বর্ধমান জেলায় তন্ত্রসাধনার ধারায় কিছু ঐতিহ্য
ফিরোজ আলি কাঞ্চন
প্রাচীন ভারতের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় উপাসনাপদ্ধতি হলো তন্ত্র সাধনা,যার তৎপত্তি বেদ হতে।তন্ত্র সাধনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ধারারমধ্যে উল্লেখযোগ্য শাক্ত সম্প্রদায়।
তন্ত্রসাধনায় শক্তি নিরাকার,তিনি নারীও নন পুরুষও নন।তবে তন্ত্র সাধকদের সুবিদার্থে শক্তির রুপ কল্পনায় কখনো তিনি পুরুষ কখনোবা নারী।এই তন্ত্রসাধনার ধারায় নারীরুপে ইষ্ট দেবীদের মধ্যে কালী,তারা,জগদ্বাত্রী বিভিন্ন নামের রুপে তিনি পূজিত হন।দশ মহাবিদ্যার অন্যতম মহাশক্তি দেবী কালীর বিভিন্ন নাম--সিদ্ধেশ্বরী,বুড়িমা,ডাকাত কালী,ক্ষ্যাপা মা,আনন্দময়ী,মা দক্ষিণা কালী,ভদ্রাকালী,সিদ্ধ কালী,গুহ্যকালী,শ্মশানকালী,মহা কালী,রক্ষ্যাকালী,চামুণ্ডা,রুদ্ রকলী,মুক্তকেশী,করালী,কালরাত্রী ,কপালিনী ইত্যাদি।
রাঢ়বঙ্গ তন্ত্রসাধনার উল্লেখ্যোগ্য পীঠস্থান,তন্ত্রসাধনার একান্নোটি পীঠের মধ্যে নয়টি পীঠের অবস্থান এখানে।এই রাঢ়বঙ্গের মধ্যমণি বর্ধমান জেলার বিভিন্ন স্থান এই তন্ত্রসাধনার তীর্থস্থান রুপে পরিগণিত।নতুনহাটের নিকট উজানি কোগ্রামে মঙ্গলচণ্ডী,ক্ষীরগ্রামে দেবী যোগ্যদা,কেতুগ্রামে বহুলা মহাপীঠ,আউসগ্রামের অমরারগড়ে দেবী শিবাখ্যা,কাটোয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী,মন্তেশ্বরের করন্দা গ্রামে করন্দেশ্বরী,বরাকরের কল্যাণেশ্বরী,ভাতারের বড়বেলুনের বড়ো মা প্রভৃতি জেলার উল্লেখযোগ্য তন্ত্রসাধনায় পূজিত আরাধ্য দেবী।এ ছাড়াও মেমারীর আদম পুরের কালী চার বোন-বড় মা,মেজ মা,সেজ মা,ছোট মা।এই গ্রামে দেবীর পুজা প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন, দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের প্রাচীন মন্দিরে দেবী চৌধুরানী ও ভবানীপাঠক দেবীকে ভারতমাতা রুপে উপাসনা করেছেন,তন্ত্রসাধনার সাথে দেশপ্রেমের এমনধারা মেলবন্ধন ব্যতিক্রমী। মন্তেশ্বরের শুশুনিয়ায় রয়েছে চারশো বছর ধরে পূজিত দেবী তারাক্ষ্যা,বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্র দেবীর পুজোর জন্য ২৫২ বিঘা জমি দান করেছিলেন।আবার জৈন্য ধর্মের দেবী অম্বিকার সঙ্গে শাক্ত দেবী মিশে গেছে কালনার বামা কালী বা সিদ্ধেশ্বরীতে,দেবীর বর্তমান মন্দিরটি নির্মাণ করেদেন বর্ধমানের মহারাজা চিত্রসেন।
মূল বর্ধমান শহরে কাঞ্চন নগরর গোবিন্দ দাসের জন্মস্থানের নিকট আছেন কঙ্কালেশ্বরী,দেবীর মূর্তিটি এখানে বড়ো অদ্ভূত-মানবদেহের শিরা উপশিরা খোদাইকৃত কষ্ঠি পাথরের অষ্টভূজা মৃতিটির নান্দনিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। ১৯২৩ সালে দামোদর নদথেকে মূর্তিটা উদ্ধার হয়।রাজবাটির নিকট মহারাজা তেজচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সোনার কালী,তেজগঞ্জে বিদ্যাসুন্দর কালী,কমলাকান্ত কালী,দুর্লভা কালী প্রভৃতি শহরের ঐতিহ্যবাহী কালী মন্দির।
তবে অখণ্ড বর্ধমানে উচ্চতার নিরিখে যে দুই কালী খুবই জনপ্রিয় ও বিখ্যাত তার একটি হলো ভাতার অঞ্চলের বড়বেলুনে বড়মা।প্রায় আঠারো হাত উচ্চ বিশালাকার দেবীমূর্তির জিহ্বা তৈরী হয় নতুন কুলো কেটে,আজথেকে ছয়শত বছর আগে গোঁসাই ভৃগুরাম নামক এক সাধক এই দেবীর পূজোর সূচনা করেন।অন্য বিখ্যাত দেবী হলেন তকীপুর গ্রামের বড় কালী
তকীপুরের বড় মাঃ
'ঠাকুর আর পুকুর/এই নিয়ে তকীপুর। জেলার শক্তিসাধনায় আউসগ্রাম থানা অঞ্চলের প্রাচীন জনপদ তকীপুর গ্রাম এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।বহু পূর্বে এই স্থান ছিল ঘন বেত বনের গভীর জজ্ঞল,আর সে জজ্ঞল ছিল ঠ্যাঙারে ডাকাতদের অবাধ বিচরনক্ষেত্র।গ্রামের উত্তর প্রান্তে যে মহাশ্মশান ছিল,সেখানে ডাকাতের দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে গভীর রাতে মশাল জ্বালিয়ে এসে কালীর সাধনা করে তবে ডাকাতি করতে যেত।সে প্রায় ৬০০ বছর আগের কথা।পরে বর্ধমান মহারাজের উদ্যোগে নির্মিতি হয় বর্তমান মন্দিরটি।
মন্দিরে নিত্য পূজা দেওয়া হয়,তবে প্রতি সপ্তাহে শনি ও মজ্ঞলবার দেবীর বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।কালীপূজার সময় দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি তৈরী করা প্রায় ১৫-২০ফুট উচ্চতার।এই সময় দেবীর পূজার কিছু ব্যতিক্রমী রীতি চোখে পড়ে,মাঝ রাত্রিতে পুরোহিত দেবীর চক্ষুদান করে থাকেন,চক্ষুদান করার পরেই তিনি সোজা বাড়ি ফিরে যান,তখন মশাল জ্বালিয়ে পুরোহিত মশায়কে বাড়ি পৌছে দিয়ে আসা হয়।আমাবস্যার ভোর বেলায় দেবীর ঘট আনা হয়,তার পর দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।বলিদান দেওয়া হয় সকালে,হোম হয়,প্রতিদিন নিয়ম মেনে ঘট আনা হয়,আবার পুজোর পর সে ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। এই ভাবে পঞ্চমী পর্যন্ত পূজা চলে।এ প্রসজ্ঞে উল্লেখ্য দেবীর নিজস্ব কম-বেশী প্রায় ২৭-২৮ ভরি রুপো এবং ৭-৮ভরি সোনার গহনা আছে।এই গহনা পূজা কমিটির মধ্যস্থতায় সারা বছর ব্যাংকের লকারে গচ্ছিত থাকে,পূজার সময় লকার থেকে বেড়করে এনে স্যাকারার কাছে নিয়ে গিয়ে পালিশ করে এনে দেবীকে পরানো হয়ে থাকে,পূজার পর আবার তা নিরাপদে ব্যাংকের লকারে রেখে আসা হয়।
মন্দিরে বলিদানের প্রথা খুব প্রাচীন।।শোনাযায় সেই ডাকারদের আমলে নাকি এই দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দেওয়া হতো।পরে শুকরও বলি দেওয়ার চল ছিল,তবে তা এখন হয় না।বর্তমানে মোষ,পাঠা,ভেড়া বলি দেওয়া হয়ে থাকে।এই বলির সময় হাজার হাজার ভক্তের সমাগমে মন্দির প্রাজ্ঞন মুখরিত হয়ে থাকে।
এই দেবী বড়ো জাগ্রত।দেবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে তকীপুর গ্রামবাসীর মধ্যে কিছু প্রথার প্রচলন আছে,যেমন ' নুন পালা 'প্রথা;এই প্রথার নিয়ম অনুযায়ী কোন এক বিশেষ দিনে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে সেদিন নুন ছাড়া রান্না করা হয়ে থাকে।
এই বড় কালীর পূজা উপলক্ষে এক বিরাট মেলা বসে।তকিপুর সংলগ্ন ভোতা,বিল্বগ্রাম,সর,দিগনগর,বাহি রঘন্না,আসকরন,কুরকুবা,গলসী,খেতু ড়া,বাবলা,বৈচি প্রভৃতি গ্রাম থেকে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ জমায়েত হন। বাড়িতে বাড়িতে কুটুম আসে।তকীপুর গ্রামের বহু পরিবার কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন,এই পূজার কটাদিন দেবীর টানে সেই পরিবার গুলোও যেন গ্রামের মাটিতে ফিরে আসেন।হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে তকীপুরের কালীপুজোর মেলা এই অঞ্চলের সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
চান্নাগ্রামে সাধক কমলাকান্ত পূজিত দেবী বিশালাক্ষীঃ
যদিও আনুমানিক ১১১৭ সালে(ইং-১৭৭০খ্রিঃ)অম্বিকা কালনায় বাংলা শাক্তপদাবলির অন্যতম কবি সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য জন্ম গ্রহন করেন,কিন্তু অকালে পিতা মহেশ্বর ভট্টাচার্য্যের মৃত্যু হওয়ায় মাতা মহামায়াদেবী তাঁর দুই সন্তান কমললাকান্ত ও শ্যামকান্তকে নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি গলসীর চান্না গ্রামে।মামা নারায়ণ ভট্টাচার্য্য এঁদের বেশকিছু জমি গবাদি পশু প্রদান করেন।কবির পৈতে দিয়েছিলেন এই মামা নারায়ণ ভট্টাচার্য্য।কমলাকান্তের ' সাধকরঞ্জন ' গ্রন্থে পাওয়া যায়--
' অতপর কহিশুন আত্মনিবেদন।
ব্রাম্ভণ কূলে উপনীত স্বামী নারায়ণ।'
এই সময়য় চান্না গ্রাম ছিল শিক্ষা দীক্ষ্যার পীঠস্থান।কমলাকান্ত গ্রামের টোলে ব্যাকরণ শাস্ত্র অধ্যায়ন করেনে এবং পরে তিনি নিজে একটি টোল প্রতিষ্ঠা করে অধ্যাপনা করতে থাকেন।কমলাকান্ত অবসর সময়ে গ্রামের মেঠো পথে উদাস হয়ে ঘুরে বেড়াতেন।পুত্রের সংসারের প্রতি উদাসীনতা দেখে মাতা মহামায়াদেবী কমলাকান্তের বিবাহ দিয়েদেন বর্ধমানের লাকুড্ডিতে ভট্টাচার্য্য পরিবারে।
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েও সংসারী হতে পারলেন না কমলাকান্ত।সর্বদা গ্রামের বিশালাক্ষী মন্দিরে উদাস মনে বসে থেকে ' মা-মা ' বলে ডাকতেন।মন্দির সংলগ্ন পুকুরপাড়ে বায়ুকোণে এক পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে সাধনায় মগ্ন থাকতেন।সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে কমলাকান্তের খ্যাতি বহুদূর ছড়িয়ে পড়ল।এদিকে দারিদ্র যেন নিত্য সজ্ঞী,সংসারে অভাব যেন দিনের দিন বেড়েই চলল।সাধকের এক অবস্থাসম্পন্ন ধনী ভক্ত চান্নায় এসে গুরুর আর্থিক দুরাবস্থা দেখে আবার কালনায় নিয়ে যান।সেখানেও কবি এক পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে সাধনা শুরু করেন।কিন্তু এখানের অবস্থান সুখকর হয় না,কিছুদিনের মধ্যেই মাতা মহায়াদেবীর মৃত্যু ঘটে।কবি ফিরে আসেন চান্নায়,এখানে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার এক দুর্ঘটনা,বিপত্নীক হন কবি।
কমলাকান্ত দ্বিতীয় বিবাহ করেন কাঞ্চন নগরে,এই স্ত্রীর গর্ভে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।দারিদ্র তবুও যেন পিছু ছাড়ে না,সবদিন চালও জুটটো না,এমনই এক অভাবের দিনে এক শ্যাম বর্ণা মহিলা সাধকের বাড়িতে হাজির,সজ্ঞে দুই লম্বা চওড়া লোকের মাথায় ঝুড়ি ভর্তি চাল,আলু তরিতরকারী।কমলাকান্তর চান্না অভস্থান কালে প্রচলিত আছে এমনি সব কাহিনী।আরো প্রচলিতলিত আছে যে বিশালাক্ষী দেবীর মন্দিরের পুজোয় শোল ও মাগুর মাছ লাগবেই,কিন্তু কোথাও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না,এমন সময় শুনলেন পাশের পুকুরে জলের থেকে কারো উঠে আসার শব্দ,দেখলেন এল কালো কুচকুচে মেয়ে মাছ নিয়ে হাজির,হাসতে হাসতে বললো, ' আমি বাগদি পাড়ার মেয়ে গো,শুনলাম পুজোর জন্য তুমি কোথাও মাছ পাচ্ছো না,তাই দিতে এলাম,'।সাধক বললো,' কিন্তু আমার কাছে যে এখন পয়সা যে নেই মা ',বাগদি মেয়ে বললো,' সে তুমি কাল পাড়ায় দিয়ে এসো।'পরের দিন সারা বাগদি পাড়া তন্ন তন্ন করেও সেই কন্যার দেখা পাওয়া যায়নি।
সাধক কমলাকান্তের মহিমার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকলো দিকে দিকে।দেওয়ান রঘুনাথ রায়ের পরামর্শে বর্ধমানের মহারাজ তেজচাঁদ তাঁর রাজসভার সভাকবি রুপে নিযুক্ত করেন সাধক কবি কমলাকান্তকে।মহারাজ কমলাকান্তকে কোলাহাটে একটা মায়ের মন্দির নির্মান করেদেন এবং বাৎসরিক বৃত্তির বন্দোবস্ত করেদেন।সাধকের জীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের।
কোলসড়া গ্রামে শেরশাহ পৃষ্ঠপোষকতায় সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরঃ
জামালপুরের কোলসড়া গ্রামের ঘোষাল পরিবারের একাদশতম পূর্বপুরুষ দিগম্বর ঘোষাল আদিতে ছিলেন জম্মু কাশ্মীরের বাসীন্দা ও সম্রাট শের শাহের একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী।শের শাহ তখন জি টি রোড নির্মানের পরিকল্পনার বাস্তবায়নে মগ্ন,আর তাঁর এই পরিকল্পনার তদারকির দায়ীত্বে আছেন দিগম্বর ঘোষাল। জি টি রোডের কাজ কর্ম দেখাশুনার জন্য দিগম্বর ঘোষাল একদিন কংসা নদীর তীরে রাত্রি বাসের সময় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেলেন।ধর্মভীরু দিগম্বর ঘোষাল তাঁর স্বপ্নাদেশের কথা সম্রাট কে জানালে শের শাহ দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা ও ব্যায় ভার পরিচালনার জন্য পাঁচ শত বিঘা জমি দান করেন,এই ভাবে ১৫৪০ খ্রিষ্টাব্দে শের শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় দিগম্বর ঘোষাল কোলসড়া গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির।
সেই থেকে আজও কোলসড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী কালী পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হয়ে আসছেন,বিশেষত্ব হলো এ ছাড়া অন্য কোন দ্বিতীয় কালী পূজো গ্রামে হয় না এমন কি কালী সেজে কোন বহুরুপীকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না,শুধু তাই নয় গ্রামের কোন বাড়িতে কালী ঠাকুরের কোন ক্যালেণ্ডারও রাখা হয় না।প্রতি বছর কার্তিক মাসে কালী পুজোর সময় ও চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষে মহা ধূমধাম সহকারে গ্রাম বাসীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজার আয়োজন করে থাকেন,১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দ থেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দিরের পূজায় ঘোষাল পরিবারের সঙ্গে সমগ্র গ্রামবাসীর অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতায় সার্বজনীন পূজায় পরিণত হয়।
পঞ্চমুণ্ডীর আসনে অধিষ্ঠত দেবীর মূর্তি তৈরী হয় সম্পূর্ণ গঙ্গার মাটির দ্বারা,প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য এই ঘোষাল পরিবারের ঈশ্বর চন্দ্র ঘোষাল প্রতিষ্ঠিত দূর্গাপীজাতেও ভোগ রান্না হয় সম্পূর্ণ গঙ্গা জলে।সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পূজায় বলি প্রথা প্রচলিত,এখানের পূজার আরো একটি ব্যতিক্রমী রীতি বিসর্জনের দিন পাঁচজন পুরোহিত দেবী মূর্তিকে খণ্ড খণ্ড করে ঝুড়িতে ভরে নিরঞ্জন করেন।এই ভাবে নিজস্ব বৈশিষ্ট ও ঐতিহাসিকতায় ঘোষাল পরিবারের সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মন্দির কোলসড়া গ্রামের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে,বাৎসরীক পূজার আনন্দে মেতে উঠে সারা গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ জন।
দূর্গাপুরে ভবানী পাঠক পূজিত ভারত মাতাঃ
প্রতি বছর শ্যামাপূজোর আগের দিন কৃষ্ণ পক্ষ ভূত চতুর্দশীতে দেবীর বাৎসরীক পূজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে ধুম ধাম সহকারে,তবে দেবীর ভোগ পুরোপুরি নিরামিষ,যদিও পূর্বে দেবীর ভোগে মাছ দেওয়ার প্রচলন ছিল।মন্দির বেদীতে লিখিত আছে,' ঔঁ বন্দে মাতরম জয় জয় ভারত বর্ষম ',এ এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত, দেবী কালী এখানে ভারত মাতার কল্পনায় পূজিত,যা সমগ্র ভারত বর্ষে বিরল।শুধু তাই নয়, দেবীর মন্ত্রের সঙ্গে উচ্চারিত হয় " ঐক্যম শরণম গচ্ছামি,সত্যম শরণম গচ্ছামি,স্বরাজ শরণম গচ্ছামি। "
তখনকার দিনের দেশপ্রেমী বিপ্লবীদের কাছে দুর্গাপুরের জঙ্গলের নিবিরে এ মন্দির ও আশ্রম হয়ে উঠেছিল গোপন আশ্রয় স্থান।ভবানী পাঠক - দেবী চৌধুরানী ও অনান্য বিপ্লবীদের পূজিত কালীমনন্দিরের কিছু দুরেই রয়েছে প্রস্তর নির্মিত এক প্রাচীন সুড়ঙ্গ, প্রচলিত আছে এই সুড়ঙ্গ পথটি নাকি ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরাণী ব্যবহার করতেন।রোমক স্থাপত্য রীতির প্রভাবে প্রভাবিত চুন বালি সুরকির মিশ্রণে বিভিন্ন আকৃতির বেলেপাথরের খিলানের এই সুড়ঙ্গ পথটি সতের শতকে মুঘল শাষনের শেষের দিকে নির্মিত হয়েছিল গবেষকদের অনুমান।
বর্ধমান জেলার তন্ত্রসাধনার ধারায় রয়েছে একাধিক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন, যেগুলি প্রাচীণত্ব ও বিশিষ্টতার দাবিরাখে।
****************************** ****
ফিরোজ আলি কাঞ্চন
শিক্ষক ও গলসির সাহিত্যকর্মি
বিঃদ্রঃ
প্রবন্ধটির কিছু অংশ আনন্দবাজার পত্রিকার বর্ধমান জেলার পৃষ্ঠায় উত্তর সম্পাদকীয় তে ২০১৯কালীপুজোর সময় প্রকাশিত হয়েছিল
এই সময় পত্রিকায় ভবানিপাঠাকের অংশ প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐ দুটি প্রবন্ধর কিছু অংশ ও কিছু বাড়তি তথ্য যুক্ত করে এ প্রবন্ধ।
এ প্রবন্ধে,বা কোন অংশ অন্য কোন পত্রিকায় বা অন্যকোথাও প্রকাশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ছবি
তকীপুর গ্রামে বড় কালীর ছবি,তার মধ্যে একটি এক বছের প্রতিমা ভেঙে বিপর্যয় হয়েছিল,ক্রেন দিয়ে প্রতিমা তোলা হয়েছিল তার ছবি।
No comments:
Post a Comment