,বাহাদুর শাহ্‌র পুত্র আজিম-উস-সান কে সুবেদার নিয়োগ করা হয় রহিম খাঁ কে দমন করার জন্য,সজ্ঞে দেওয়া হলো সম্রাটের অনুগত দুই বিশ্বস্ত সেনা খাজা সৈয়দ আনোয়ার ও খাজা আবুল কাসেম কে।
             বর্ধমান শহরের দক্ষিণ দিকে দামোদর নদের নিকট  ' মূলকাঠি ' নামের স্থানে দু পক্ষের যুদ্ধ বাঁধে। যুদ্ধের মাঝে আজম-উস-শান দূত মারফত রহিম খাঁ র কাছে অনুরোধ পাঠালেন যে,যদি রহিম খাঁ  নিঃশর্ত আত্ম সমর্পন করেন তাহলে তার পূর্বের সব অপরাধ মার্জনা করে উচ্চ রাজ পদে নিয়োগ করা হবে।চতুর রহিম খাঁ  এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে আজিম-উস-সান কে দূতের মাধ্যমে আবেদন জানালেন,যদি তিনি খাজা আনোয়ারকে পাঠিয়ে এই চুক্তি সম্পাদন করেন তাহলে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করবেন।সহজ বিশ্বাসে মাত্র কয়েক জন সৈন্য নিয়ে আজিম-উস-শানের নির্দেশে খাজা আনোয়ার ও খাজা আবুল কাশেম রহিম খাঁ র শিবিরে উপস্থিত হয়ে দেখলেন কেমন যেন অস্বাভাবিক পরিবেশ।শিবিরে প্রবেশ না করে তিনারা বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলেন,কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক রহিম খাঁ র সৈন্যদের হঠাৎ আক্রমনে অসম যুদ্ধে খাজা আনোয়ার ও খাজা আবুল কাসেম বীরত্বের সজ্ঞে মৃত্যুবরণ করেন(১৬৯৮)
      এই দুঃখজনক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আজম_উস-শানের পুত্র ফারুক শিয়র খাজা আনোয়ার ও চার জন শহীদের কবর মাজার সৌধ নির্মান করে দেন।শুধু তা নয় তা রক্ষ্ণাবেক্ষনের জন্য বাদশাহী ফর্মানের মাধ্যমে (১৭১২)খাজা আনোয়ার এবং খাজা আবুল কাশেমের বংশধর গণকে কিছি গ্রাম প্রদান করা হয়েছেছিল।পরে বর্ধমানে বর্গী আক্রমনের সময় এই ফর্মানটি হাড়িয়ে গেলে খাজা আনোয়ার ও খাজা আবুল কাশেমের বংশধরদের আবেদনের ভিত্তিতে ১৭৬৭খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম আরেকটি ফর্মান প্রদান করেন।
      কিন্তু দুঃখের বিষয় এমন এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য স্থান টি রক্ষাণাবেক্ষনের অভাবে সসম্পূর্ণ ধ্বংস হতে বসেছে।পলেস্তারা খসে পড়েছে।সর্বত্র নোংড়া আবর্জনা ও আগাছায় ভর্তি।ভগ্নপ্রায় কুঠিরি গুলিতে বাস করছে কিছু পরিবার।পুষ্করিণীটি জলশূণ্য।ব্যক্তি সম্পত্তি হয়ে এখন বাংলা তথা বর্ধমানের গর্ব খাজা আনোয়ার বেড়ের ইতিসের অস্তিত্ব নির্ভর করে আছে এক অজানা ভবিষ্যতের উপর।
        


মোঃ8617386904

বজ্ঞদেশের প্রাচীনতম তাম্রপট্ট লিপিঃমল্লসারুল লিপি
                                ফিরোজ আলি কাঞ্চন
            ১৯৩৯সালে গলসীর মল্লসারুল গ্রামে জারুল নামে এক পুকুরে পাক তোলার সময় পাওয়া যায় একটা তাম্রশাসন,গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন এটা সমগ্র বজ্ঞদেশের প্রচীনতম তাম্রপট্ট লিপি। যখন উদ্ধার হয় তখন লিপিটির প্রথম কয়েকটি অক্ষর নষ্ট হয়ে গেছে__
     "...নাথঃ যঃ পুংসাং সুকৃতকম'ফলহেতুঃ
সত্যতপোময় মূতি'ল্লোকদ্বয় সাধনো ধম'ঃ
তদুনুজিতদনভ শোভা জ য়..."
         এই লিপিটর পাঠোদ্ধার করেছিলেন ননীগোপাল মজুমদার,তিনি এই লুপ্ত অংশের অনুমান করেছিলেন_"জয়তিশ্রী লোকনাথঃ"।কিন্তু ডঃসুকুমার সেন তার "বাজ্ঞালা সাহিত্যের ইতিহাস" গ্রন্থে(প্রথম খন্ড) এই অনুমানকে খন্ডন ক রে একাধিক যুক্তি দেখিয়েছেন,_"...মুদ্রায় আকা এই ছবি হ ইতে মনে হয় শ্লোকটি রাজদেবতা ধমে'র বন্দনা।"
                    ডঃসেনের মতকে গ্রহন করা হলে বোঝাযায় লৌকিক দেবতা তথা লোকধম' সেই প্রাচীন কাল থেকে ক তো গভীর প্রভাব বিস্তার ক রেছিল গলসী তথা ব ধ'মানের মাটিতে।তাছাড়া এই তাম্রপট্ট লিপিতে সব'প্রথম বধ'মান ভুক্তির উল্লেখ পাওয়া যায়।
                   এখানে উল্লেখিত মহারাজ বিজয় সেনের রাজত্ব কাল ছিল ৫০৭__৫৪৩খ্রীঃ।মল্লসারুল লিপি আসলে একটি ভূমিদান পত্র।এই লিপিতে গ লসী অঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামের প্রাচীন নামের উল্লেখ পাওয়া যায়,যেগুলি অপভ্রংশিত হ য়ে এই অঞ্চলে আজ ও রয়ে গেছে,ডঃ সুকুমার সেন এই নামগুলি উদ্ধার করেছেন___

    বত'মান নাম                          লিপিতে থাকা নাম

মল্লসারুল          >                  আম্রগতি'কা

বাকতা              >               বককত্তক

আদড়া           >                           অধিঝকরক

কইতারা         >                    কবিন্থবাটক

মহড়া              >                    মধুযাটক

সিমলোড়।         >               শান্মলী ঘাটক




 লিপিটির বিষয় পার্শবর্তী বেশ কিছু গ্রামের ব্যক্তির কাছথেকে স ম্পত্তি ক্রয় করে তা কৌণ্ডিন্য গোত্রীয় ব্রাম্ভন বৎসস্বামীকে প্রদান পত্র।এই দাতা ছিলেন বিজয় সেন,প্রথমে ইনি ছিলেন গুপ্তশাসনের শেষ পর্বের শাসক বৈন্যগুপ্তের সামন্ত,পরে গোপ চন্দ্রের সামন্ত হন।এই লিপিতে তখনকার দিনের রাজকর্মচারীদের বেশ কিছু পদবীর নাম পাওয়া যায়,যেমন -' আগ্রাহারিক','বিথ্যাধিকরণ ',' বাহনায়ক ' ইত্যাদি।
মল্লসারুল লিপি গলসীর ঐতিহাসিক উপাদনের এক উল্লেখ যোগ্য দলিল।
---------------------------
মোঃ8617386904


    স্বাধীন্তা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় ও চান্না আশ্রম।

                     ফিরোজ আলী কাঞ্চন



জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দিকে দলে প্রাধান্য ছিল মডারেট বা নরমপন্থীদের,এঁরা ব্রিটিশ সরকারে সজ্ঞে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরাধীন দেশবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পুরন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু কার্জনের বজ্ঞভজ্ঞ বিরোধী আন্দোলনের সময় নরম পন্থীদের সজ্ঞে চরম পন্থীদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই দুটি ধারারই ব্যপক প্রভাব বাংলার অনান্য স্থানের সজ্ঞে সজ্ঞে বর্ধমান জেলাতেও পড়েছিল,অনেক তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ স্বাধীনের মহান ব্রতে।
                    বর্ধমান জেলাতে চরমপন্থী আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়।১৮৭৭খিষ্টাব্দে ১৯নভেম্বর  উনিশ শতকের বৈপ্লবীক সংগ্রামের অগ্নিময় প্রতিমূর্তি এই যতীন্দ্রনাথবন্দোপাধ্যায়ের জন্ম গলসীর চান্না গ্রামে।এই চান্না গ্রামে আবার বাংলা শাক্তপদাবলীর বিখ্যাত পদকর্তা সাধক কবি কমলাকান্তের গ্রাম,যদিও কবির জন্ম অম্বিকা কালনায়,কিন্তু অকালে পিতৃবিয়োগের জন্য তিনি মায়ের সজ্ঞে চলে আসেন চান্নায় ;এখানের বিশালাক্ষী মন্দিরে পঞ্চমুন্ডি আসনে সাধক কবি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
               সে যাই হোক,যতীন্দ্রনাথ ছিলেন বলিষ্ঠ সুস্বাস্থের অধীকারী,গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পাঠ  সমাপ্ত করে তিনি বর্ধমানের রাজ কলেজে ভত্তি হলেন।চাত্রাবস্থাথেকেই যতীন্দ্রনাথের মনে স্বদেশ প্রেম আর জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটতে থাকে।তিনি স্থর করেন সামরিক বিভাগে যোগদিয়ে যুদ্ধের রণকৌশল আয়ত্ব করে তা দেশহিত ব্রতে প্র য়োগ করা।কিন্তু পিতা কালিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের ইচ্ছে পুত্র কোন সরকারী উচ্চপদে চাকরী করুক।যতীন্দ্রনাথ রাজকলেজ থেকে এফ. এ. উত্তীর্ণ হয়ে বরোদায় নিজের নাম গোপন রেখে ছদ্মনামে অশ্বারোহী বিভাগে কাজে যোগদেন ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে।

বররোদার রাজ কলেজের অধ্যক্ষ্য তখন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ।সেখানে দুজনের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।যতীন্দ্রনাথ অরবিন্দ ঘোষের কাছে বিপ্লব মন্ত্রে দীক্ষিত হন।তরুন যুবক যতীন্দ্রনাথ অরবিন্দর কাছে অনুরোধ জানান দেশের কাজে নিজেকে নিবেদিত করার সুযোগ করে দেবার জন্য।অরবিন্দ তাঁর সসহোদর বারীন্দ্র কুমার ঘোষের সজ্ঞে যতীন্দ্র বন্দোপাধ্যায়কে

কলকাতায় পাঠান বভিন্ন গুপ্ত সমিতি ও বপ্লবী দলগুলির সজ্ঞে গোপনে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য।
        অরবিন্দ ঘোষের নির্দেশে ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে যতীন্দ্রনাথ কলকাতায় ফিরেএসে চার নম্বর শ্যামাপুকুর লেনে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষনের বাড়িতে অবস্থান করে অনুশীলন সমিতির সজ্ঞে নিজেদেরকে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্তকরে দেন।বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে সজ্ঞেনিয়ে কানাইলাল দত্ত,সত্যেন বসু,উল্লাসকর দত্তদের সাহায্যে মানিকতলার মুরারিপুকুর লেনে এক বোমাতৈরীর কারখানা গড়ে তুলেন,এই কারখানাকেই কেন্দ্রকরেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিখ্যাত মানিকতলা বোমামামলার কাহিনী।
         বজ্ঞভজ্ঞ আন্দোলনের পথনির্দেশিকা প্রদানের জন্য যতীন্দ্রনাথ ও বারীন্দ্রকুমার কল কাতায় আসার জন্য অরবিন্দ ঘোষকে আহ্বান জানান।অরবিন্দ বরোদার কলেজের সাড়ে সাতশত টাকার বেতনের চাকরী ছেড়েদিয়ে কলকাতায় এসে মাত্র পঁচাত্তর টাকার বেতনে জাতীয় কলেজে যোগদেন।যতীন্দ্রনাথ তাঁর তৈরীকরে দেওয়া বাংলা মায়ের একদল দামাল ছেলেকে অরবিন্দের দায়ীত্বে অর্পণ করে গুরু অরবিন্দের মন্ত্র শিষ্য হয়ে বৈপ্লবিক মতাদর্শকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

          এই সময়ে পাঞ্জাবে করবৃদ্ধি ও চন্দ্রভাগা খালের জল কর আইনকে কেন্দ্রকরে বিপ্লববাদী শক্তি বৃদ্ধি পেতেথাকে।যতীন্দ্রনাথ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাঞ্জাবে পৌঁছে সেখানের বিখ্যাত বাবা গুরুদিৎ সিং সাহেবের সজ্ঞে সাক্ষাৎ করে বিপ্লবী দের একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত করেন,যে শাখার অন্যতম সদস্য ছিলেন ভগৎ সিংয়ের পিতা কিশন শিং;এক কথায় যতীন্দ্রনাথ পাঞ্জাবে যেন ' গদর পার্টি 'র বীজ রোপন করে দিয়ে আস লেন।

        এতো কিছুর মধ্যেও যতীন্দ্রনাথের মনের গোপন কুঠিরে মাঝে মধ্যে যেন উদয় হতো এক একেবারে বিপরীত এক জীবনাদর্শন,তিনি যেন এই তীব্র বৈপ্লবিক জীবনের বাইরে আধ্যাত্মিক ভাবনায় মাঝেমধ্যে গভীর ভাবনায় তলিয়ে যেতে লাগলেন।আলমোরাতে অবস্থান কালে আধ্যাত্মিক সাধক শ্রীমৎ সোহহং স্বামীর নৈকট্য যেন যতীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি বদলে দেয়,  সন্যাস গ্রহন করে নামনেন স্বামী নীরালম্ব।

               স্বগ্রাম চান্নায় ফিরে এসে স্বামী নীরাল ম্ব  খড়ি  নদীর তীরে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করলেন একটি আশ্রম।কিন্তু এই আশ্রমটি ক্রমে হয়ে উঠল কলকাতা থেকে বহুদূরে ব্রিটিশ পুলিশের চোখ এড়িয়ে বিপ্লবীদের আত্মগোপন করে থাকার বাংলার এক শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থান।রাসবিহারী বসু,ভগৎ সিং য়ের পিতা কিশন সিং সহ অসংখ্য বিপ্লবীর পদ ধূলি ধন্য এই চান্নার স্বামীনীরালম্বের আশ্রম।

          শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় ১৯২৭খ্রিষ্টাব্দে স্বামী নীরালম্বকে তাঁর অন্যতম শিষ্য শ্রী বিজয় বসন্ত বসাক বরাহ নগরে নিজের উদ্যান বাটিতে চিকিৎসার জন্য নিয়েযান,এই সময় ভগৎ সিং ক লকাতায় ছিলেন,তিনি এসে স্বামী নীরালম্বের আর্শিবাদ গ্রহন করেন।অবশেষে ১৯৩০খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিযুগের ব্রম্ভা নামে বাংলার চরমপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে সম্মানীয় স্বামী নীরালম্ব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

            এ হেন ঐতিহ্যময় চান্না গ্রামের স্বামী নীরালম্বের আশ্রম আজ প্রচারের অন্তরালে।নেই কোন নজরদারি বা রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা।এক বৃদ্ধ সন্যাসী দেখাশুনা করতেন তিনিও গত হ য়েছেন।এ প্রতিবেদককে তিনি প্রায়ই আক্ষেপ ক রে বলতেন,এই আশ্রমটিকে আর হয়তো রক্ষা ক রা যাবে না,আমি মারা গেলে কে আর দেখবে।" আশ্রম সংলগ্ন আদিবাসী  পাড়ার বাসীন্দারাই এখন মূলত তাদের ক্ষুদ্র সাধ্যমতো আগলে রেখেছে এই দেশপ্রেমের ঐতিহ্যময় স্থানটিকে।মাঝে মধ্যে বাৎসরিক অনুষ্ঠান কিছু উৎসাহী ব্যক্তি দ্বারা আয়োজিত হলেও সরকারী ভাবে এ আশ্রমটি অধিগ্রহন না করলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে  যাবে।

8617386904




বাঘারাজাদের ঢিবি

                         ফিরোজ আলী কাঞ্চন

রাঢ়বাংলার মমধ্যমণি বর্ধমান জেলার গলসী এক প্রাচীন জনপদ। এর আগে এ অঞ্চলের মাটির নীচে থেকে একাধিকবার পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন,যেমন মল্লসারুল নামক গ্রামে পাওয়া গেছে বাংলার প্রাচীন তাম্রপট্ট লিপি ' মল্লসারুল লিপি ';এবার থেকে সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে খানোগ্রামে বাঘারাজাদের ঢিবিথেকে প্রাপ্ত আজথেকে প্রায় দুহাজার বছর পূর্বের বিভিন্ন পোড়ামাটির প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন।



গ্রামের যেটা বারোয়ারী খেলার মাঠ সেটা আসলে এক ঢিপি,স্থানীয়রা বলেন বাঘা রাজাদের ঢিপি।আমি ঐতিহাসিক নয়,পেশায় শিক্ষক,নেশা আঞ্চলিক ইতিহাস,লোকায়ত ঐতিহ্য সর্ম্পকে জানা;সেই আগ্রহ থেকেই একদিন পৌছালাম সেখানে,যা দেখলাম  বিস্ময় আর হতাশা যেন চেপে রাখতে পারলাম না।সর্বত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন পোড়া মাটির বিভিন্ন ভগ্ন পাত্রের অংশ। ছোট যে ঢিপি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে  গ্রামবাসীরা তার মাটি অবৈধ ভাবে কেটে নিয়ে ঢিপি টিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে,আর সেই সজ্ঞে সেখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলিকে পুরোপুরি ফেলে,ভেঙে, নষ্ট করে দিচ্ছে।আমার অনভিজ্ঞ দৃষ্টি সে সবের ঐতিহাসিক মূল্য নির্ণয় করতে অক্ষম।সময় নষ্ট না করে কুড়িয়ে নিতে থাকলাম খণ্ডবিখণ্ড পোড়ামাটির বিভিন্ন পোড়ামাটির কালো,লাল,ধূসর বর্ণের পাত্রের অংশ,জি সি পি দিয়ে  প্রায় সাত আট ফুট খাল কেটে মাটি তুলে গ্রামের রাস্তায় দেওয়া হয়েছে,সেই সজ্ঞে যন্ত্রদানবের থাবার আঘাতে ভেঙে চূড়মাড় হয়ে গেছে সে সব পাত্র গুলি।একটি পোড়ামাটির থাম বা পিলারও দেখতে পেলাম।আমার সংগ্রহ করাদেখে উপস্থিত বাসীন্দারা হাসাহাসি করতে লাগলেন," কি সব খুলাংকুচি কুড়াচ্ছেন ",কয়েকটা প্রাণীর হাড়ও পেলাম।
          সংগৃহীত  নিদর্শন গুলির ছবি দেখে বিভিন্ন  প্রত্নতাত্বিক গবেষক গণ এগুলির সময় কাল তাম্রশ্মীয় যুগের,খ্রীষ্টপূর্বাব্দের বলে অনুমান করেছেন।
         চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং তাঁর গ্রন্থে গলসীকে বলেছেন উতু প্রদেশ।জগৎরায় মুগল সম্রাট আলমগীরের কাছথেকে যে ৪৯টি মৌজার জমিদারিত্ব পেয়েছিলেন সেগুলির মধ্যে ' বাঘাপরগনা ' বলে এ অঞ্চলের উল্লেখ ছিল,বহু পূর্বেথেকেই গলসী অঞ্চলে ছিল বাঘারাজাদের রাজত্ব,তাদের রাজবাড়ি ছিল এই খানো গ্রামে।পার্শবর্তী বড়মুড়িয়ে  ও ছোটমুড়িয়ে গ্রামদুটির নাম হয়েছে এই খানোরাজবাড়িকে কেন্দ্রকরেই,বাঘারাজাদের রাজবাড়ি যাবার যেটা প্রধান মোড় সেখানে গড়েউঠা গ্রাম হয়েছে 'বড়োমোড় 'বা বড়োমুড়িয়া,আর যেটা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সেটা হয়েছে ' ছোটমোড় ' বা ছোটমুড়িয়া।
      মধ্যযুগে এই বাঘারাজাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়,  এর বেশী কিছু তথ্য অমিল,এই ঢিপিতে কোন রাজার প্রাসাদ ছিল,কত সাল?সে সব আজ আমাদের উদাসীনতায় অজানা।যেটুকুও অবশিষ্ট আছে সেটুকুও গ্রামবাসীর অসেচতনতায় ধ্বংস হতে বসেছে।

     জানি ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদগুলি এ ভাবে ব্যক্তিগত ভাবে সংগ্রহ করার অধিকার আমার হয়তো নেই,কিন্তু একজন সচেতন নাগরীক হিসেবে গ্রামবাসীর অবহেলা ও সরকারের উদাসীনতায় বাধ্য হয়েছি,আমি সুযোগ পেলে অবশ্যি এগুলি কতৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চাই।সেই সজ্ঞে আবেদন অবিললম্বে এখানে গলসি ব্লক আধিকারিকের উদ্যোগে অবৈধ মাটিকাটা বন্ধকরা হোক,বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালরের ইতিহাস বিভাগ বা রাজ্যপুরাতাত্বিক কতৃপক্ষের পরিদর্শনে এসে এ স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পর্কে নিশ্চিত করুক।
       সাহিত্য সম্রাট বঙ্কইম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালীর ইতিহাস নেই বলে আক্ষেপ করে ছিলেন,সে আক্ষেপ আজো আমাদের রয়েগেল,বাঘারাজার ঢপি আজো তাই হতাশার গভীর অন্ধকারে চাপা।হয়তো এখানে পরশ পাথার নেই,হয়তো বা আছে,তার চেয়েও বড়োকথা বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের পরিপূর্ণতা এগুলির সঠিক তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া অসম্ভব।

মোঃ8617386904
ছবি




পাণ্ডুরাজার ঢিবি
               ফিরোজ আলী কাঞ্চন



আউসগ্রাম থানার ভেদিয়ার নিকট এক প্রাচীন জনপদ পাণ্ডুক গ্রাম,এখানের রাজপোতা ডাঙায় কোন এক কালে ছিল কোন এক পাণ্ডু রাজার রাজবাড়ি, কিন্তু কে এই পাণ্ডুরাজা সে বিষয়ে কোন নিদৃষ্ট ধারনা পাওয়া যায় না।তবে জনশ্রুতি আছে শাক্য বংশীয় রাজা পাণ্ডু সাংসারিক কলহে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কপিলাবস্তু ত্যাগ করে রাঢ় অঞ্চলে এসেছিল রাজধানী স্থাপন করেন,বর্তমান ঢিপি সেই রাজবাড়ির ধ্বংসস্তুপ।
           স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে পাণ্ডু রাজার ঢিবি সম্পর্কে ছিল কৌতুহল ও আগ্রহ।রাখালেরা গরুর পাল নিয়ে চড়াতে এসে মাঝে মধ্যে সন্ধান পেতো কিছু ভাঙা প্রাচীন মাটির পাত্রের। তবে একবার বন্যায় ঐ ঢিবিতে মাটি ধুয়ে উকি দিতে থাকে কয়েকটি স্বর্ণমূদ্রা,হৈ চৈ পড়ে যায় এলাকায়।খবর পেয়ে বি বি লাল মহাশয়ের নেতৃত্বে প্রথম খনন কার্য চালানো হয় ১৯৫৪-৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাপ্ত নিদর্শনের রেডিও কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এখানের সভ্যতা প্রায় চার হাজার বছর পূর্বের,যা সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক।বি বি লাল মহাশয়ের পর পশ্চিমবজ্ঞ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের ডাইরেক্টর শ্রী পরেশচন্দ্র দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানটিতে ১৯৬২-১৯৬৫খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চারবার চারটি পর্যায়ে খনন কার্য চালানো হয় এবং ১৯৮৫তে আরো একবার খনন চালিয়ে এখানে ছয়টি স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়,যার মধ্যে নীচের দুটি স্তর তাম্র প্রস্তর যুগীয়।
         পাণ্ডুরাজার ঢিবি থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছের প্রকৃতি আঁকা স্বর্ণ মূদ্রা,মাতৃদেবীর প্রতিকৃতি, মাটির পিণ্ডে রেশমি বস্ত্রের ছাপ,তামার অলংকার,মৃৎ পাত্র,সিমুল তুলোর বস্ত্রখণ্ড, হাড়ের হাতিয়ার,দুটি বিষ্ণু মূর্তি প্রভৃতি।এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলি থেকে সে সময় কার জনজীবন,জীবীকা,ব্যবসা,খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম ভাবনা সব দিকের একটা সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যায়।
                 ফলে পাণ্ডুরাজার ঢিবি আমাদের সভ্যতার এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিকময় স্থান।কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোন উল্লেখ আমাদের ইতিহাসের পাঠ্যগ্রন্থে পাওয়া যায়না।ঠিক মতো প্রচার পেলে এ স্থান পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদা লাভ করবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------





পাণ্ডুরাজার ঢিবি
               ফিরোজ আলী কাঞ্চন



আউসগ্রাম থানার ভেদিয়ার নিকট এক প্রাচীন জনপদ পাণ্ডুক গ্রাম,এখানের রাজপোতা ডাঙায় কোন এক কালে ছিল কোন এক পাণ্ডু রাজার রাজবাড়ি, কিন্তু কে এই পাণ্ডুরাজা সে বিষয়ে কোন নিদৃষ্ট ধারনা পাওয়া যায় না।তবে জনশ্রুতি আছে শাক্য বংশীয় রাজা পাণ্ডু সাংসারিক কলহে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কপিলাবস্তু ত্যাগ করে রাঢ় অঞ্চলে এসেছিল রাজধানী স্থাপন করেন,বর্তমান ঢিপি সেই রাজবাড়ির ধ্বংসস্তুপ।
           স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে পাণ্ডু রাজার ঢিবি সম্পর্কে ছিল কৌতুহল ও আগ্রহ।রাখালেরা গরুর পাল নিয়ে চড়াতে এসে মাঝে মধ্যে সন্ধান পেতো কিছু ভাঙা প্রাচীন মাটির পাত্রের। তবে একবার বন্যায় ঐ ঢিবিতে মাটি ধুয়ে উকি দিতে থাকে কয়েকটি স্বর্ণমূদ্রা,হৈ চৈ পড়ে যায় এলাকায়।খবর পেয়ে বি বি লাল মহাশয়ের নেতৃত্বে প্রথম খনন কার্য চালানো হয় ১৯৫৪-৫৭ খ্রিষ্টাব্দে। প্রাপ্ত নিদর্শনের রেডিও কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এখানের সভ্যতা প্রায় চার হাজার বছর পূর্বের,যা সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক।বি বি লাল মহাশয়ের পর পশ্চিমবজ্ঞ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক বিভাগের ডাইরেক্টর শ্রী পরেশচন্দ্র দাশগুপ্তের নেতৃত্বে স্থানটিতে ১৯৬২-১৯৬৫খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে চারবার চারটি পর্যায়ে খনন কার্য চালানো হয় এবং ১৯৮৫তে আরো একবার খনন চালিয়ে এখানে ছয়টি স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়,যার মধ্যে নীচের দুটি স্তর তাম্র প্রস্তর যুগীয়।
         পাণ্ডুরাজার ঢিবি থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছের প্রকৃতি আঁকা স্বর্ণ মূদ্রা,মাতৃদেবীর প্রতিকৃতি, মাটির পিণ্ডে রেশমি বস্ত্রের ছাপ,তামার অলংকার,মৃৎ পাত্র,সিমুল তুলোর বস্ত্রখণ্ড, হাড়ের হাতিয়ার,দুটি বিষ্ণু মূর্তি প্রভৃতি।এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলি থেকে সে সময় কার জনজীবন,জীবীকা,ব্যবসা,খাদ্যাভ্যাস, ধর্ম ভাবনা সব দিকের একটা সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যায়।
                 ফলে পাণ্ডুরাজার ঢিবি আমাদের সভ্যতার এক উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিকময় স্থান।কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোন উল্লেখ আমাদের ইতিহাসের পাঠ্যগ্রন্থে পাওয়া যায়না।ঠিক মতো প্রচার পেলে এ স্থান পর্যটন কেন্দ্রের মর্যাদা লাভ করবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------
মোঃ৯১৫৩৭৩৫৩১০
8617386904





            বর্ধমান ১০৮শিব মন্দির

    
                                          ফিরোজ আলী কাঞ্চন

রাঢ় বজ্ঞের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ন বাবহাটের ১০৮ শিব মন্দির।ব বর্ধমানের মহারাজ তিলক চাঁদের দ্বিতীয়া মহিষী বিষ্ণু কুমারী (বিষণ কুমারী)১৭৮৮-৮৯ সালে এই মন্দির গুলি প্রতিষ্ঠা করেন।
                  মহারাজ তিলক  চাঁদ যখন পরলোক গমন করেন তখন তাঁর পুত্র তেজ চাঁদের বয়স মাত্র ৬বছর।মহিষী  বিষ্ণু কুমারী  দিল্লীর সম্রাট সাহ আলমের কাছ থেকে ফর্মান নিয়ে এসে নাবালক  পুত্র তেজচাঁদের পক্ষে থেকে রাজ্য দেখাশুনার কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সজ্ঞে পরিচালনা করতে থাকেন।এক্ষেত্রে বিষ্ণু কুমারী পাশে পেলেন বিশ্বস্ত ও যোগ্যতাবান দেওয়ান রুপ নারায়ণ চৌধুরীর সহযোগীতা।
                কিন্তু একজন বিধবার পক্ষে এতোবড়ো রাজকার্য পরিচালনা করাটা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিল না।একদিকে ব্রিটিশ সরকারের ষড়যন্ত্র,অন্যদিকে কিছু কিছু রাজ কর্মচারীর দুর্নীতি পরায়নতা_সব দিক তিনি সুদক্ষতার সজ্ঞে সামলাতে থাকেন।এদিকে রাজকার্যের মধ্যে ব্যস্ততায় থেকে সন্তানের দিকে তিনি তেমন কোন নজর দিতে পারলেন না।ফলে পিতৃহীন তেজচাঁদ অল্প বয়স থেকেই কুসজ্ঞে পড়ে হয়ে উঠলেন ভোগবাদী, উচ্ছৃঙ্খল  ও লম্পট।বয়স বাড়ার সজ্ঞে সজ্ঞে তা যেন আরো লাগাম ছাড়া মাত্রা পেতে থাকলো।আটজন মহিষী থাকা সত্বেও তিনি বিদেশীনী রক্ষিতা রেখেছিলেন বলে শোনা যায়।
           পুত্রের এই অধঃপতন বিষ্ণুকুমারীকে।ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিল।তেজ চাঁদের মজ্ঞল কামনায়,আশায় তিনি সাধু সন্ন্যাসীদের কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা চায়তে থাকলেন।সাধু সন্তরা পরামর্শ দিলেন,যদি তেজ চাঁদ শ্রদ্ধার সজ্ঞে লক্ষ্য ব্রাম্ভনের পদধূলি যদি গ্রহণ  করতে পারেন তবেই তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটবে,সুমতি হবে,ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাপাবে রাজবংশ ও রাজ্য।ঠিক এই সময় একদিন রাজমাতা।স্বপ্নে।দেখেন তিনি এক সুন্দর মনোরম পরিবেশে আয়তক্ষেত্রারে অবস্থিত সারি সারি মন্দিরে ঘেরা স্থানে যাগযজ্ঞ সহ শিবের পূজার্চনা করছেন।বিষ্ণুকুমারী তাঁর এই স্বপ্নের কথা জানালেন বিশ্বস্ত দেওয়ান রুপ নারায়ণ চৌধুরীকে।
               রুপনারায়ণ চৌধুরীর তত্বাবধানে নবাবহাট সংলগ্ন স্থানে শুরু হলো ১০৮ শিব মন্দির নির্মানের কাজ,সেই সজ্ঞে আরো একটি বেশি ;মোট ১০৯টি।যদিও এই মন্দির গুলি ১০৮শিব মন্দির নামেই পরিচিত।সাধারনত জপমালায় ১০৮টি পুতি বা দানা থাকে,আর একটি অতিরিক্ত দানা থাকে যাকে 'মেরু' বলা হয়।এই পবিত্র জপমালার আদলেই ১০৮ বা ১০৯ টি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বলে অনেকে মনে করেন।মন্দির দ্বারের উপরে শ্বেত পাথরের শিলালিপিতে প্রতিষ্ঠা কাল হিসেবে উল্লেখ আছে_" শ্রীহরি শকাবর ১৭১০সন ১১৯৫,ইং ১৭৮৮সালে.."।
        মন্দির প্রিতষ্ঠার দিন আমন্ত্রন।জানানো হল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষাধিক ব্রাম্ভনকে।রাজমাতার আদেশে তেজ চাঁদ শুদ্ধ বসনে,পবিত্র চিত্তে,ভক্তি ও একাগ্রতার সজ্ঞে প্রতি ব্রাম্ভনের পদসেবা করে সেই পদরজ ব্রাম্ভনগণের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে অনি যত্ন সহকারে রাজ অন্তঃপুরে রেখে দিয়ে এলেন।মন্দির।গুলির মাঝে খনন করা হলো পুষ্করিণী, তার স্বচ্ছ জল, সান বাঁধানো ঘাট।প্রতি মন্দিরের সামনে রোপন করা হলো একটি করে বেল গাছ।আনুমানিক ১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে এই নির্মান কার্য শেষ হয়।মন্দিরে গায়ে কোন টেরাকোটার কাজ নেই।চতুস্কোন আকারের আয়তক্ষেত্রাকারে পরস্পর সংযুক্ত প্রতিটি মন্দিরের আয়তন ১০≠১০এবং উচ্চতা প্রায় ১৫ফুট।
       ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণা চতুদ্দশী তিথিতে শিবরাত্রি উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মেলা বসে।মেয়েরা পতি,পুত্র,স্বামী-স্ত্রীর পুর্নমীলনের কামনায় শিবরাত্রির আগের দিন ক্ষৌরকর্ম করে,নিরামিষে থেকে সারা রাত্রি জেগে চার প্রহরে চারবার পূজা দেয়।প্রথম প্রহরে দুধ,দ্বিতীয় প্রহরে দই,তৃতীয় প্রহরে ঘি ও চতুর্থ প্রহরে মধুদিয়ে শিবকে স্নান করানো হয়।শিবরাত্রির সময়।সাতদিন ধরে চলা এখানের মেলায় বহু দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে,আসে পাশের জনুড়া,আলমপুর,চারুল,মেটেল,গলসী,খেতুড়া প্রভৃতি গ্রামগুলি থেকে বহু মুসলিমও এই মেলার আনন্দ অনুষ্ঠানে এসে সামিল হন।অনান্য সময় শিবের পুজা নিত্য দিন,তবে পূজার প্রশস্ত দিন সোমবার।নৈবেদ্য দেওয়া হয় আতপ চাল,ঘি,গুড় ও কলাই।
            এই ১০৮শিব মন্দির শুধু বর্ধমান নয় সমগ্র বাংলার এক এক ঐতিহ্য ময় স্থান,যা আমাদের গর্বের।


চাঁদ সদাগরের চম্পক নগর
 
                                  ফিরোজ আলী কাঞ্চন


  " চম্পক নগরে বৈসে ছাঁদ সদাগর
       মনসা সহিত বাদ করে নিরন্তর "
                                     কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ

বর্ধমান থেকে গলসি হয়ে জাতীয় সড়ক ধরে পানাগড়ের আগে বুদবুদ বাইপাস থেকে দক্ষিণ দিকে কয়েক কিলোমিটার গিয়েই কসবা,প্রাচীন নগরী চম্পক।মনসামজ্ঞল কাহিনীর চাঁদ সদাগর ও বেহুলা সম্পর্কীত লোকবিশ্বাস আর জনশ্রতিতে এ স্থান খুবই আকর্শনীয় ও বিখ্যাত।
           প্রচলিত আছে চ্যাঙবুড়ি কানি মনসা দ্বারা চাঁদের বাণিজ্যতরী সপ্ত ডিঙা মধুকর ডুবে যাওয়ার পর চাঁদ সদাগর এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেন।এখানে আছে এক শিব মন্দির,জনশ্রুতি পরম শিবভক্ত চাঁদ সদাগর এই রামেশ্বর মন্দিরের প্রায় ৪০ইঞ্চি পরিধির কষ্ঠিপাথরের বিশাল  শিব লিজ্ঞটি স্বয়ং স্থাপন করেছিলেন এবং প্রতিনিয়ত পূজা দিতেন।চাঁদ সদাগরের এই শিব ভক্তির পরিণামের কথা আমাদের জানা।গবেষক দের মতে বেনারস -কাশীর তিলভাণ্ডেশ্বর শিব লিজ্ঞের থেকেও এই অষ্টমুখি লিজ্ঞটি আকারে বড়ো।কাছেই খোলা আকাশের নীচে উন্মুক্ত প্রাজ্ঞনে রয়েছে কিছুটা ভাঙা আর একটি অপেক্ষাকৃত ছোট শিব লিজ্ঞ,নাম বাণেশ্বর শিব।লোক বিশ্বাস রামেশ্বর আর বাণেশ্বর দুই ভাই।এই বাণেশ্বর শিব লজ্ঞটি কালাপাহাড়  দ্বারা ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
               মন্দিরের নিকট আছে এক প্রাচীন বট গাছ,যার মূল কাণ্ড বিলুপ্ত।বিশাল এই বটবৃক্ষ মন্দির ছত্তর অংশকে যেন এক নৈসর্গিকী সৌন্দর্য দান করেছে। মন্দির সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকা ছিল ছাঁদ সদাগরের বসত ভিটে,এখানেই নাকি লখিন্দরের জন্ম।শিব মন্দির থেকে  পূর্ব দিকে কিছুটা দূরে রয়েছে এক উঁচু ঢিপি,প্রচলিত এটাই নাকি ' সাঁতালি পর্বত ',এখানেই নির্মিত হয়েছিল বেহুলার লোহার বাসর ঘর।কিন্তু তবুও শেষ রক্ষা হয়নি, ক্ষুদ্র ছিদ্র পথে প্রবেশ করে মনসার আদেশে লখিন্দরকে দংশন করেছিল কাল নাগিনী।
         বেহুলা মৃতস্বামীর দেহ ভেলায় নিয়ে গাঙুরের জলে ভেসে পৌঁছেছিল ইন্দ্রের সভায়,সেই বিখ্যাত গাঙুর নদীও কসবা সংলগ্ন গলসীর মিঠাপুর,আতুসি গ্রামের উপর দিয়ে আজও তার ক্ষীণাকৃতি আকার নিয়ে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণটুকু টিকিয়ে রেখেছে।বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মনসা মজ্ঞল কাব্যধারার পশ্চিম বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ তাঁর কাব্যে বেহুলার যাত্রাপথের যে বর্ণনা দিয়েছেন সেখানে যে স্থানগুলির নাম পাওয়া যায় সেগুলি এই বর্ধমান জেলার মধ্যেই অবস্থিত,যেমন গলসীর জুজুটি ঘাট,শিল্লা ঘাট,গোবিন্দপুর, মণ্ডল গ্রাম ইত্যাদি।
      ছাঁদ সদাগর ও বেহুলার চম্পক নগর   দেশের যে কোন স্থান তা নিদৃষ্ট করে বলা সম্ভব নয়,এ বিষয়ে কোন বির্তকে না গিয়ে বা এ সব ঘটনা কতদূর সত্য  সে প্রশ্ন দূরে সড়িয়ে রেখে লোকবিশ্বাসে বুদবুদের এই কসবা ভক্তি ও শ্রদ্ধার স্থান রুপে পরিগণিত। প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের সংক্রান্তিতে মনসা পূজা উপলক্ষে এখানে এক মেলা বসে।এছাড়াও সারা বছর ধরে বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি বাইরের রাজ্য থেকেও অনেকে এ স্থান পরিদর্শনে আসেন।শান্ত  পরিবেশে এই স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই মনোরোম।স্থানীয় বাসিন্দা চয়ণ রায়গুপ্ত জানালেন," ঠিক মতো প্রচার পেলে স্থানটি পর্যটন কেন্দ্ররুপে গড়ে উঠতে পারে।"
------------/---/----/--//-///-


                     সাত দেউলিয়া আঝাপুর


           ফিরোজ আলী কাঞ্চন




বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য শিখর বা দেউল,যেগুলির নিজস্ব বৈচিত্র বিশেষত্বের দাবি রাখে।যেমন গৌরাঙ্গপুরের ইছাই ঘোষের দেউল,দেবিপুরের লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির,জৌগ্রামের জলেশ্বর মন্দির,দুর্গাপুরের রাঢ়শ্বর শিব মন্দির,মাইথনের ক ল্যাণেশ্বরী মনন্দির,বরাকরে দামোদর নদের তীরে পাঁচটি দেউল মন্দির ছিল,বর্তমানে চারটি অবশিষ্ট আছে এগুলি একত্রে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির নামে অভিহিত,প্রভৃতি।এই শিখর বা দেউল রীতির মন্দির গুলিকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়--রেখা দেউল,পিড়া দেউল,এবং বেগুনিয়া।আবার দেউল মন্দিরের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন নামে পরিচিত,যথা--প্রথমত ' পিষ্ট ' বা তলপত্তন,এটি মন্দিরের মাটির নীচের ভীত অংশ।দ্বিতীয়ত,  ' বাড় ' এটি পিষ্ট ' র পর থেকে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের উপরের অংশ পর্যন্ত।তৃতীয়ত  ' গঞ্জী ', এই অংশভাগ সবথেকে দৃষ্টিনন্দন ; দেউলের যা কিছু সৌন্দর্য  ও বৈশিষ্ট্যাবলী তা এ অংশেই প্রকাশিত।আর সবের উপরের অংশকে বলা হয়, ' মস্তক '।
            জামালপুর থানার আঝাপুর মৌজার দেউল গ্রাম।নিহার রঞ্জন রায় তাঁর  ' বাজ্ঞালীর ইতিহাস ' গ্রন্থে এ গ্রামকে বলেছেন, ' সাত দেউলিয়া আঝাপুর '। শোনা যায় আগে নাকি এই গ্রামে সাতটি দেউল মন্দির ছিল,আর 'রাজারপুর ' থেকে নাম হয়েছে আঝাপুর।কিন্তু কোন রাজা সে সম্বন্ধে কোন তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে অবশিষ্ট একটি মাত্র মন্দির। উড়িশ্যার রেখ দেউল রীতির, পঞ্চ রথাকৃতি পঞ্চ দ্বারের,কৌনিক খিলানের, প্রায় ৯ফুট প্রস্তে ও ৮০ ফুট উচ্চতার এই অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শনটি খ্রিষ্টিয় নবম-  দশম শতকে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়।
           পোড়া ইটের তৈরি  এই দেউল মন্দিরটি সামান্য হেলানো,এ প্রসজ্ঞে জৌগ্রামের কল্যাণ দাস মহাশয় শুনালেন এক সুন্দর কাহিনী, " আমাদের এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে যে, কোন এক মাতৃইভক্ত রাজা মাতৃ ঋণ শোধ করতে চেয়ে সাতটা মন্দির তৈরী করে দিয়ে মাতাকে বলেন, ' মা, এ মন্দির গুলি তোমাকে দিয়ে আমার মাতৃ ঋণ পরিশোধ করলাম '।পুত্রের এ হেন আচরণে মা অসন্তুষ্ট হলেন, মৃদু হেসে বললেন, ' মাতৃ ঋণ শোধ করা পুত্রের সাধ্যাতীত '।রাজা দেখলেন তার চোখের সামনে একের পর মন্দির ধসে পড়ে যেতে লাগল। তখন তিনি ভুল বুঝতে তেরে মায়ের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন,এবং শেষ মন্দিরটি যেটি ধসে পড়তে যাচ্ছিল সেটি উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে গিতে নিজের কণিষ্ঠ অজ্ঞুলি দিয়ে ঠেলে আটকালেন,মন্দির হেলে পড়তে পড়তে আর পড়ল না,সেই থেকে এই দেউল মন্দিরটি এমন ধারা হেলেই আছে। "

                   ঐতিহাসিকেরা মনে করেন পূর্বে এ স্থানটি ছিল জৈন তীর্থ ক্ষেত্র।পাল যুগের আগে বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,বর্ধমান অঞ্চলে জৈন ধর্ম ব্যপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।এই দেউল মন্দিরের মধ্যে দেখা যায় অষ্টম জিন চন্দ্রপ্রভের শিলামূর্তি ও এক গাছের নীচে দ্বাবিংশ জিন নেমিনাথের পাষাণ বিগ্রহ।দেউলের কাছেই আছে অগর দিঘী নামে এক বিরাট জলাশয়। অনুমান করা হয়ে থাকে হরণ্য দেশ বর্তমানের হরিয়ানার অগ্রোত নামক এক গ্রামের বণিকরা ব্যবসা সূত্রে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল, এদের বলা হতো ' অগর বালা ',এই ব ংশের ই কোন ব্যক্তি এই দিঘী এবং দেউল মন্দিরটি নির্মান করে দিয়েছিলেন।
             ------------++--------+
মোঃ 9153735310

                 

সাময়িক পত্রের ইতিহাসে সজনীকান্ত দাস ও উপেক্ষিত বেতালবন

                                            ফিরোজ আলী কাঞ্চন

বর্ধমান থেকে গলসীর উপর দিয়ে হায়ওয়ে ধরে পারাজ হয়ে শিল্লা রোডে লোয়াপুরের পাশের গ্রাম বেতালবন।এই গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব সজনীকান্ত দাস।কবি,সমালোচক,সাময়িক পত্রের সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের জন্ম সাল ২৫আগষ্ট,১৯০০খ্রিষ্টাব্দ। পিতা হরেন্দ্র লাল যদিও ছিলেন বীরভূমের বাসীন্দা,কিন্তু কর্মসূত্রে পাবনা,দিনাজপুর,বাঁকুড়া,
মালদা  বিভিন্ন স্থানে বারবার বাসা বদল করতে হয়েছিল তাঁদের।১৯১৮তে দিনাজপুর স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করার পর বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ান মিশনারি কলেজ থেকে আইএসসি,কলকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএসসি করে এমএসসি পড়ার সময় 'ভাবকুমার' ছদ্মনামে ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।বাংলা সাহিত্যে ' শনিবারের চিঠি ' ও সজনীকান্ত দাস(১৯২৮-৩২,১৯৩৬-৬২)যেন এক আলোড়ন সৃষ্টি করলো।
                আধুনিক অনেক নাম করা কবি সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত 'শনিবারের চিঠি 'র ব্যজ্ঞবাণের শিকার হলেন।খ্যাতির শীর্ষে থাকা রবীন্দ্রনাথ  থেকে জনপ্রিয় কবি নজরুল কেউই সজনীকান্তের কটাক্ষ্য থেকে রেহাই পেলেন না।রবীন্দ্রনাথের গান,কবিতা,ছবি এমনকি আচরনকেও তীব্র ব্যজ্ঞরসে আক্রমণ হানলেন সজনীকান্ত--প্রকাশ করলেন ' শ্রী চরণেষু ', ' হেঁয়ালী ',' ভ্রান্তি ' র মতো কবিতা।রবীন্দ্রনাথ এতে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন,কিন্তু মনে প্রাণে সজনীকান্ত দাস ছিলেন একান্ত রবীন্দ্র ভক্ত।তাইতো রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি বিশ্বকবির প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলেন
' মর্ত হইতে বিদায় ',কবিতাটি  ১৯৪১ এর বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের শোকসভায় পাঠ করা হয়।
                 তবে নজরুলের উপর সজনীকান্ত দাসের আক্রমন ছিল আরো রূঢ়, ' শনিবারের চিঠি ' পত্রিকায় কাজীনজরুল ইসলামের নাম বিকৃত করে রাখলেন ' গাজী আব্বাস বিটকেল '।নজরুলের বিখ্যাত ' বিদ্রোহী ' কবিতের প্যারেডি করে লিখলেন ' ব্যাঙ ' নামে কবিতা--' আমি ব্যাঙ /লম্বা আমার ঠ্যাং...'ইত্যাদি। ' শনিবারের চিঠি ' ছাড়াও সজনীকান্ত দাস ' প্রবাসী ', ' মডার্ন রিভিউ ', ' দৈনিক বসুমতী 'প্রভৃতি পত্রিকার সজ্ঞে যুক্ত ছিলেন।শনিরঞ্জন প্রেস ও রঞ্জন পাবলিসিং হাউস প্রতিষ্ঠা করেন।এছাড়াও ইনি হয়েছিলেন বজ্ঞীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি,পশ্চিমবজ্ঞ সরকারের পরিভাষা সংসদের সদস্য।
             উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করে সজনীকান্ত দাস লিখেছিলেন ' বাংলা গদ্যের প্রথম যুগ '(১৯৪৬),লিখেছেন ' রবীন্দ্রনাথঃজীবন ও সাহিত্য'।' পথ চলতে ঘাসের ফুল' (১৯২৯),' বজ্ঞ রণভূমে '(১৯৩১), ' রাজ হংস '(১৯৩৫), ' আলো আধাঁরী '(১৯৩৬) ' পঁচিশে বৈশাখ ', ' ভাব ও ছন্দ ',' পান্থ পাদপ ' প্রভৃতি কাব্যের তিনি রচয়িতা;' অজয় ' নামে একটি উপন্যাসও তিনি লিখেছিলেন।এছাড়াও সজনীকান্ত দাস একজন প্রতিষ্ঠিত গীতিকারও ছিলেন,কানন দেবী ও প্রমথেশ বড়ুয়া অভিনীত, নিউ থিয়েটারস প্রযোজিত  'মুক্তি ' সহ তখনকার একাধিক জনপ্রিয় ছবির গীতিকার ছিলেন তিনি;শুধু তাই নয় সজনীকান্ত ফ্লিম সেন্সার বোর্ডের সজ্ঞেও যুক্ত ছিলেন।
         প্রতিভা আর নিজস্বতায় সজনীকান্ত দাস বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী ধারা জন্ম দিয়েছিলেন,কিন্তু দুঃখের বিষয় এ হেন বিখ্যত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান বেতালবন আজ প্রচারের অন্তরালে,জন্ম ভিটে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে ধ্বংসের মুখে,নেই কোন সরকারী উদ্যোগ, এমনকি কোন স্মৃতি স্তম্ভও চোখে পড়ল না।জন্ম ভিটের উপর ভগ্নপ্রায় দালান বাড়িটির যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাতে ঘুটে গোবরের আস্তারনের অন্তরালে হতাসার গভীর অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে আছে শেষ স্মৃতি চিহ্ন টুকু নিয়ে।স্থানীয় গ্রামবাসী ওমকার দত্ত,বাবুলাল মীর্জারা জানালেন,'আমাদের গ্রামে সজনীকান্ত দাস জন্মেছিলেন এটা আমাদের গর্ব,সরকারের কাছে অনুরোধ এ স্থানটি অধিগ্রহন করে রক্ষনাবেক্ষন করুক।' উদাসীনতা আর অবহেলায় বেতালবনে সজনীকান্ত দাসের জন্মভিটে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও সজনীকান্ত বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন চিরটা কাল।
-------------+++--------------------------------------------------------+++---+--------




বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত

              ফিরোজ আলী কাঞ্চন


             জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দিকে জাতীয় রাজনীতিতে প্রাধান্য ছিল মডারেট বা নরমপন্থীদের,এঁরা ব্রিটিশ সরকারে সজ্ঞে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরাধীন দেশবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পুরন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু কার্জনের বজ্ঞভজ্ঞ বিরোধী আন্দোলনের সময় নরম পন্থীদের সজ্ঞে চরম পন্থীদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই দুটি ধারারই ব্যপক প্রভাব বাংলার অনান্য স্থানের সজ্ঞে সজ্ঞে বর্ধমান জেলাতেও পড়েছিল,অনেক তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ স্বাধীনের মহান ব্রতে,তেমনি একজন মহান বিপ্লবী, শহীদ ভগৎ সিং এর সহযোদ্ধা,বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী বটুকেশ্বর দত্ত।
          ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান জেলার খণ্ডোঘোষের নিকট ওঁয়াড়ি গ্রামে বটুকেশ্বর দত্তের জন্ম।মাতা কমলা কামিনী দত্ত,পিতা গোষ্ঠবিহারী দত্তকে রেলওয়েতে চাকুরীসূত্রে সপরিবারে থাকতে হয়েছিল উত্তর প্রদেশের কানপুরে,১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে কানপুর মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন উত্তীর্ণ হন,আর এই সময় পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচার ও শোষণ তাঁর চেতকে গভীর ভাবে উদ্বেলিত করে।বটুকেশ্বর দত্ত সহ যোগেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়,শচীন্দ্রনাথ সান্যাল,রামপ্রসাদ বিলমিস প্রমুখ বিপ্লবীদের মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হল ' হিন্দুস্থান রিপাবলিকান পার্টি '।
               পিতা-মাতা পুত্রের এই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা মেনে নিতে পারলেন না,বটুকেশ্বর দত্তকে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতায় ট্রেলারিং শিখার জন্য(১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ)।কিন্তু এখানেও এই বিপ্লবী মানসিকতার কোন পরিবর্তন ঘটলো না,সংস্পর্শে আসেন কমিউনিষ্ট আন্দোলনের উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তিত্ব মুজাফফর আহমদের,এবং তিনি যোগদান করের ভগৎ সিং,সুখদেব,ভগবতীচরণ ভোরা প্রমুখ বিপ্লবীদের ' নওজওয়ান ভারত সভা ' তে।সংগঠনের পক্ষথেকে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তর উপর দায়ীত্ব অর্পণ করা হলো লাহোরের অত্যাচারী ও ইংরেজ অফিসার স্যাণ্ডারসনকে হত্যা করার,এই কুখ্যাত অ্যাসিস্টাণ্ট সুপারিণ্টেণ্ড সাণ্ডারসনের নেতৃত্বেই দমন পীড়ন করে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ শে অক্টোবর লাহোরে সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে পুলিশি লাঠিচার্জে শ্রদ্ধেয় জননেতা লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়েছিল,তীব্র প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠেছিল দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের মনে,যে করেই হোক উপযুক্ত মোক্ষম একটা জবাব যেন দিতেই হবে।
            ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই ডিসেম্বর,লাহোরের কালেক্টর সাহেবের বাগান বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং বোমার বিষ্ফরণে ও গুলির গর্জনে ক্ষতবিক্ষিত করে দিল অত্যাচারী সাণ্ডারসনের দেহ, পুলিশের চোখ এড়িয়ে নিমিষে উধাও হয়ে দুজনে গিয়ে আত্মগোপন করলেন পাঞ্জাবের খাটকার নামক গ্রামে।কিন্তু এ স্থান নিরাপদ নয়,এদিকে সাণ্ডারসন হত্যা বিট্রিশ পুলিশের কাছে চরম আঘাত হানলো,লাহোর ষড় যন্ত্র মামলা দায়ের করে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তের নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে তন্ন তন্ন করে খোঁজ চালাতে লাগলো বিভিন্ন বিপ্লবীদের গোপন ডেড়াগুলিতে।বটুকেশ্বর দত্তর কানপুরেও পুলিশের গোয়েন্দা নজর রাখছে,পাঞ্জাব,রাজপুতানা,উত্তর প্রদেশের নানা জায়গায় আত্মগোপন করে থেকে দুজনে চলে এলেন বটুকেশ্বর দত্তর দেশের বাড়ি জন্মস্থান ওঁয়াড়িতে,বাংলার দক্ষিণ দামোদরের কোল ঘেষে  নির্জন এই গ্রাম যেন সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী,পরাধীন ভারতের সবচেয়ে দীপ্ত দেশপ্রেমিক বিপ্লবী ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।এ প্রসজ্ঞে বলতে হয় কেন জানিনা আমাদের বর্ধমান জেলার অতীত অনেক কালথেকেই সারা দেশের রাজনৈতিক পটভূমিকার পরিবর্তনকারীদের বারবার আত্মগোপন করে থাকার আশ্রয় স্থান। মুঘল যুগে ফারুক শিয়র, শেরশাহ সহ অনেক ভারতের প্রধান চরিত্ররা এখানে গোপনে কাটিয়ে গিয়েছিলেন,তেমনি আবার চান্নাগ্রামে অগ্নিযুগের ব্রম্ভা স্বামী নীরালম্বের বা যতীন্দ্রনাথের আশ্রমে ব্রিটিশ পুলিশের চোখ এড়িয়ে গোপনে থেকেছিলেন রাসবিহারী বসু সহ অনেক বিপ্লবী। শোনাযায় জরুরী অবস্থার দিনগুলিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে নিরাপত্তার জন্য গোপনে রাখা হয়েছিল পানাগড়ে মেলেটারি ক্যাম্পে।মুঘল যুগে জেলাকে  'শরিফাবাদ ' বলা হতো,অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের বাসস্থান,মহাবীর বর্ধমানের পদধূলি ধন্য এ জেলার এ গৌরব  অখণ্ড বাংলা তথা সারা দেশের মধ্যে একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট বলা যেতে পারে।
         কিন্তু স্বগ্রাম ওঁয়াড়িতে বটুকেশ্বর দত্তর করগেটের চাউনি দেওয়া মাটির দেওয়ালের  পৈত্রিক বাড়িটিও যেন নিরাপদ মনে হলো না,সংবাদ এলো পুলিশ তল্লাসিতে আসছে,বটুকেশ্বর বাড়ির পিছনেই প্রতিবেশী নগেন্দ্রনাথ ঘোষ ও খগেন্দ্রনাথ ঘোষেদের পাতালঘরে নিরাপদে আশ্রয় নিলেন দুই বিপ্লবী। পুলিশ এসেও কোন সন্ধান পেলো না,এ দিকে এই পাতালঘরের গভীর অন্ধকারে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনার ছক সাজিয়ে নিলেন।তিন দিন তিন রাত্রি পাতালঘরে কাটিয়ে পুলিশের ফিরে যাওয়ার পর ভগৎ সিং ও বটুকেস্বর দত্ত ছদ্মবেশে ওঁয়াড়ি গ্রাম ত্যাগ করলেন।
     ১৯২৯ সালের ৮ ই এপ্রিল, পার্লামেন্টে ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে জন নিরাপত্তা বিল ও শিল্প সংক্রান্ত ট্রেডার্স ডিসপিউট বিল দুটি অনুমোদন করেনিতে চায়।এমন সময় দর্শক গ্যালারি থেকে নিক্ষিপ্ত হলো বোমা,ভয়ংকর বিষ্ফরণে কেঁপে উঠল চারিদিক, আইন সভার কক্ষ ধোঁয়ায় ছেয়ে গেল,আর ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্তর কন্ঠে ধ্বনিত হল ভারতের রাজনীতির সেই দীপ্ত।স্লোগান, " ইনকিলাব -জিন্দাবাদ ",সেই সঙ্গে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন বিল্পবীদের ইস্তেহার।বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করলেন ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর।শুরু হলো বিচারের নামে প্রহসন।বিপ্লবীদের পক্ষে আইনজিবী নিযুক্ত হলেন  আসফ আলী সাহেব।দায়রা বিচারক মিস্টার হিলটনের বেঞ্চে যুক্তিপূর্ণ সওয়াল করে আসফ আলী খান জয়ী হলেন,কিন্তু কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিস্টার হিলটন বিনা বিচারে ভগৎ সিং,রাজগুরু ও শুকদেবের ফাঁসী এবং বটুকেশ্বর দত্তর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন।
       ১৯৩০ থেকে পাঁচ বছর আন্দামানের সেলুলার জেলে ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচার সহ্য করতে না পরে বটুকেশ্বর দত্ত অসুস্থ্য হয়ে পড়েন,পরের দু বছর আলমোড়া এবং দিল্লী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাটান,নজরবন্দী অবস্থায় পুলিশের চোখ এড়িয়ে বড়দাদা বীরেশ্বর দত্তর পাটনার বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকতে লাগলেন।১৯৪১ খ্রিষ্টাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বারোবছর পূর্ণ হলে তিনি নিস্কৃতি লাভ করেন।কিন্তু ১৯৪২ এর ভারতছাড়ো আমন্দোলনে আবার তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন,দায়ীত্ব নিলেন বিহারের।আবার তিনি বন্দী হলেন,এদিকে ভারতের রাজনীতিতে তাঁর বন্দীদশাবস্থায় ঘটে যেতে লাগলো বিশেষ বিশেষ পটপরিবর্তন,১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগষ্ট স্বাধীন হলো দেশ,দুঃখের বিষয় তখনো তিনি জেলে, এই বন্দীবস্থাতেই ১৮ই নভেম্বর বড়ো দাদা বীরেশ্বর দত্তর উদ্যোগে বটুকেশ্বর দত্তের বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়,প্রথম প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বিশেষ অনুমতিতে পুলিশি ঘেরাটোপে বটুকেশ্বর দত্তর সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শহিদ ভগৎ সিংয়ের মাতা বিদ্যাবতী দেবী।১৯৪৮ সালে সাজার মেয়াদ শেষ হবার পর তিনি দেওঘরে মেজদাদা বিশ্বেশ্বর দত্তর কাছে স্ত্রী অঞ্জলি দাসকে নিয়ে আশ্রয় নেন,এখানে কিছুদিন কাটানোর পর পাটনায় স্থান্তরিত হন।১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিহারের বিধান পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।কিন্তু শরীর যেন আর টানতে পারলো না,১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ শে জুলাই দিল্লীর ইণ্ডিয়ান মেডিকেল ইন্সিটিটিউডে ভগৎ সিং জননী বিদ্যাবতী দেবীর কোলে মাথারেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগকরলেন।শেষ ইচ্ছা অনু্যায়ী বটুকেশ্বর দত্তর মরদেহ পাঞ্জাবের ফিরোজাবাদে শহীদ ভগৎ সিংয়ের সমাধীর পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধীস্ত করাহয়।
            ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বর্ধমান জেলার ওয়াড়ি গ্রামের এই বীর সন্তানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থেকে যাবে চিরটা কাল
-------------------------------------------------------------

         

        
                 

Monday, May 4, 2020

      যাত্রা পালাকার ও নির্দেশক শ্রী ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়
                        
                          



ঈশাননাগর ঠাকুরের ' অদ্বৈতপ্রকাশ ' গ্রন্থে পাওয়াযায়-' শ্রীনাট মন্দিরে দেখি চৈতন্যের লীলা/অশ্রুনীরে ভাসি দেবী হইলা উতলা'। গবেষকগণ একমত যে গীতগোবিন্দ,শ্রীকৃষ্ণলীলা ও মহাপ্রভুর ভাববিহ্বলিত লীলামাহাত্বের প্রকাশের মাধ্যদিয়েই যাত্রাপালার উদ্ভব। এ সূত্রধরেই ডঃ সুকুমার সেনের অভিমত,' যাত্রা শব্দের মূল অর্থ হইতেছে দেবতার উৎসব উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও উৎসব।'আবার ডঃ অজিত ঘোষ মনেকরেন,' মঙ্গল গান,লোক সঙ্গিত,পালা গান ইত্যাদি নানা ধারা বিবর্তনের মধ্যদিয়া সম্ভবত যাত্রাগানে রুপান্তরিত হয়েছিল।'

   ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেগেছেন,যাত্রায় ' লোক শিক্ষ্যে' হয়।যাত্রাপালা এমন এক মাধ্যম যেখানে একসাথে কয়েক হাজার হাজার একেবারে প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে বিনোদনের মাধ্যমে কোন বার্তা প্রেরণ করতে পারে, অন্য কোন বিনোদনের ধারায় সম্ভব নয়।বাংলার গ্রামে গ্রামে ধান কাটার পর গ্রাম্যকোন মেলা উপলক্ষ্যে কলকাতার পেশাদার যাত্রাপালার দলগুলির আগমন ও বড়ো মঞ্চে,চড়া আলোয়,চারিদিকে ত্রিপলে ঘেরায় হাজার হাজার দর্শক যেন দুচোখ ভরে একেবারে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতো শহুরে রক্তমাংশের চকচকে অভিনেতা-অভিনেত্রিদের কণ্ঠের আভিজাত্য স্বর ও অনবদ্য অভিনয়।মাটিতে বসে বাদাম খেতে খেতে এই কয়েক দশক আগের যাত্রাপালার স্বর্ণযুগের সেই দিনগুলি আজ যেন ইতিহাস।

   বাংলায় যাত্রাপার উদ্ভবের ইতিহাস বহু প্রাচীন।চৈতন্য পূর্ববর্তী যুগে রামযাত্রা,সীতার বনবাস,শিবের গাজন প্রভৃতি কাহিনীর অভিনয়ের প্রথা প্রচলিত ছিল।শ্রী চৈতন্যের কৃষ্ণলীলার ভাববিহ্বলতার মাধ্যমে যাত্রাপালা লোকসমাজে ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভকরে।গবেষকদের তথ্যঅনুযায়ী 'রক্ষিনী হরণ ' নামে এক কৃষ্ণপালায় স্বয়ং চৈতন্যদেব অভিনয় করেছিলেন।অষ্টাদশ শতক থেকে ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত যাত্রাপালায় মূলত ছিল পৌরাণিক কাহিনী নির্ভর,ঊনবিংশ শতকের শেষের দিক থেকে দেশাত্মবোধক কাহিনী যাত্রাপালায় গুরুত্বপেতে থাকে।যাত্রাপালার ক্রমবিকাশের ধারায় ক্রমে প্রবেশ করে ঐতিহাসিক,সামাজিক,রাজনৈতিক কাহিনীর।

    দুঃখের বিষয় যে যাত্রাপালায় পেশাদার যাত্রাদলের মাধ্যমে একটা সময় বাঙালীর কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থানে অবস্থান করেছিল,বর্তমানে যাত্রাপালার সেই স্বর্ণযুগ আর নেই।এখন বিনোদনের নানান মাধ্যম,যাত্রাপালার প্রাণকেন্দ্র যে প্রান্তিক গ্রামগুলি,সেখানেও আজ আধুনিকতার ছোঁয়া।কলকাতায় যে কটি পেশাদার দল টিকে আছে সেগুলির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন,গ্রামাঞ্চলে এমেচার যাত্রাদল গুলি শুধু শখের বসে আর যাত্রাপাগল কিছু মানুষের যাত্রার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় নিজেদের 'জেদ' বজায় রেখে আজও গ্রাম্যঅনুষ্ঠান গুলিতে যাত্রাপালার আয়োজন করেথাকে,তবে পোশাকের খরচ,মহিলা অভিনেত্রীর অভাব বা নতুন প্রজন্মের উদাসীনতায় এই প্রচেষ্টা এখন খুবই বাধা বিপত্তির মধ্যেও নিজেদের ধরে রেখেছে।এমেচার যাত্রাপালার পোশাক,বাদ্যযন্ত্র বা মহিলা অভিনেত্রী যোগানদেয় যে সংস্থাগুলি সেগুলিও যেন ধুকছে।হয়তো এভাবে চলতে থাকলে আর কয়েক প্রজন্ম পর লোকনাট্যের এই ঐতিহ্যময় ধারাটি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

         বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার ধারাকে যিনি জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন এবং বাংলার সমস্ত সুধী যাত্রামোদী অভিনেতা,পরিচালক এবং দর্শকদের কাছে যিনি যাত্রাপালার ধারায় সরস্বতীর বরপুত্র,সেই অতি সুপরিচিত বিখ্যাত পালাকার শ্রী ভৈরব নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে নবেম্বর বর্ধমান জেলার মুলগ্রাম নামক গ্রামে।ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের যাত্রাজগতে প্রবেশ 'নাচমহল ' পালা রচনার মাধ্যমে,তারপর আর কলম থেমে থাকেনি,একের পর এক তিনি যাত্রামোদী বাংলার দর্শক ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের  উপহার দিয়েগেছেন বিখ্যাত বিখ্যাত সব যাত্রাপালা।

               সামাজিক,ঐতিহাসিক,পৌরাণিক সব ধারার পালাতে ভৌরবগঙ্গোপাধ্যায়ের ছিল অবাধ বিচরণ।সামাজিক নাটক গুলিতে প্রতিফলিত হয়েছিল সমাজের দর্পণ,এই পর্যায়ের বিখ্যাত নাটক গুলি হলো -' দেবী-সুলতানা ', 'লক্ষ্মীর পদচিহ্ন ', ' এক পয়সার মা ',পাঁচ পয়সার পৃথিবী ',' কান্না ঘাম রক্ত ','ময়লা কাগজ ', 'মা-মাটি-মানুষ ', ' ঘুম নেই', ' ভগবান বাবু ',' পদধ্বনি ','রক্তে রোয়া ধান ','জানোয়ার ','পরশপাথর ' ইত্যাদি।ঐতিহাসিক যাত্রাপালাগুলিতে ইতিহাসের কাহিনীর সাথে কল্পনার মিশ্রনে জাতীয়তাবোধ,দেশপ্রেম,ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘটিয়েছেন।দ্বন্দ্বের টানাপোরেনে ঐতিহাসিক পালাগুলি হয়েউঠেছে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ।' বাঁদী লালবাঈ','বেগম আশমানতারা','দেবী মালিনী ','ফেরারী বান্দা' ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত ঐতিহাসিক যাত্রাপালা।পৌরাণিক যাত্রাপালার মধ্যে উল্লেখ্য-'শাপ মুক্তি','স্বর্গ হতে বিদায় '।তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের 'গণদেবতা ' উপন্যাসকে তিনি যাত্রাপালার রুপ দিয়েছিলেন এছাড়াও ' অচল পয়সা','ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ','বৌ হয়েছে রঙের বিবি','স্বর্গের পরে স্টেশন','পালকি ভাঙা বৌ','চিড়িতনের বিবি' প্রভৃতি যাত্রাপালার নামগুলি আজো গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।
                আধুনিক যাত্রাপালার রুপকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৮খ্রিষ্টাব্দে২৮শে ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।ভৌরব গঙ্গোপাধ্যায়ের পুত্র দেবদূত গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন,' পিতার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যেন একটা স্বর্ণালী যুগেরও অবসান ঘটলো।'সত্যিই তাই একাধারে পালাকার,নির্দেশক,গীতিকার, সুরাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের শূণ্যতা যেন আর পূরণ হবার নয়।বাংলার যাত্রামোদী সুধী সমাজের মনের মণিকোঠায় ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় অমর হয়ে থাকবেন চিরটাকাল।






       

ছবি
(ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দুটি ইনার পুত্র দেবদূত গঙ্গোপাধ্যায়ের সৌজন্যে প্রাপ্ত)
ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় এর মূল গ্রামে মূর্তি ও, মূলগ্রামে পালাকারের বসতভিটে

Saturday, May 2, 2020


অবিভক্ত বাংলায় প্রথম কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন বর্ধমানের মহারাজা

       



   বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ মহতাব যেমন ছিলেন সুদক্ষ শাসক, তেমনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী ও প্রচণ্ড জনদরদী;সেই সঙ্গে  শিক্ষাদান ব্যবস্থায় আধুনিক প্রগতিশীল পরিকল্পনায় তিনি আবিভক্ত বাংলায় প্রথম কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপনকরে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

      মোগল যুগ থেকে ইংরেজ আমল পর্যন্ত  হিন্দুস্থানের কেন্দ্রীয় শাসকদের সঙ্গে সর্বদা বর্ধমানের মহারাজাদের ছিল খুবই সুসম্পর্ক।পাঞ্জাবের লাহোরের কম্বল ব্যবসায়ী সঙ্গম রায় পুরীর তীর্থযাত্রা হতে ফেরার পথে বর্ধমান শহরের নিকট বৈকুন্ঠপুরে বসতি স্থাপন করেন ও ব্যবসা শুরু করেন।সঙ্গম রায়ের পৌত্র আবুরাম রায় দিল্লীর সম্রাট শাহজাহানের সৈন্যরা ঢাকায় বিদ্রোহ দমন করতে যাওয়ার পথে বর্ধমানে পৌঁছালে রসদ যোগানদিয়ে সহযোগিতা করেন,যার প্রতিদানস্বরুপ সম্রাট ফরমান জারি করে আবুরাম রায়কে চার হাজারী কতোয়াল এবং মুনসেফদারী পদ প্রদান করেন।পর্যায়ক্রমে এই পাঞ্জাবি বণিক পরিবারের বংশধরগণ দিল্লীর সম্রাটদের নিকট হতে জমিদারী ক্রয় করে নেন ও কীর্তিচাঁদের পুত্র চিত্রসেন রায় ' রাজা ' উপাধি প্রাপ্ত হন।
                   পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ কোম্পানী বর্ধমানের খাজনা আদায়ের দাবি জানালে তৎকালীন বর্ধমানের রাজা অপুত্রক চিত্রসেনের খুল্লতাত মিত্রসেনের পুত্র তিলকচাঁদ রায় কোম্পানীর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।কিন্তু পরাজয় অবসম্ভাবী বুঝে তিনি সন্ধি করতে বাধ্য হন এবং আনুগত্য স্বীকার করে নিয়ে কোম্পানীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজ্যপাট টিকেয়ে রাখেন।এ ভাবে পরবর্তীতে বহু বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে-কখনো রাজনৈতিক অস্থিরতায় অস্ত্বিত্বের সংকট,কখনো বিদ্রোহ,যুদ্ধ,একাধিক মৃত্যু শোক,কখনো একেবারে রাজ অন্ত্য পুরে প্রবেশ করে শত্রুদের ধ্বংস ও হত্যালীলা,কখনো বা রাজ পরিবারের মধ্যেই ষড়যন্ত্র, একাধিক মামলা- মকদ্দমা প্রভৃতি বিপত্তির মধ্যদিয়েও দীর্ঘ সময় ধরে বর্ধমান বাসীকে সুশাসন দিতে সক্ষম হয়েছিল।বর্ধমান রাজাগণ বিভিন্ন রাজত্বে গ্রহন করেছিলেন একাধিক জনদরদী নীতি, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অসংখ্য নান্দনিক সৌন্দর্য মণ্ডিত মন্দির,স্থাপত্য।পৃষ্ঠপোষকতা করেগেছেন অসংখ্য কবি,সাহিত্যিক এবং জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠানের।
      মহারাজাধিরাজ বাহাদুর আফতাব চাঁদ(১৮৮১-১৮৮৫)ছিলেন আপুত্রক,তাঁর মৃত্যুর পর রাজকার্য পরিচালনা করতেন বিশ্বস্ত দেওয়ান বনবিহারী কাপূর।বিধবা মহিষী দত্তক নিলেন বনবিহারীর একমাত্র পুত্র বিজন বিহারী কাপূরকে,যিনি নতুন নাম গ্রহন করেন বিজয়চাঁদ মহাতাব এবং ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ অক্টোবর আইনি বাধা অতিক্রম করে মহা সমারোহের সাথে শাসনভার গ্রহন করেন।বিজয়চাঁদ হয়ে উঠলেন প্রজাদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠান  উপলক্ষ্যে বা দুর্বিক্ষে দীন দরীদ্র অসহায় প্রজাসাধারণকে অকাতারে বিতরণ করতে লাগলেন চাল ও বস্ত্র।এ হেন জনদরদী ও প্রজাহিতৈসী মহারাজাধিরাজের দৃষ্টি ভঙ্গি,  কার্য প্রণালী ও পদক্ষেপ গুলি যে কল্যাণকর হবে তা স্বাভাবিক।
     ১৮৮২ সালে ভারতের শিক্ষ্যা কমিশন দেশের শিক্ষ্যার মানের করুণ চিত্র তুলে ধরেন যে প্রচলিত ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের পরও সে শিক্ষ্যা শুধুমাত্র সরকারী চাকরী পাবার যোগ্য,তা জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলি সমাধান করতে অক্ষম। বড়োলাট লর্ড কার্জন শিক্ষ্যা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে অবস্থার উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয়েছিলেন।কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে পুনর্গঠন ও নিয়মিত পরিদর্শনের আদেশ দেন এবং স্কুল কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটান।তবুও অবস্থার তেমনকোন উন্নতি ঘটলো না।সারাদেশের সাথে বাংলারও ছিল একই সমস্যা,প্রথাগত পুঁথি নির্ভর শিক্ষ্যাব্যবস্থা শিক্ষ্যার্থীর চাকরী ছাড়া অন্যকোন কাজে লাগেনা,তা উপলব্ধি করে  সমস্যা সমাধানে হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষ্যার প্রচলনে প্রথাগত শিক্ষ্যা ব্যবস্থার বিকল্প আধুনিক শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে সারা বাংলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাব,যেটি বর্তমানে ' মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ ইনস্টিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড টেকনোলজি' নামে পরিচিত।বর্ধমান মহারাজা প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি অখণ্ড বাঙ্গের প্রথম কারিগরি বিদ্যালয়। স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত সারা বাংলায় কারিগরি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি,এগুলির মধ্যে আমাদের বর্ধমানেরটিই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন,বাকী তিনটি ছিল ঢাকা,রাজশাহী ও পাবনায়।দেশ স্বাধীন হলে দুটি চলেযায় ওপার বাংলায়,এপার বাংলায় রয়ে যায় বিজয়চাঁদ প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি। 

      প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য মহারাজ বিজয়চাঁদ পাশ্চাত্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন,তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপ পরিভ্রমণ করেছেলিন, সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন-' ডায়েরি অফ অ্যান ইউরোপীয় ট্যুর ' নামে একখানি গ্রন্থ।আধুনিক শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা,সমাজসেবা ও সাহিত্য সংস্কৃতি মূলক আয়োজনে বিজয় চাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা বাংলা তথা সারা দেশে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল।১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন বিজয়চাঁদের উদ্যোগে বর্ধমানে আয়োজিত হয়।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতে তিনি অনুদান দেন,শুধু তাই নয় কলকাতা চিড়িয়াখানায় তাঁর অনুদান সুবিদিত। এছাড়াও তিনি রাঁচিতে আর্ট কলেজ নির্মাণ করে দিয়েছিলেন।১৯০৪খ্রিষ্টাব্দে গর্ভনর জেনারেল লর্ড কার্জনের বর্ধমান আগমন উপলক্ষ্যে  নির্মাণ করেছিলেন ' কার্জন গেট ',যা বর্তমানে ' বিজয় তোরন ' নামে মূল শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যময় স্থানরুপে বর্ধমানের গরিমা বৃদ্ধি করেআছে।বিজয় চাঁদের আর এক মহান কীর্তি ১৯০৭খ্রিষ্টাব্দে 'ফ্রেজার হসপিটাল ' প্রতিষ্ঠা, যা গ্রামীন স্বাথ্য পরিসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।এই হসপিটাল প্রতিষ্ঠায় তিনি তখনকার দিনে এক কালীন  ৮০হাজার টাকা এবং বার্ষিক সাড়ে বারো হাজার টাকা অনুদান দেন।তৎকালীন বাংলার গভর্নরের এনড্রু ফ্রেজারের নাম অনুসারে তিনি হসপিটালটির নাম করণ করেছিলেন,এই ফ্রেজারকে একবার তিনি কলকাতার এক মিটিং হলে এক সংগ্রামী বিপ্লবীর ছোড়া গুলিথেকে প্রাণে বাঁচিয়ে ছিলেন,সেই থেকে সখ্যতা গভীর হয়েছিল।এছাড়াও ১৯৮১ সালে বিজয়চাঁদ চালু করেছিলেন ' রোনাল্ডসে মেডিক্যাল স্কুল ',এ খানে চিকিৎসকদের প্রসূতিসেবার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো,স্কুলটি চালু ছিল ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। 
   বিজয়চাঁদ প্রতিষ্ঠিত বাংলার প্রথম কারিগরি প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান নাম ' এম.বি.সি.ইনস্টিটিউট-অব ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড টেকনোলজি ',১৮৯৩খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে যখন শহরের পুরাতনচক এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি প্রথম গড়ে উঠেছিল তখন নাম ছিল ' ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড টেকনিক্যাল স্কুল অব বর্ধমান '।তার পর একাধিকবার স্কুলটির অবস্থান পরিবর্তন ঘটে,পুরাতন চক থেকে উঠে যায় সদর থানার সামনে যেখানে এখন উদয়চাঁদ গ্রন্থাগার আছে সেখানে,ওখান থেকে উঠে আসে বর্তমান অবস্থানে সাধনপুরে মহারাজদের অতিথিশালা ' ডি বার্জ ' হাউসে।
   বিজয়চাঁদের কারিগরি শিক্ষা প্রচলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রজাসাধারণের সন্তানেরা যাতে আধুনিক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হতেপারে।এই কারিগরি প্রতিষ্ঠানটির ব্যায়ভার বহন করতেন বিজয়চাঁদ,আর কিছু অর্থ অনুদান দিত বেঙ্গল গর্ভমেন্ট, ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড ও মিউনিসিপালিটি। বর্ধমান গবেষক নীরদবরণ সরকারের 'বর্ধমান রাজ ' গ্রন্থ হতে জানাযায় এই কারিগরি বিদ্যালয়ে প্রবেশের শিক্ষাগত প্রাথমিক যোগ্যতার মান ছিল এম.ই.(ষষ্ঠ শ্রেণি)।প্রথমদিকে ছাত্র সংখ্যা ছিল খুবই অল্প।এই স্কুলে ১৯২৮খ্রিষ্টাব্দে চালু করা হয়েছিল চার বছরের জুনিয়র মেকানিকাল পাঠক্রম।
      প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সহজ,বরং তা পরিচালনা করা কঠিন।১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিজয়চাঁদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিদর্শনের জন্য এক কমিটি গঠন করেন,কোন স্কুল কলেজের শিক্ষাদানের মানের অবনমনের সংবাদ পেলেই তিনি পরিদর্শন কমিটির অনুসন্ধান তথ্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করতেন।একবার তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির গুণগত মানের যাচাইয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে জেলার পুরো শিক্ষাকাঠামোটাই বদলে ফেলতে চেয়েছিলেন।বয়স্ক প্রধান পণ্ডিতদের অবসর দিলেন,নবীন শিক্ষকদের কড়াভাবে সচতেন করলেন।যেসব অধ্যক্ষরা অযোগ্যবলে বিবেচিত হলেন তাঁদের বিদালয়ে বদলি করলেন এবং বিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষকদের অধ্যাপক পদে পাঠালেন।রাজস্কুলের পড়াশুনার মান সবচেয়ে নীচে নেমে গিয়েছিল,এ নিয়ে মহারাজ অসন্তুষ্ট প্রকাশ করলেন।শুধু তাই নয়,তিনি অভিভাবক ও ছাত্রদেরকেও সতর্ক করেন।যে সব বিদ্যালয় অবৈতনিক ছিল সেগুলিতে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করলেন,যুক্তি ছিল পয়সা খরচকরে পড়লে ছাত্র ও অবিভাবদের ভালো ফল করার তাগিদ থাকবে,সেই সঙ্গে বিজয়চাঁদ পুরস্কার স্বরুপ যে ছাত্ররা খুব ভালো ফল করবে তাদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এবং যারা মাঝারি ফল করবে তাদের অর্ধবেতনে পড়ার সুযোগ দিলেন।শিক্ষার প্রসারে ও শিক্ষার মানের উন্নতি সাধনে বর্ধমান মহারাজের এ সব নতুন ধরনের চিন্তা ভাবনা, পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
     মহারাজের তত্বাবধানে পরিচালিত টেকনটিক্যাল স্কুলটিতে প্রথমদিকে পড়ানো হতো তিন বছরের ' আর্টিজেন কোর্স ',ছিল লোয়ার সাব অর্ডিনেট পাঠক্রম,চালু হয়েছিল সাব ওভার সিয়ার পাঠক্রম।ক্রমে ' ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড টেকনটিক্যাল স্কুল অব বর্ধমান ' এর খ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে,১৯৪৪খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গর্ভনর মিঃ ক্রেসী সে কথা স্বীকার করেছিলেন।দেশ স্বাধীনের পর১৯৫০খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠাটি সাধনপুরে স্থান্তরিত হয় এবং নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'মহারাজাধিরাজ বিজয়চাঁদ ইনস্টিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড টেকনোলজি '।১৯৭৭খ্রিষ্টাব্দে এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বিকৃতী পায়।বর্তমানে ডিপ্লোমা স্তরের এই টেকনিক্যাল কলেজটি কেন্দ্রের ' অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন' অনুমোদন প্রাপ্ত। এভাবে ১২৫ বছর অতিক্রম করে বর্ধমানের মহারাজাধিরাজ প্রতিষ্ঠিত অবিভক্ত বাংলার প্রাচীন এবং স্বাধীন ভারতে পশ্চিম বঙ্গের সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ' এম.বি.সি. ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড টেকনোলজি ' কলেজটি বর্তমানে পূর্ব ভারতের অন্যতম কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুপে বিবেচিত।

---------------------------------------

সংযোজন ঃ আফতাবচাঁদ মহাতাব ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বর্ধমানের রাজ সিংসনে বসেন,১৮৮১ তে সাবালক প্রাপ্ত হয়ে রাজ্যভার গ্রহণ করেন।খুব অল্পকাল ছিল ইনার সময়সীমা।১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ ২৫ শে মার্চ ইনার মৃত্য হয় অপুত্রক অবস্থায়।
      মহারাজের বিধবা পত্নী দত্তক নেন বিজয়চাঁদ মহাতাবকে,বিজয় চাঁদের জন্ম ১৯ অক্টোবর ১৮৮১।মৃত্য ২৯ আগষ্ট ১৯৪১
       ১৮৯৩ এর এপ্রিলে বিজয়চাঁদ পুরাতন চকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ' ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড টেকনিক্যাল স্কুল অব বর্ধমান '--এটিই বাংলার প্রথম ও একমাত্র কারিগরি বিদ্যালয় ছিল
         এই প্রতিষ্ঠানটি পরে প্রথমে সদরত থানার সম্মুখে ও পরে সাধনপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে বিজয়চাঁদের নামে রুপান্তরিত হয়।
তথ্যসূত্রঃ
 ★বর্ধমান রাজ ইতিবৃত্তঃশ্রী নীরদবরণ সরকার
★বর্ধমান রাজ ঃ আব্দুল গণি খান
★বর্ধমান চর্চা ঃ বর্ধমান অভিযান গোষ্ঠী 

      

   

     
    






         অরণ্যসুন্দরী ভাল্কি মাচান
     
                                                   ফিরোজ আলী কাঞ্চন

গ্রীষ্মের ধূ-ধূ ধরন হোক বা শীতের হালকা রোদ্দুরের কোমল আমেজ অথবা বর্ষার বৃষ্টিধোয়া সবুজের সমারোহে ;সব ক্ষণে সব ঋতুতে আমাদের সুদূর পিয়াসী মন পেতে চায় প্রকৃতির স্পর্শ,প্রবেশ করতে ইচ্ছে করে গভীর গহনে; তা একাকী নির্জনে হোক বা প্রিয়জন-পরিবারের সাথে। সেই আহ্বানেই একদিন দেখে আসতে পারেন শান্ত নির্জন প্রকৃতির মধ্যে পাখিদের কলতান আর শাল,পিয়াল গাছালির সারির গভীরের নিস্তব্ধ পরিবেশে মোড়া পূর্ব বর্ধমান আউসগ্রাম থানা অঞ্চলের অরণ্যসুন্দরী ভালকি মাচান।প্রাচীন এই জঙ্গলকে নিয়ে স্থানীয় গ্রামগুলির জনগণের মধ্যে প্রচলিত আছে অদ্ভুত সব রোমাঞ্চকর রূপকথা।
            জঙ্গল নিকটস্থ প্রাচীন জনপদ অমরারগড় ছিল গোপ রাজাদের রাজধানী। লোকশ্রুতি এই গ্রামের এক পূর্ণগর্ভা সদগোপ মহিলা জঙ্গলের ধারে এক পুকুরে জল আনতে গিয়ে ভাল্লুকের দ্বারা আক্রান্ত হয়,ভাল্লুক গগর্ভবতী মহিলাকে টেনে নিয়ে যায় বনের মাঝে নিজের বাসায়;সেখানে সে মহিলাটিকে ভক্ষণ করে,সেই সজ্ঞে গর্ভবতী মহিলাটির শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়।ভাল্লুকটি কিন্তু সেই শিশুর কোন ক্ষতি করে না।পরেরদিন এক ব্রাম্ভণ জজ্ঞলের সেই পথ ধরে যাচ্ছিলেন।হঠাৎ ঝোপের আড়ালথেকে শিশুর কান্না শুনে তিনি থমকে দাঁড়ালেন।সর্তপনে এগিয়েগিয়ে দেখলেন এক সদ্যজাত,পরম  মমতায় বুকে তুলে এনে তিনি সেই শিশুটিকে বাড়ি ফিরে এসে গিন্নির আঁচলে তুলেদিলেন।ব্রাম্ভনের স্ত্রীর কোন সন্তানাদি ছিল না,তাই তার মাতৃস্নেহ যেন উথলে উঠল।ব্রাম্ভনীর কাছেই বড়োহয়ে উঠল ছেলেটি।ভালুকের বাসাথেকে পাওয়া গেয়েছিল বলে এর নাম রাখাহয়েছিল ভাল্লুপাদ।এই ভাল্লুপাদ পরে এই অঞ্চলের রাজা হয়েছিল,ইনি ছিলেন গোপ রাজাদের পূর্বপুরুষ। 'পাদ ' অর্থ পূজনীয়,চর্যাপদের কবিদের নামে শেষে যেমন 'পাদ ' থাকে সেই অর্থে।
       আবার অনেকে বলেন এক ভাল্লুকী এই জজ্ঞলের মধ্যে এক মানব সন্তান কুড়িয়ে পায় এবং সে মাতৃস্নেহে শিশুটিকে বড়ো করে তুলে।পূর্ণ বয়েসে শুশুটি হয়েউঠল ভাল্লুকের মতো বীর ও শক্তিশালী। ভাল্লুকের স্তন্যপানে শিশুটি বড়োহয়ে উঠেছিল বলে নাম হয়েছিল ভাল্লুপাদ,এবং পরে তিনি এই অঞ্চলের রাজা হয়েছিলেন ও এক সদগোপ কণ্যাকে বিবাহ করেছিলেন। আবার অন্যমতে ভাল্লুপাদর পা গুলোছিল ভাল্লুকের পায়ের মতো,ইনি ছিলেন রাজপুত সন্তান।বিকৃত পা নিয়ে জন্মানো এমন সন্তান কে তার পরিবারের লোকেরা লোকলজ্জার ভয়ে জঙ্গলে ফেলেদিয়ে আসে এক ভাল্লুকের গর্তে।কিন্তু এক নিঃসন্তান ব্রাম্ভন শিশুটিকে কুড়িয়ে পেয়ে বাড়ি নিয়ে এসে লালন পালন করেন।
          প্রকৃত ঘটনা যা হোক না কেন,এই জজ্ঞলে এক কালে যে প্রচুর পরিমানে ভাল্লুকের বাস ছিল এ কথা নিশ্চিত।বর্ধমানের মহারাজেরা এই জজ্ঞলে ভাল্লুক শিকার করতে আসতেন।আজো এখানে দেখতে পাবেন একটা পোড়া ইটের তৈরী ভগ্নপ্রায় টাওয়ার বা মাচা,যা এ জজ্ঞলের এক বাড়তি আকর্ষণ।এই মাচার নীচে আছে এক সুড়ঙ্গ, জনশ্রুতি এই সুড়ঙ্গের সঙ্গে নাকি বর্ধমানে শাহাচেতনপুরের শের আফগানের সমাধির নিকট অবস্থিত সুড়ঙ্গ পথের যোগাযোগ রয়েছে।আসলে প্রাচীন যুগথেকে মাটির নীচে সুড়ঙ্গ পথের একটা যোগ বর্ধমান জেলায় পাওয়া যায়,দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের নিকট ভবানীপাঠক দেবীচৌধুরানী পূজিত মন্দিরের নিকটেও এক সুড়ঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়,এগুলি কোন একসূত্রে যুক্ত কিনা তার কোন অনুসন্ধান এখনো পর্যন্ত হয়নি।


অরণ্যসুন্দরী ভাল্কি মাচানের গভীর নিস্তব্ধতায় প্রাকৃতিক পরিবেশের মনোরম সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।প্রতিবছর শীতকালে এখানে পিকনিক করতে দূর দূরান্ত থেকে আসে পর্যটকদের দল।মাচানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে নির্মিত হয়েছে একটি পার্ক,মাচানের প্রবেশমুখে প্রতিষ্ঠিত এক ভাল্লুকের মূর্তি,যদিও এখন আর ভাল্লুকের দেখা মেলেনা।পার্কের মাঝে এক বড়ো দিঘী,এখানে বোটিংয়ের ব্যবস্থা আছে।হরেক ফুল আর ঝাউগাছের সারিদিয়ে ঘেরা দিঘী এ অরণ্যের মাঝে যেন এক আলাদা নৈসর্গিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে।এ অঞ্চলের বিরাট বনভূমি যেন শহুরে ইঁট পাথরের ব্যস্তময় একঘেয়েমি জীবনের নিকটেই এক টুকরো সবুজের সমারোহ,বনের মাঝে আবার আছে বিভিন্ন ছোট ছোট আদিবাসীদের গ্রাম।জঙ্গলে শালপাতা আর শুকনো কাঠ কুড়িয়ে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করে।

যে কোন ছুটির সময়ে আপনার সেরা গন্তব্য হতেপারে অরণ্যসুন্দরী ভালকি মাচান,আর রাত্রের নিঝুমে জজ্ঞলের শ্বাস প্রশ্বাসকেও যদি উপলব্ধি করার ইচ্ছে হয় তার জন্যে আছে'অরণ্যসুন্দরী রিসর্ট '। 
    ভাল্কি মাচান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে যমুনা দিঘী,আর এক পর্যটনক্ষেত্র।রাজা মহেন্দ্রনারায়ণ ও তাঁর স্ত্রী অমরাবতীর ছিল এক পুত্র যোগেন্দ্রনাথ এবং দুই কন্যা যমুনাবতী ও শৈবালিনী।রাজা মহেন্দ্র তাঁর স্ত্রী কন্যাদের খুব ভালোবাসতেন ও স্নেহ করতেন।স্ত্রী অমরাবতীর নামে তিনি তাঁর রাজধানীর নামকরণ করেছিলেন 'অমরারগড় ',এবং এই অমরারগড় গ্রামের নিকট দুইখানি বড়ো দিঘী খনন করেদিয়ে প্রজাদের কৃষিকার্যের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।প্রজাহিতৈষি মহেন্দ্র নারায়ণ এই দিঘীদুটির নাম দিয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যার নামে-যমুনাদিঘী ও শৈবালনী দিঘী যা অপভ্রংশ হয়ে 'শ্যাওলা দিঘী ',বর্তমানে দুটি দিঘীই একত্রে 'যমুনাদিঘী ' নামে পরিচিত।এই দিঘীদুটিকে কেন্দ্রকরে পশ্চিম্বঙ্গ সরকারের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে মৎস্যপালন দপ্তর ও পর্যটন ক্ষেত্র।এখানে গেলে পাবেন হরেক রকমের টাটকা মাছের বিভিন্ন পদ গ্রহণের সুযোগ।
    রাত্রিবাসের জন্য বেছেনিতে পারেন ভাল্কি মাচানের অরণ্যসুন্দরী গেস্ট হাউস,যোগাযোগঃ০৩৪৫২-২০০৬০৪ অথবা যমুনাদিঘী আম্রপালি গেস্ট হাউসেও থাকতে পারেন।কলকাতায় বিকাশ ভবনের স্টেট ফিসারিজ ডেভলপমেন্ট করপোরেশনের অফিস থেকে এখানে থাকার যোগাযোগ করা যায়।হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন নিকটেই দোকরাশিল্পের জন্য বিখ্যাত গ্রাম দরিয়েপুর।

   প্রকৃতির অপরূপত্বের  সুন্দরতম প্রকাশে যুগ যুগান্তর ধরে ধরিত্রীর বুকে ভাল্কি মাচানের এই অরণ্য মানব সভ্যতার সঙ্গে যেন জড়িয়ে রয়েছে গভীর আত্মীয়তার অন্তরঙ্গ বন্ধনে।আধুনিক ব্যস্তময় যন্ত্রসসভ্যতার পাশাপাশি কলকাতার নিকটে পাথুরে লাল মোড়াম মাটির এই দেশে পা ফেলে,বা বনের আরো গভীরে বৃক্ষশাখার পুষ্পসম্ভার,হরিত পর্ণ সম্ভারের দর্শনে,আর ঋতুচক্রের নিজস্ব বৈশিষ্টে অরণ্যসুন্দরীর নৈসর্গিক শোভার নৈকট্যে আমাদের মন  হয়েউঠে মুগ্ধ ও বিহ্বল।ঠিক মতো প্রচারপেলে এই অরণ্য পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে অবশ্যই জায়গা করেনিবে।

পথনির্দেশঃকলকাতা বা বর্ধমান থেকে দুর্গাপুর হাইওয়ে ধরে গলসির পারাজ মোড় থেকে ডানদিকে ২২কিলোমিটার,ট্রেনে বর্ধমান স্টেশন থেকে আসানসোল লোকাল ধরে মানকর স্টেশনে নেমে ১০-১২ কিলোমিটার।
                             ____________________________