Friday, May 22, 2020




            বর্ধমান ১০৮শিব মন্দির

    
                                          ফিরোজ আলী কাঞ্চন

রাঢ় বজ্ঞের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ন বাবহাটের ১০৮ শিব মন্দির।ব বর্ধমানের মহারাজ তিলক চাঁদের দ্বিতীয়া মহিষী বিষ্ণু কুমারী (বিষণ কুমারী)১৭৮৮-৮৯ সালে এই মন্দির গুলি প্রতিষ্ঠা করেন।
                  মহারাজ তিলক  চাঁদ যখন পরলোক গমন করেন তখন তাঁর পুত্র তেজ চাঁদের বয়স মাত্র ৬বছর।মহিষী  বিষ্ণু কুমারী  দিল্লীর সম্রাট সাহ আলমের কাছ থেকে ফর্মান নিয়ে এসে নাবালক  পুত্র তেজচাঁদের পক্ষে থেকে রাজ্য দেখাশুনার কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সজ্ঞে পরিচালনা করতে থাকেন।এক্ষেত্রে বিষ্ণু কুমারী পাশে পেলেন বিশ্বস্ত ও যোগ্যতাবান দেওয়ান রুপ নারায়ণ চৌধুরীর সহযোগীতা।
                কিন্তু একজন বিধবার পক্ষে এতোবড়ো রাজকার্য পরিচালনা করাটা মোটেই সহজ ব্যাপার ছিল না।একদিকে ব্রিটিশ সরকারের ষড়যন্ত্র,অন্যদিকে কিছু কিছু রাজ কর্মচারীর দুর্নীতি পরায়নতা_সব দিক তিনি সুদক্ষতার সজ্ঞে সামলাতে থাকেন।এদিকে রাজকার্যের মধ্যে ব্যস্ততায় থেকে সন্তানের দিকে তিনি তেমন কোন নজর দিতে পারলেন না।ফলে পিতৃহীন তেজচাঁদ অল্প বয়স থেকেই কুসজ্ঞে পড়ে হয়ে উঠলেন ভোগবাদী, উচ্ছৃঙ্খল  ও লম্পট।বয়স বাড়ার সজ্ঞে সজ্ঞে তা যেন আরো লাগাম ছাড়া মাত্রা পেতে থাকলো।আটজন মহিষী থাকা সত্বেও তিনি বিদেশীনী রক্ষিতা রেখেছিলেন বলে শোনা যায়।
           পুত্রের এই অধঃপতন বিষ্ণুকুমারীকে।ভীষণ চিন্তায় ফেলে দিল।তেজ চাঁদের মজ্ঞল কামনায়,আশায় তিনি সাধু সন্ন্যাসীদের কাছে আশীর্বাদ ভিক্ষা চায়তে থাকলেন।সাধু সন্তরা পরামর্শ দিলেন,যদি তেজ চাঁদ শ্রদ্ধার সজ্ঞে লক্ষ্য ব্রাম্ভনের পদধূলি যদি গ্রহণ  করতে পারেন তবেই তার চরিত্রের পরিবর্তন ঘটবে,সুমতি হবে,ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাপাবে রাজবংশ ও রাজ্য।ঠিক এই সময় একদিন রাজমাতা।স্বপ্নে।দেখেন তিনি এক সুন্দর মনোরম পরিবেশে আয়তক্ষেত্রারে অবস্থিত সারি সারি মন্দিরে ঘেরা স্থানে যাগযজ্ঞ সহ শিবের পূজার্চনা করছেন।বিষ্ণুকুমারী তাঁর এই স্বপ্নের কথা জানালেন বিশ্বস্ত দেওয়ান রুপ নারায়ণ চৌধুরীকে।
               রুপনারায়ণ চৌধুরীর তত্বাবধানে নবাবহাট সংলগ্ন স্থানে শুরু হলো ১০৮ শিব মন্দির নির্মানের কাজ,সেই সজ্ঞে আরো একটি বেশি ;মোট ১০৯টি।যদিও এই মন্দির গুলি ১০৮শিব মন্দির নামেই পরিচিত।সাধারনত জপমালায় ১০৮টি পুতি বা দানা থাকে,আর একটি অতিরিক্ত দানা থাকে যাকে 'মেরু' বলা হয়।এই পবিত্র জপমালার আদলেই ১০৮ বা ১০৯ টি মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বলে অনেকে মনে করেন।মন্দির দ্বারের উপরে শ্বেত পাথরের শিলালিপিতে প্রতিষ্ঠা কাল হিসেবে উল্লেখ আছে_" শ্রীহরি শকাবর ১৭১০সন ১১৯৫,ইং ১৭৮৮সালে.."।
        মন্দির প্রিতষ্ঠার দিন আমন্ত্রন।জানানো হল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের লক্ষাধিক ব্রাম্ভনকে।রাজমাতার আদেশে তেজ চাঁদ শুদ্ধ বসনে,পবিত্র চিত্তে,ভক্তি ও একাগ্রতার সজ্ঞে প্রতি ব্রাম্ভনের পদসেবা করে সেই পদরজ ব্রাম্ভনগণের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে অনি যত্ন সহকারে রাজ অন্তঃপুরে রেখে দিয়ে এলেন।মন্দির।গুলির মাঝে খনন করা হলো পুষ্করিণী, তার স্বচ্ছ জল, সান বাঁধানো ঘাট।প্রতি মন্দিরের সামনে রোপন করা হলো একটি করে বেল গাছ।আনুমানিক ১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে এই নির্মান কার্য শেষ হয়।মন্দিরে গায়ে কোন টেরাকোটার কাজ নেই।চতুস্কোন আকারের আয়তক্ষেত্রাকারে পরস্পর সংযুক্ত প্রতিটি মন্দিরের আয়তন ১০≠১০এবং উচ্চতা প্রায় ১৫ফুট।
       ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণা চতুদ্দশী তিথিতে শিবরাত্রি উপলক্ষে প্রতি বছর এখানে মেলা বসে।মেয়েরা পতি,পুত্র,স্বামী-স্ত্রীর পুর্নমীলনের কামনায় শিবরাত্রির আগের দিন ক্ষৌরকর্ম করে,নিরামিষে থেকে সারা রাত্রি জেগে চার প্রহরে চারবার পূজা দেয়।প্রথম প্রহরে দুধ,দ্বিতীয় প্রহরে দই,তৃতীয় প্রহরে ঘি ও চতুর্থ প্রহরে মধুদিয়ে শিবকে স্নান করানো হয়।শিবরাত্রির সময়।সাতদিন ধরে চলা এখানের মেলায় বহু দূর দূরান্ত থেকে বহু ভক্তের সমাগম ঘটে,আসে পাশের জনুড়া,আলমপুর,চারুল,মেটেল,গলসী,খেতুড়া প্রভৃতি গ্রামগুলি থেকে বহু মুসলিমও এই মেলার আনন্দ অনুষ্ঠানে এসে সামিল হন।অনান্য সময় শিবের পুজা নিত্য দিন,তবে পূজার প্রশস্ত দিন সোমবার।নৈবেদ্য দেওয়া হয় আতপ চাল,ঘি,গুড় ও কলাই।
            এই ১০৮শিব মন্দির শুধু বর্ধমান নয় সমগ্র বাংলার এক এক ঐতিহ্য ময় স্থান,যা আমাদের গর্বের।

No comments:

Post a Comment