Sunday, April 26, 2020

গলসীর  গ্রাম পরিচিতি(১)
                                     

    *খেতুড়া
(জে এল  ১০১)
            রাড় অঞ্চলের ধম'ঠাকুর ক্ষেত্রপালের নাম অনুসারে এই গ্রামের নাম হয়েছে খেতুড়া।বহু পূবে এই গ্রামের ব্রাম্ভন রা বাসন্তী পূজা করতেন ধূমধাম করে।চৈত্রমাসের শারদীয়া দূগা'পুজার মতো  চারদিন ধ রে মহিষাসুর মদি'নী সিংহবাহিনী দেবী দূগা' স প্তমী থেকে দশমী তিথিতে পূজিত হতেন।প্রচলিত আছে সাধক কবি কমলাকান্ত এই পূজা দশ'নে এসেছিলেন।গ্রামটিতে খুবই প্রাচীন সিংহ রাজাদের আমলের পুকুর 'সিংসায়ের ' আজো আছে।এই গ্রামটিতে হিন্দু,মুসলিম,বাউড়ি,মেটে,মাজি সাওতাল,বাউল,ফকির,জোলা বামুন,সেন,নাপিত প্রভৃতি নানা মানুষ পাশাপাশি বাস করে,যা এক গবে'র ব্যাপার।মহরমের সময় প্রতি বছর চন্দন নগরের আলো  সসজ্জাএই গ্রামে এক আলাদা প রচিতি দিয়েছে।

*খানো
(জে এল ১৩৯)
                    খানো লিংক স্টেশনের দক্ষিন দিকে রয়েছে এই গ্রাম টি।গ্রামের একেবারে ঈশান কোনে রেললাইনের ধারে দেবী ঈশান চণ্ডীর থান।স্তুপীকৃত ভাংা ইটের ডিবির উপর দেবীর পদচিহ্ন যুক্ত এক পাথর খন্ডকেই ঘিরে দেবীর অবস্থান।

*  উড়ো
(জে এল ১৩৭)
                  জি টি রোডের ধারে অবস্থিত এই গ্রামটি পাঠান ও মোগল যুগে পথিকদের বিশ্রাম স্থল রুপে ব্যবহৃত হত বলে এ স্থান টি "চটি" নামে প রিচিত।এই গ্রামে রয়েছে রায় প রিবারের প্রতিষ্ঠিত এক বিশাল দুগা'র মূতি'।এই ধ রনের বিগ্রহ পশ্চিম বজ্ঞে খুব এক টা দেখা যায় না, ঊনবিংশ শতকে গ্রামের ই বাসিন্দা ম নীন্দ্রনাথ রায় এবং অরুন রায় জোড়া রেখ দেউল রীতিতে শিব মন্দিরটি তৈরী ক রেছিলেন।কালাচান্দ নামে ধম'রাজের গাজন ও গ্রামে হ য়।গ্রামে র য়েছে রায় পরিবারেত প্রস্ত র নিমি'ত ম ন সা মূতি',ভট্টাচায' প রিবারের প্রস্ত র নিমিত' বিশালক্ষী দেবীর মূতি'।

*    ইড়কোনা
(জে এল ১০৩)
              বৈষ্ববীয় ভাব ধারায় পুষ্ট এই গ্রামটির প্রধান ঐতিহ্য প্রতি বছর মাঘ মাসে রাধা কৃষ্মের শ্মরনে মেলা।

*    গোহগ্রাম
(জে এল ৭০)
                   মল্লসারুল লিপিতে এই গ্রামটির নাম রয়েছে "গোধগ্রাম"।গ্রামের প্রাচীন দেবকীতি' হ লো চক্রবতী' পরিবারের দালান মন্দির। প্রতিষ্ঠা লিপি থেকে জানা যায় মন্দিরটি ১৭৯২শকাব্দে বা ১৮৭০ খ্রীঃ নিমি'ত হয়ে ছিল।এই মন্দিরে রয়েছে রাধা দামোদরের শাল গ্রাম শিলা।এই মন্দিরে গাত্রের টেরাকোটার কাজ খুবই সুন্দর
গ্রামে চৈত্র মাসে শিবের গাজন হ য়।

              গলসী অঞ্চলের প্রতি গ্রামে আছে এমন নানা ঐতিহ্য ময় পরিচিতি।আমরা নিজেরা যদি এবাভে নিজের নিজের গ্রামের কথাকে তুলে ধরি তাহলেই সমৃদ্ধ হবে এই প্রচেষ্টা।
                                                                           ক্রমশ...........
[4/10, 17:02] ফিরোজ/কাঞ্চন: গলসীর গ্রামঃঐতিহ্য ও স স্কৃতি

বাকতা(জে এল নং১১২)
        মধ্যযুগীয় প্রাচীন গ্রন্থে স্থানটির আদি নাম 'বকতক'।এখানকার বনিক সম্প্রদায়(তিলি ও তাম্বুলি)মধ্যযুগে বহিবা'ণিজ্যে যেতেন।তখনকার বনিকদের অট্টালিকা ও একাধিক মন্দিরের ধ্বংসস্তুপ আজো বত'মান, যেগুলি আনুমানিক চতু'দ্দশ_পঞ্চদশ শতাব্দীতে নিমি'ত।
♣♣♣
সারুল(জে এল ১৩৬)
          "সরু আল"থেকে গ্রামের নাম হয়েছে সারুল।গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বড় শিব মন্দিরটি টেরাকোটার জন্য বিখ্যাত।প্রায় তিনশো বছর আগে ভূস্বামী শ্রী রামদুল্ল'ভ মুখোপাধ্যায় এই মন্দিরটি তৈরী করেছিলেন।
♣♣♣♣♣♣
গোপডাল(জে এল ৬৯)
             গ্রামের বেশির ভাগ অধিবাসী গোপ স ম্প্রদায়ের বলে গ্রামের নাম হ য়েছে গোপডাল।প্রধান অনুষ্ঠান ভগবতীর গাজন,এছাড়াওগ্রামে মনসা পুজা হয়,কাত্তি'ক মাসে ক্ষেপাকালীর পুজা হ য়।গ্রামের ধম'ঠাকুরের নাম বন্য রাজ রায়।
♣♣♣♣♣♣♣
বড়োমুড়ে/ছোটমুড়ে(জে এল ১৩৮)
            বহু আগে এখানকার বাঘা রাজাদের রাজবাড়ি ছিল খানোতে।সেই খানো রাজবাড়ি যাবার ছিল দুটো পথ,যেটি বেশি গুরুত্বপূন' সেটি বড়োমোড়>বড়োমুড়ে,অন্যটি ছোটমোড়>ছোটমুড়ে।
♣♣♣♣♣♣♣♣
পুরশা
          গ্রামটি জি টি রোডের দক্ষিণ ধারে অবস্থিত,রয়েছে গ্রামীন হাস্পাতাল।বহু আগে নাকি গ্রামটি আগুনে পুড়ে বারবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল,সেই থেকে নাম হয়েছে পুড়শা,আগে গ্রামটির নাম ছিল অভয়রাজ পুর।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
ভুড়ি(জে এল ১২৯)
               ভুশূরের পুত্র ক্ষিতিশূর রাড়ি ব্রাম্ভনকে৫৬টি গ্রাম দান করলে সেই গ্রামগুলির মধ্যে ভুড়ি নামটি পাওয়া যায়।গ্রামে র য়েছে গ্রামিন হাসপাতাল।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
সাঁকো(জে এল ১৫৪)
                মকুন্দ রামের চণ্ডীমজ্ঞল কাব্যে এই গ্রামের নাম আছে।ভারতে প্রথম ম হাভারতের ইংরাজী অনুবাদ যিনি প্রকাশ ক রেছিলেন সেই প্রতাপ রায় এই গ্রামের বাসীন্দা ছিলেন।এই গ্রামে আছে সূয' মূতি' "ঊষাদিত্য"।এই গ্রামে মাটির নীচে থাকে পাওয়া বিষ্ণু বাসুদেবের পাথরের মূতি'টি নবম দশম শতকের পাল যুগের ভাষ্কায্যে'র ঐতিহ্যবাহী।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
জুজুটি(জে এল ১৫৮)
             দামোদর নদের বাঁধের একেবারে গায়েই অবস্থিত এই গ্রামটি অতি প্রাচীন।গ্রামে রয়েছে রাজ্য সেচ বিভাগের অফিস ও বাংলো।শিব রাত্রিতে গ্রামে ধূম করে পূজা হয়।পোষসংক্রান্তির সময়  গ্রামে দণ্ডেশ্বরী র পুজা হ য়।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
কুরকুবা(জে এল ৯৭)
              গ্রামের প্রধান অনুষ্ঠান কমলা  নাম্নী মনসা  দেবীর পুজা।এক তালা দালান মন্দিরে দেবির প্রস্তর  মূতি' বিদ্যমান।প্রতি বছর শ্রাবন স ংক্রান্তিতে পুজো উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসে।বহু আগে এই গ্রামে ছিল বৌদ্ধদের বাস,তার কিছু নিদশ'ন আজো আছে।এই গ্রামের মাজেদ মোল্লা আখমারা কল ও দুনি তৈরী ক রে খ্যাতি পেয়েছিলে।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
কৈতাড়া(জে এল ৭৪)
                মল্লসারুল লিপিতে এই গ্রামের নাম জানাযায়। "কবিন্থবাটক"গ্রামটি আগে বিখ্যাত ছিল পিতল কেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য।এখানকার তৈলভাণ্ড ছিল খুব বিখ্যাত।আছে কম'কার পরিবারের উচু শিখর দেউল,শিব মন্দির।এছাড়া লাহা পরিবারের রাধাকৃষন ও শ্রীধরের বিগ্রহ উল্লেখ যোগ্য।ভট্টাচায' পরিবার প্রতিষ্টিত শিবলিজ্ঞের নাম কৈবালেশের।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣
সতীডাজ্ঞা
               বহু আগে এখানে ছিল আদড়াহাটি,কৈতাড়া,মহাড়া,বেলান গ্রামের একটি মহাস্মশান।এই ডাজ্ঞার শ্মশানে এক কালে সতীদাহ হতো,তাই নাম হ য়েছে সতীডাজ্ঞা।সতীর স্মৃতি মন্দির এখনো এখানে আছে,এই স্থানেই সাধক সবে'শ্বর সাধনা করতেন।এখানে আছে গ্রামীন হাস পাতাল
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
আদড়াহাটি(জে এল ৭৮)
মল্লসারুল লিপিতে গ্রামের নাম আছে "অধিঝকরক" ডঃ সুকুমার সেন এই গ্রামের নামকরন নিয়ে দুটি মত দিয়েছেন।এক  গ্রামে ছিল এমন এক হাট যেহাটে দর দাম হতো না,অ_দর হাটি।দুই গ্রামটি ছিল হাটিদের বসতি সেই থেকে আদড়া হাটি।অন্য মতে আদরেশ্বর শিবের নাম থেকে গ্রামের নাম হ য়েছে আদড়াহাটি।মুখাজি' পররিবারেরশিব লিজ্ঞ আছে।আছে একটি প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন মসজিদ।
♣♣♣♣♣♣♣♣
ইড়কোনা(জে এল ১০৩)
            প্রাচীন এই গ্রামটি ছিল বৈষ্ণবীয় ভাব ধারায় পুষ্ট।প্রতি বছর মাঘ মাসে রাধাকৃষ্ণের মেলা বসে।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
গোহগ্রাম(জে এল ৭৩)
                মল্লসারুল লিপিতে গ্রামটির নাম গোধগ্রাম।চক্রবতী' পরিবারের দালান,রাধা দামোদরের মন্দিরের টেরাকোটা কাজ খুবই সুন্দর।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣
উড়ো(জে এল ১৩৭)
       মুগল যুগে এই স্থানটি পথিকদের বিশ্রাম স্থল রুপে ব্যবহৃত হতো বলে উড়ো চটি।আছে রায়দের জয়দুগা'র প্রস্তর মূতি',শিব মন্দির।
♣♣♣♣♣♣♣
খানো(জে এল ১৩৯)
       গ্রামের ঈশান কোণে ঈশান চণ্ডীর থান,
♣♣♣♣♣♣♣♣
খেতূড়া(জে এল ১০১)
            গ্রামের বাউড়ি পাড়ায় ধম'ঠাকুর ক্ষেত্রপালের থান,এর নাম থেকেই গ্রামের নাম খেতুড়া।প্রচলিত সাধক কবি কমালাকান্ত এই গ্রামে দূগা'পুজা দশ'নে এসে ছিলেন।
♣♣♣♣♣♣♣♣
চান্না
            এই গ্রামে দুই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের বাস ছিল।সাধক কবি ক মললাকান্ত এই গ্রামে মামার বাড়িতেই থাকতেন।বিশালাক্ষি ম ন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা ক রতেন।আর অগ্নি যুগের ব্রম্ভা,স্বাধীন্তা সংগ্রামী,ঋষী অরবিন্দের শহযোগী যতীন্দনাথের জন্ম এই গ্রামে,যিনি পরে সন্যাস নিয়ে স্বামীনিরালম্ব নাম নেন।
♣♣♣♣♣
শিড়রাই
         গ্রামটি খুবই প্রাচিন।প্রধান গ্রাম্য দেবতা শিব,সেই নাম থেকেই শিব্দে,শিড় রাই।বধ'মান জেলার বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী ফকির চন্দ্র রায় এই গ্রামে জন্মেছিলেন।
♣♣♣♣♣♣♣
বেতালবন
              বিখ্যাত"শনিবারের চিঠি"পত্রিকার সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের জন্ম এই গ্রামে।
♣♣♣♣
বাহির ঘন্যা
               বাইরের দিকের প্রদেশ।গ্রামের  হা জরা পাড়ার দুগা'মন্ডপে আছে তুলোট কাগজে খগের কলমে লেখা ২৫০_৩০০বছরের প্রাচীন পুথি,সব গুলি চৈতন্য জীবনী।
♣♣♣♣
পারাজ
            গ্রামটিতে আছে ব্বধ'মানের প্রথম বালিকা প্রাথমিক বিদ্যাল য়।চার আওলিয়ার মাজারে ওরস উপল ক্ষে মেলা বসে।
♣♣♣♣♣♣
কসবা
ক্ষেমানন্দের মনসামজ্ঞল কাব্যের প্রাচিন কসবা বা চম্পক ন গ র এই গ্রাম।আছে চান্দ স দাগ রের শিব মন্দির।বেহুলার বাসরঘর সাতালি পাহাড়।
♣♣♣♣♣♣♣
                          এইভাবে আমাদের প্রতি গ্রামে আছে নানা ঐতিহ্য,প রে আরো কিছু আলোচনা করা যাবে।
                           তথ্য সূত্র:
            ' গলসী কথা'_ফিরোজ আলি কাঞ্চন


Sunday, April 12, 2020

সুয়াতার পীর হজরত শাহ মাহমুদ বাহামানী


                                ফিরোজ আলী কাঞ্চন


              শ্রী চৈতন্য দেবের উদার মানবতাবাদী ধম'প্রচারের ফল স্বরুপ বাংলার মাটি হয়ে উঠেছিল এক মহা মিলনের পীঠস্থান।আবার অন্যদিক থেকে বিভিন্ন মুসলমান পীর,ফকির,দরবেশ,ওলি-আওলিয়া,আউল-বাউলের আবির্ভাব এই মিলনের পথে যেন সেতু রচনা করে।তখন অনেক হিন্দু সাধকের যেমন মুসলমান শিষ্য ছিল যেমন, শ্রী চৈতন্য দেবের শিষ্য যবন হরিদাস;তেমনি আবার অনেক মুসলমান পীর ফকিরের কাছে অনেক হিন্দুও দীক্ষ্যা নিয়েছিলেন।বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের এই মিল মহব্বত সবচেয়ে সুন্দর ভাবে প্রকাশ পেয়েছিল তুর্কি আক্রমনের পর।এ প্রসজ্ঞে বলতে হয় ' সত্যপীর ' এর কথা।সত্যপীর হলো হিন্দুদের সত্যনারায়ন  ও মুসলমানদের পীরের মিলিত রুপ। রাঢ়বজ্ঞের বিভিন্ন জেলার মুসলমানদের মধ্যে এখনো এই সত্যপীরের পালাগানের আসর বসে।আর হিন্দুরাও এই সত্যপীরকে সম্মান জানিয়ে সব ঠাকুরের বেলায় প্রসাদ  বললেও সত্যনারায়নের বেলায় সিন্নি বলে থাকে।সে যাই হোক বাংলার এই উদার মানসিকতা থেকেই এ সব পীর ফকিরদের বিভিন্ন অলৌকিক কেরামতির প্রভাবে ইনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ সব মহাত্মার ইহলোক ত্যাগের পরে  ইনাদের  কবর জেয়ারত(বিশেষ প্রার্থনা)  করা হয়।মাজারে সিন্নি দেওয়া হয় বাতাসা খইচুড়। চড়ানো হয় সালু কাপড়ের চাদর।প্রতিদন সাঁঝ দেওয়া হয় প্রদীপ বা মোমবাতী ও ধুপ জ্বেলে।বছরের বিশেষ  দিনে পবিত্র উরসের আয়োজন করা হয়_এদিন থানে দেওয়া ভক্তদের মানতে দেওয়া মুরগী, হাস,ছাগল,আলু,কুমড়ো প্রভৃতি সহযোগে খিচুড়ি রান্না করা হয়;সেদিন হিন্দু মুসলমানের এক সাথে পাতপেড়ে থেতে কোন বাধা থাকে না।উসরস উপলক্ষে মেলা  বসে,সে মেলায় ফকিরি গান,কবি গান,বাউল গান,সত্যপীরের গানের আসর বসে।আমাদের ব্র্ধমান জেলাতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন ব হু পীরের মাজার।তেমনই একজন বিখ্যাত পীর আউলিয়া হলেন হজরত বাহমান শাহ।
                    পুরো নাম হজরত শাহ মাহমুদ বাহামনী(রঃ)।আদি নিবাস বাহমান শহরে,তাই বলা হয় বাহমন শাহ।ইনি ছিলেন আরব উপদ্বীপের বিখ্যাত পীর হজরত শাহ জালালের অন্যতম শিষ্য।হজরত শাহ জালাল ইমন(ইয়েমন) দেশ থেকে শান্তি ও পবিত্রতার বাণী  প্রচারের উদ্দেশ্য  পদভ্রমনে বেড়িয়ে প্রথমে তিনি আরব থেকে ইরানে এসে পৌছালে অনেক ধম'প্রাণ সাধক তার সজ্ঞে যোগদেন,এদের মধ্যে ছিলেন আমাদের আলোচ্য বহমন শাহ,যিনি ইরানের সুখ্যাত নরপতি বাহমান-বিন-ইস্কান্দার এর বংশ বাহমনী বংশীয়।বহমান শাহ সাধনায় বাহমান শাহ সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে হজরত শাহ জালালের সজ্ঞে যোগদিয়ে ইরান থেকে আফগানিস্থান, কান্দাহার হয়ে হিন্দুস্থানে প্রবেশ করেন।দিল্লীর মসনদে তখন আলাউদ্দিন খলজি।
    বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে ঘটনাক্রমে বাহমান শাহ এসে হাজির হলেন গোপভূমে।এই গোপভূমের প্রাচীন জনপদ ভাল্কি অঞ্চলের সুয়াতা,জামতাড়া,প্রতাপপুর,অমরাগড় প্রভ্রতি অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ইসলামের আদর্শ কে প্রচার করতে লাগলেন।জনশ্রুতি সে সময় এই অঞ্চলে প্রচলিত ছিল ভয়ংকর নরবলি প্রথা।পালি করে প্রতি বাড়ি থেকে একজন করে পুরুষ মানুষ পাঠাতে হতো বলির জন্য।বাহমন শাহ এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন।এতে ভাল্কীরাজা মনিন্দ্র নারায়নের সজ্ঞে তার বিরোধ বাঁধে।দুপক্ষে তমুল যুদ্ধ হয়।রাজার বিশাল সৈন্যবাহিনীর কাছে বাহমন শাহ পরাজিত ও নিহিত হন।যেহেতু এই যুদ্ধ ছিল সাধারন মানুষের পক্ষনিয়ে সেহেতু এই যুদ্ধে বাহমন শাহের মৃত্যু হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই গভীর রেখাপাত করে।
               অনেকে বলেন গোপরাজাদের আরাধ্যদেবতা শিবাক্ষ্যা মন্দিরের নরবলি প্রথা বন্ধ করতে গিয়ে বাহমান শাহের সজ্ঞে রাজার দ্বব্দ্ব বেধেছিল, এবং এই সময় বাহমান শাহের মৃত্যুর স ংবাদ পেয়ে গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ সৈন্য পাঠেয়ে ছিলেন ও পীরের মাজার বাধিয়ে দিয়েছিলেন ;সে হিসেবে তিনি হোসেন শাহের সমসাময়িক,(১৪৯৩-১৫১৯)।বাহমান শাহের মাজারে তিনটি শিলালিপি দেখলাম।তথ্য ঘেঁটে জানা গেল এগুলি আরবী তুঘরা লিপিতে লেখা।এর পাঠোদ্ধারও ক রা হয়েছে।এগুলির মধ্যে পাওয়া যায় ' পরম ন্যায় পরায়ন ও উদার সুলতান পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ধর্মপরায়ণ সুলতান আবুল মুজাফফর হুসাইন শাহ'র নাম।এছাড়াও কাজী মিনাজী বলে এক জনের নাম পাওয়া যায়,এবংউল্লেখিত সাল হলো হিজরী ৯০২(১৪৯৬-৯৭খ্রিষ্টাব্দ)। কিএই কাজী মিনাজী ছিলেন সমম্ভবত ভাল্কীর কাজীপাড়ার বাসীন্দা,ইনিছিলেন বাহমান পীরের ভক্ত;এবং হুসেইন শাহের ককর্মচারী, হয়তো ইনারই অনুরোধে সুলতান পীরের মাজার বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন।
                    বাহমান।শাহ বা মোম্মান শাহের মাজারে বিশেষ বৈশিষ্ট আজো প্রত্যেকদিন সন্ধযায় ডঙ্কা বাজানো হয়।মাজারের প্রবেশ মুখের পাশেই আছে পীরপুকুর,এই পুকুরে স্নান করলে ভক্তের কামনা পূর্ণ হবে বলে বিশ্বাস।প্রতি বছর ১লা মাঘ এই পীরের বাৎসরীক উড়স উপলক্ষ্যে মাজার সংলগ্ন মাঠে এক বিরাট মেলা বসে,এটাকে অখণ্ড বর্ধমান জেলার সবচেয়ে বড়ো পীরের মাজার বলা যেতে পারে।বাহমান সাহেবের কেরামতি বা অলৌকিক কাহিনী সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে,পীরের মাজারে আগে গভীর রাত্রে ভাল্কির জজ্ঞল থেকে বাঘেরা সালাম জানাতে আসতো।এছারা শোনাযায় এক ধনী ব্যক্তি নতুন কেনা বন্দুকে এখানের শহীদস্থানের গাছে সর্বদা থাকা বকেদের মারলে মাজার কমিটির শজ্ঞে ঝামেলা বাধে,বিচারে ধনীব্যক্তির বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ সাক্ষযীদিতে সম্মতি না হলেও ঝাঁকে ঝাঁকে বকের দল বিচারসভায় উড়েগিয়ে হাজির হয়েছিল।হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের কাছে আজো খুবই জনপ্রিয় আউসগ্রাম থানার ভাল্কির কাছে সুয়াতাগ্রামের এই হজরত শাহ মাহমুদ মাহামানী সাহেবের মাজার।
----+++++++++++++++++++++++++++



 ৷     ৷৷   প্রাচীন বটবৃক্ষ
              পীর পুকুর
                 পীরের ব্যবহৃত দামামা
 ৷   ৷      ৷ হুসেনশাহ লিপি


Friday, April 10, 2020


ঐতিহময় গ্রাম গলসির চান্না

                        ফিরোজ আলী কাঞ্চন


রাঢ়বঙ্গের মধ্যমণি বর্ধমান জেলা এক প্রাচীন জনপদ।বর্ধমান জেলার বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা গ্রামগুলি ইতিহাস,সংস্কৃতি ও লোকায়ত ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ;তেমনই এক সমৃদ্ধময় গ্রাম পূর্ব বর্ধমানের গলসি অঞ্চলের চান্না।বহুপূর্বে  চান্নাগ্রামে যাবার পথে ছিল গভীর শালবনের জঙ্গল,আর সেই জঙ্গলে ছিল ঠ্যাঙাড়েদের রাজত্ব,লোকমুখে তাই প্রচলিত ছিল-' যদি যাও চান্না / ঘরে উঠবে কান্না।'
কুলগড়িয়া বাজার থেকে বা খানা জংশন স্টেশন থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার উত্তর দিকে খড়িনদীর তীরে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে শান্ত নিরিবিলি এই গ্রামটির মাটি দুই বিখ্যাত ব্যক্ত্বিত্বকে লালন-পালন করেছে,এঁরা হলেন মধ্যযুগের শাক্তপদাবলী সাহিত্যের বিখ্যাত কবি কমলাকান্ত ভট্টাচার্য ও অগ্নিযুগের ব্রম্ভা অভিধায় অভিহিত বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বা স্বামী নিরালম্ব।


   সাধক কমলাকান্ত


           যদিও আনুমানিক ১১১৭ সালে(ইং-১৭৭০খ্রিঃ)অম্বিকা কালনায় বাংলা শাক্তপদাবলির অন্যতম কবি সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য্য জন্ম গ্রহন করেন,কিন্তু অকালে পিতা মহেশ্বর ভট্টাচার্য্যের মৃত্যু হওয়ায় মাতা মহামায়াদেবী তাঁর দুই সন্তান কমললাকান্ত ও শ্যামকান্তকে নিয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি গলসীর চান্না গ্রামে।মামা নারায়ণ ভট্টাচার্য্য এঁদের বেশকিছু জমি গবাদি পশু প্রদান করেন।কবির পৈতে দিয়েছিলেন এই মামা নারায়ণ ভট্টাচার্য্য।কমলাকান্তের ' সাধকরঞ্জন ' গ্রন্থে পাওয়া যায়--

          ' অতপর কহিশুন আত্মনিবেদন।

           ব্রাম্ভণ কূলে উপনীত স্বামী নারায়ণ।'

              এই সময়য় চান্না গ্রাম ছিল শিক্ষা দীক্ষ্যার পীঠস্থান।কমলাকান্ত গ্রামের টোলে ব্যাকরণ শাস্ত্র অধ্যায়ন করেনে এবং পরে তিনি নিজে একটি টোল প্রতিষ্ঠা করে অধ্যাপনা করতে থাকেন।কমলাকান্ত অবসর সময়ে গ্রামের মেঠো পথে উদাস হয়ে ঘুরে বেড়াতেন।পুত্রের সংসারের প্রতি উদাসীনতা দেখে মাতা মহামায়াদেবী কমলাকান্তের বিবাহ দিয়েদেন বর্ধমানের লাকুড্ডিতে ভট্টাচার্য্য পরিবারে।

                বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েও সংসারী হতে পারলেন না কমলাকান্ত।সর্বদা গ্রামের বিশালাক্ষী মন্দিরে উদাস মনে বসে থেকে ' মা-মা ' বলে ডাকতেন।মন্দির সংলগ্ন পুকুরপাড়ে বায়ুকোণে এক পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে সাধনায় মগ্ন থাকতেন।সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে কমলাকান্তের খ্যাতি বহুদূর ছড়িয়ে পড়ল।এদিকে দারিদ্র যেন নিত্য সজ্ঞী,সংসারে অভাব যেন দিনের দিন বেড়েই চলল।সাধকের এক অবস্থাসম্পন্ন ধনী ভক্ত চান্নায় এসে গুরুর আর্থিক দুরাবস্থা দেখে আবার কালনায় নিয়ে যান।সেখানেও কবি এক পঞ্চমুণ্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে সাধনা শুরু করেন।কিন্তু এখানের অবস্থান সুখকর হয় না,কিছুদিনের মধ্যেই মাতা মহায়াদেবীর মৃত্যু ঘটে।কবি ফিরে আসেন চান্নায়,এখানে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই আবার এক দুর্ঘটনা,বিপত্নীক হন কবি।

         কমলাকান্ত দ্বিতীয় বিবাহ করেন কাঞ্চন নগরে,এই স্ত্রীর গর্ভে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।দারিদ্র তবুও যেন পিছু ছাড়ে না,সবদিন চালও জুটটো না,এমনই এক অভাবের দিনে এক শ্যাম বর্ণা মহিলা সাধকের বাড়িতে হাজির,সজ্ঞে দুই লম্বা চওড়া লোকের মাথায় ঝুড়ি ভর্তি চাল,আলু তরিতরকারী।কমলাকান্তর চান্না অভস্থান কালে প্রচলিত আছে এমনি সব কাহিনী।আরো প্রচলিতলিত আছে যে বিশালাক্ষী দেবীর মন্দিরের পুজোয় শোল ও মাগুর মাছ লাগবেই,কিন্তু কোথাও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না,এমন সময় শুনলেন পাশের পুকুরে জলের থেকে কারো উঠে আসার শব্দ,দেখলেন এল কালো কুচকুচে মেয়ে মাছ নিয়ে হাজির,হাসতে হাসতে বললো, ' আমি বাগদি পাড়ার মেয়ে গো,শুনলাম পুজোর জন্য তুমি কোথাও মাছ পাচ্ছো না,তাই দিতে এলাম,'।সাধক বললো,' কিন্তু আমার কাছে যে এখন পয়সা যে নেই মা ',বাগদি মেয়ে বললো,' সে তুমি কাল পাড়ায় দিয়ে এসো।'পরের দিন সারা বাগদি পাড়া তন্ন তন্ন করেও সেই কন্যার দেখা পাওয়া যায়নি।

           সাধক কমলাকান্তের মহিমার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকলো দিকে দিকে।দেওয়ান রঘুনাথ রায়ের পরামর্শে বর্ধমানের মহারাজ তেজচাঁদ তাঁর রাজসভার সভাকবি রুপে নিযুক্ত করেন সাধক কবি কমলাকান্তকে।মহারাজ কমলাকান্তকে কোলাহাটে একটা মায়ের মন্দির নির্মান করেদেন এবং বাৎসরিক বৃত্তির বন্দোবস্ত করেদেন।সাধকের জীবনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের।

--------------------------------
     বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়

জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দিকে দলে প্রাধান্য ছিল মডারেট বা নরমপন্থীদের,এঁরা ব্রিটিশ সরকারে সজ্ঞে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পরাধীন দেশবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পুরন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু কার্জনের বজ্ঞভজ্ঞ বিরোধী আন্দোলনের সময় নরম পন্থীদের সজ্ঞে চরম পন্থীদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এই দুটি ধারারই ব্যপক প্রভাব বাংলার অনান্য স্থানের সজ্ঞে সজ্ঞে বর্ধমান জেলাতেও পড়েছিল,অনেক তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ স্বাধীনের মহান ব্রতে।
                    বর্ধমান জেলাতে চরমপন্থী আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হলেন যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়।১৮৭৭খিষ্টাব্দে ১৯নভেম্বর  উনিশ শতকের বৈপ্লবীক সংগ্রামের অগ্নিময় প্রতিমূর্তি এই যতীন্দ্রনাথবন্দোপাধ্যায়ের জন্ম গলসীর চান্না গ্রামে।এই চান্না গ্রামে আবার বাংলা শাক্তপদাবলীর বিখ্যাত পদকর্তা সাধক কবি কমলাকান্তের গ্রাম,যদিও কবির জন্ম অম্বিকা কালনায়,কিন্তু অকালে পিতৃবিয়োগের জন্য তিনি মায়ের সজ্ঞে চলে আসেন চান্নায় ;এখানের বিশালাক্ষী মন্দিরে পঞ্চমুন্ডি আসনে সাধক কবি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।
               সে যাই হোক,যতীন্দ্রনাথ ছিলেন বলিষ্ঠ সুস্বাস্থের অধীকারী,গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পাঠ  সমাপ্ত করে তিনি বর্ধমানের রাজ কলেজে ভত্তি হলেন।চাত্রাবস্থাথেকেই যতীন্দ্রনাথের মনে স্বদেশ প্রেম আর জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটতে থাকে।তিনি স্থর করেন সামরিক বিভাগে যোগদিয়ে যুদ্ধের রণকৌশল আয়ত্ব করে তা দেশহিত ব্রতে প্র য়োগ করা।কিন্তু পিতা কালিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের ইচ্ছে পুত্র কোন সরকারী উচ্চপদে চাকরী করুক।যতীন্দ্রনাথ রাজকলেজ থেকে এফ. এ. উত্তীর্ণ হয়ে বরোদায় নিজের নাম গোপন রেখে ছদ্মনামে অশ্বারোহী বিভাগে কাজে যোগদেন ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে।

বররোদার রাজ কলেজের অধ্যক্ষ্য তখন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ।সেখানে দুজনের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।যতীন্দ্রনাথ অরবিন্দ ঘোষের কাছে বিপ্লব মন্ত্রে দীক্ষিত হন।তরুন যুবক যতীন্দ্রনাথ অরবিন্দর কাছে অনুরোধ জানান দেশের কাজে নিজেকে নিবেদিত করার সুযোগ করে দেবার জন্য।অরবিন্দ তাঁর সসহোদর বারীন্দ্র কুমার ঘোষের সজ্ঞে যতীন্দ্র বন্দোপাধ্যায়কে

কলকাতায় পাঠান বভিন্ন গুপ্ত সমিতি ও বপ্লবী দলগুলির সজ্ঞে গোপনে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য।
        অরবিন্দ ঘোষের নির্দেশে ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে যতীন্দ্রনাথ কলকাতায় ফিরেএসে চার নম্বর শ্যামাপুকুর লেনে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষনের বাড়িতে অবস্থান করে অনুশীলন সমিতির সজ্ঞে নিজেদেরকে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্তকরে দেন।বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে সজ্ঞেনিয়ে কানাইলাল দত্ত,সত্যেন বসু,উল্লাসকর দত্তদের সাহায্যে মানিকতলার মুরারিপুকুর লেনে এক বোমাতৈরীর কারখানা গড়ে তুলেন,এই কারখানাকেই কেন্দ্রকরেই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিখ্যাত মানিকতলা বোমামামলার কাহিনী।

         বজ্ঞভজ্ঞ আন্দোলনের পথনির্দেশিকা প্রদানের জন্য যতীন্দ্রনাথ ও বারীন্দ্রকুমার কল কাতায় আসার জন্য অরবিন্দ ঘোষকে আহ্বান জানান।অরবিন্দ বরোদার কলেজের সাড়ে সাতশত টাকার বেতনের চাকরী ছেড়েদিয়ে কলকাতায় এসে মাত্র পঁচাত্তর টাকার বেতনে জাতীয় কলেজে যোগদেন।যতীন্দ্রনাথ তাঁর তৈরীকরে দেওয়া বাংলা মায়ের একদল দামাল ছেলেকে অরবিন্দের দায়ীত্বে অর্পণ করে গুরু অরবিন্দের মন্ত্র শিষ্য হয়ে বৈপ্লবিক মতাদর্শকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

          এই সময়ে পাঞ্জাবে করবৃদ্ধি ও চন্দ্রভাগা খালের জল কর আইনকে কেন্দ্রকরে বিপ্লববাদী শক্তি বৃদ্ধি পেতেথাকে।যতীন্দ্রনাথ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাঞ্জাবে পৌঁছে সেখানের বিখ্যাত বাবা গুরুদিৎ সিং সাহেবের সজ্ঞে সাক্ষাৎ করে বিপ্লবী দের একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত করেন,যে শাখার অন্যতম সদস্য ছিলেন ভগৎ সিংয়ের পিতা কিশন শিং;এক কথায় যতীন্দ্রনাথ পাঞ্জাবে যেন ' গদর পার্টি 'র বীজ রোপন করে দিয়ে আস লেন।

        এতো কিছুর মধ্যেও যতীন্দ্রনাথের মনের গোপন কুঠিরে মাঝে মধ্যে যেন উদয় হতো এক একেবারে বিপরীত এক জীবনাদর্শন,তিনি যেন এই তীব্র বৈপ্লবিক জীবনের বাইরে আধ্যাত্মিক ভাবনায় মাঝেমধ্যে গভীর ভাবনায় তলিয়ে যেতে লাগলেন।আলমোরাতে অবস্থান কালে আধ্যাত্মিক সাধক শ্রীমৎ সোহহং স্বামীর নৈকট্য যেন যতীন্দ্রনাথকে পুরোপুরি বদলে দেয়,  সন্যাস গ্রহন করে নামনেন স্বামী নীরালম্ব।

               স্বগ্রাম চান্নায় ফিরে এসে স্বামী নীরাল ম্ব  খড়ি  নদীর তীরে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করলেন একটি আশ্রম।কিন্তু এই আশ্রমটি ক্রমে হয়ে উঠল কলকাতা থেকে বহুদূরে ব্রিটিশ পুলিশের চোখ এড়িয়ে বিপ্লবীদের আত্মগোপন করে থাকার বাংলার এক শ্রেষ্ঠ আশ্রয়স্থান।রাসবিহারী বসু,ভগৎ সিং য়ের পিতা কিশন সিং সহ অসংখ্য বিপ্লবীর পদ ধূলি ধন্য এই চান্নার স্বামীনীরালম্বের আশ্রম।

          শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় ১৯২৭খ্রিষ্টাব্দে স্বামী নীরালম্বকে তাঁর অন্যতম শিষ্য শ্রী বিজয় বসন্ত বসাক বরাহ নগরে নিজের উদ্যান বাটিতে চিকিৎসার জন্য নিয়েযান,এই সময় ভগৎ সিং ক লকাতায় ছিলেন,তিনি এসে স্বামী নীরালম্বের আর্শিবাদ গ্রহন করেন।অবশেষে ১৯৩০খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিযুগের ব্রম্ভা নামে বাংলার চরমপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কাছে সম্মানীয় স্বামী নীরালম্ব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

            এ হেন ঐতিহ্যময় চান্না গ্রামের স্বামী নীরালম্বের আশ্রম আজ প্রচারের অন্তরালে।নেই কোন নজরদারি বা রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা।এক বৃদ্ধ সন্যাসী দেখাশুনা করতেন তিনিও গত হ য়েছেন।এ প্রতিবেদককে তিনি প্রায়ই আক্ষেপ ক রে বলতেন,এই আশ্রমটিকে আর হয়তো রক্ষা ক রা যাবে না,আমি মারা গেলে কে আর দেখবে।" আশ্রম সংলগ্ন আদিবাসী  পাড়ার বাসীন্দারাই এখন মূলত তাদের ক্ষুদ্র সাধ্যমতো আগলে রেখেছে এই দেশপ্রেমের ঐতিহ্যময় স্থানটিকে।মাঝে মধ্যে বাৎসরিক অনুষ্ঠান কিছু উৎসাহী ব্যক্তি দ্বারা আয়োজিত হলেও সরকারী ভাবে এ আশ্রমটি অধিগ্রহন না করলে অচিরেই হয়তো হারিয়ে  যাবে।

   দুঃখের বিষয় এহেন চান্নাগ্রামের ঐতিহ্য আজ প্রচারের অন্তরালে।বহুবছর আগে কুলগড়িয়া বাজারে হাইওয়ের ধারে  সাধক কমলাকান্ত বা যতীন্দ্রনাথ বন্দোপাধায়ের নামাঙ্কিত চান্নাগ্রাম যাবার পথনিদর্শক ফলক দেখাযেত,কিন্তু এখন তাও নেই।অথচ ঐতিহ্যের গুরুত্বে চান্নাগ্রামে কমলাকান্তের বসতভিটে ও বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ বা স্বামীনীরালম্বের আশ্রম হেরিটেজ হিসেবে ঘোষানার দাবিরাখে।
-------------------------------------
 চান্না গ্রামে কমলাকান্তের বসত ভিটায় সাধকের মূর্তি
     ৷ বিশালাক্ষী মন্দির
৷ ৷৷ ৷  এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা            করতেন
           স্বামী নীরালম্বের আশ্রম