Friday, May 22, 2020




বাঘারাজাদের ঢিবি

                         ফিরোজ আলী কাঞ্চন

রাঢ়বাংলার মমধ্যমণি বর্ধমান জেলার গলসী এক প্রাচীন জনপদ। এর আগে এ অঞ্চলের মাটির নীচে থেকে একাধিকবার পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন,যেমন মল্লসারুল নামক গ্রামে পাওয়া গেছে বাংলার প্রাচীন তাম্রপট্ট লিপি ' মল্লসারুল লিপি ';এবার থেকে সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে খানোগ্রামে বাঘারাজাদের ঢিবিথেকে প্রাপ্ত আজথেকে প্রায় দুহাজার বছর পূর্বের বিভিন্ন পোড়ামাটির প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন।



গ্রামের যেটা বারোয়ারী খেলার মাঠ সেটা আসলে এক ঢিপি,স্থানীয়রা বলেন বাঘা রাজাদের ঢিপি।আমি ঐতিহাসিক নয়,পেশায় শিক্ষক,নেশা আঞ্চলিক ইতিহাস,লোকায়ত ঐতিহ্য সর্ম্পকে জানা;সেই আগ্রহ থেকেই একদিন পৌছালাম সেখানে,যা দেখলাম  বিস্ময় আর হতাশা যেন চেপে রাখতে পারলাম না।সর্বত্র যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য প্রাচীন পোড়া মাটির বিভিন্ন ভগ্ন পাত্রের অংশ। ছোট যে ঢিপি এখনো অবশিষ্ট রয়েছে  গ্রামবাসীরা তার মাটি অবৈধ ভাবে কেটে নিয়ে ঢিপি টিকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে,আর সেই সজ্ঞে সেখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন গুলিকে পুরোপুরি ফেলে,ভেঙে, নষ্ট করে দিচ্ছে।আমার অনভিজ্ঞ দৃষ্টি সে সবের ঐতিহাসিক মূল্য নির্ণয় করতে অক্ষম।সময় নষ্ট না করে কুড়িয়ে নিতে থাকলাম খণ্ডবিখণ্ড পোড়ামাটির বিভিন্ন পোড়ামাটির কালো,লাল,ধূসর বর্ণের পাত্রের অংশ,জি সি পি দিয়ে  প্রায় সাত আট ফুট খাল কেটে মাটি তুলে গ্রামের রাস্তায় দেওয়া হয়েছে,সেই সজ্ঞে যন্ত্রদানবের থাবার আঘাতে ভেঙে চূড়মাড় হয়ে গেছে সে সব পাত্র গুলি।একটি পোড়ামাটির থাম বা পিলারও দেখতে পেলাম।আমার সংগ্রহ করাদেখে উপস্থিত বাসীন্দারা হাসাহাসি করতে লাগলেন," কি সব খুলাংকুচি কুড়াচ্ছেন ",কয়েকটা প্রাণীর হাড়ও পেলাম।
          সংগৃহীত  নিদর্শন গুলির ছবি দেখে বিভিন্ন  প্রত্নতাত্বিক গবেষক গণ এগুলির সময় কাল তাম্রশ্মীয় যুগের,খ্রীষ্টপূর্বাব্দের বলে অনুমান করেছেন।
         চৈনিক পর্যটক হিউয়েন সাং তাঁর গ্রন্থে গলসীকে বলেছেন উতু প্রদেশ।জগৎরায় মুগল সম্রাট আলমগীরের কাছথেকে যে ৪৯টি মৌজার জমিদারিত্ব পেয়েছিলেন সেগুলির মধ্যে ' বাঘাপরগনা ' বলে এ অঞ্চলের উল্লেখ ছিল,বহু পূর্বেথেকেই গলসী অঞ্চলে ছিল বাঘারাজাদের রাজত্ব,তাদের রাজবাড়ি ছিল এই খানো গ্রামে।পার্শবর্তী বড়মুড়িয়ে  ও ছোটমুড়িয়ে গ্রামদুটির নাম হয়েছে এই খানোরাজবাড়িকে কেন্দ্রকরেই,বাঘারাজাদের রাজবাড়ি যাবার যেটা প্রধান মোড় সেখানে গড়েউঠা গ্রাম হয়েছে 'বড়োমোড় 'বা বড়োমুড়িয়া,আর যেটা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সেটা হয়েছে ' ছোটমোড় ' বা ছোটমুড়িয়া।
      মধ্যযুগে এই বাঘারাজাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়,  এর বেশী কিছু তথ্য অমিল,এই ঢিপিতে কোন রাজার প্রাসাদ ছিল,কত সাল?সে সব আজ আমাদের উদাসীনতায় অজানা।যেটুকুও অবশিষ্ট আছে সেটুকুও গ্রামবাসীর অসেচতনতায় ধ্বংস হতে বসেছে।

     জানি ইতিহাসের অমূল্য এই সম্পদগুলি এ ভাবে ব্যক্তিগত ভাবে সংগ্রহ করার অধিকার আমার হয়তো নেই,কিন্তু একজন সচেতন নাগরীক হিসেবে গ্রামবাসীর অবহেলা ও সরকারের উদাসীনতায় বাধ্য হয়েছি,আমি সুযোগ পেলে অবশ্যি এগুলি কতৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে চাই।সেই সজ্ঞে আবেদন অবিললম্বে এখানে গলসি ব্লক আধিকারিকের উদ্যোগে অবৈধ মাটিকাটা বন্ধকরা হোক,বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালরের ইতিহাস বিভাগ বা রাজ্যপুরাতাত্বিক কতৃপক্ষের পরিদর্শনে এসে এ স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পর্কে নিশ্চিত করুক।
       সাহিত্য সম্রাট বঙ্কইম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালীর ইতিহাস নেই বলে আক্ষেপ করে ছিলেন,সে আক্ষেপ আজো আমাদের রয়েগেল,বাঘারাজার ঢপি আজো তাই হতাশার গভীর অন্ধকারে চাপা।হয়তো এখানে পরশ পাথার নেই,হয়তো বা আছে,তার চেয়েও বড়োকথা বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের পরিপূর্ণতা এগুলির সঠিক তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া অসম্ভব।

মোঃ8617386904
ছবি

No comments:

Post a Comment